Posts

Showing posts with the label পর্ব-৫

“মহানগর” - ধীমান ব্রহ্মচারী | পর্ব ৯

Image
  এবার থেকে নীলাদ্রি একটা ভরসা পেল। আর যাই হোক নিজের শহর ছেড়ে এই যে বড় শহরে এসে এখানে থেকে পড়াশোনা করার যে প্রচেষ্টা, সেটা জানো আরো একধাপ এগিয়ে নিয়ে যাবার একটা রাস্তা খুলে গেল। সত্যিই তো এত বড় শহরে এই কদিনের বন্ধুর তালিকায় অভিষেক যেন কোথাও তার কাছে একটা বড় সম্ভাবনা এবং একই সাথে বিরাট একটা আস্থা যেন তৈরি হয়ে উঠল ওর নিজের মনে। যখনই যেভাবেই হোক এবার তাহলে নিজের মতো করে ওকে সবটা বলা যাবে। হয়তো এই কথাগুলোই এতদিন ধরে নীলাদ্রি নিজের মনে চেপে পুষে রেখেছে। এদিকে কলেজের পড়াশোনার চাপ আস্তে আস্তে বাড়তে থাকলো। যেহেতু বাংলায় অনার্স নিয়ে পড়তে হচ্ছে তাকে, সেহেতু পড়াশোনার পাশাপাশি আরো নানা ধরনের পড়াশোনা তাকে অবশ্যই পড়তে হবে -- প্রায়শই এই ধরনের কথাবার্তা ও কলেজের প্রফেসরদের থেকে শোনে। আসলে অনার্স পড়তে আসা মানে অনেকটা বেশি পড়াশোনা, অনেকটা বেশি জানা, বিষয়ের প্রতি গভীর জ্ঞান আরোহন করা এসব কিছুই অনার্সের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। আর তাই কোনোভাবেই নীলাদ্রি এই অনার্স কি তাচ্ছিল্য করতে পারে না। তাই দিন হোক বা রাত প্রতিনিয়তই পড়াশোনার মধ্যে থাকতে থাকতে কেমন যেন পড়াশোনাটাকে তার অনেকটা ভালো ল...

“মহানগর” - ধীমান ব্রহ্মচারী | পর্ব ৮

Image
  পরের দিন খুব সকালেই নীলাদ্রি ঘুম থেকে উঠে পড়ল। মাথার মধ্যে তখন একটাই চিন্তা আর দুশ্চিন্তা পাক খাচ্ছে থেকে থেকে। যদি পড়াশোনাকে ঠিকভাবে চালিয়ে নিয়ে যেতে হয় তাহলে তো পড়াশোনার পাশাপাশি নানান ধরনের যোগাযোগ ও পড়াশোনা কেন্দ্রিক চর্চা তাকে চালিয়ে যেতেই হবে। আর তার জন্য শুধুমাত্র এই শহর থেকে কলকাতা যাতায়াত করে সম্ভব হয়ে উঠবে না। স্বপ্ন দেখা ভালো, কিন্তু স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে জীবনের প্রতিটি সময় থেকে মুহূর্তকে যেভাবে একটু একটু করে তৈরি করতে হয়, আজকের সকাল হওয়া দিন থেকে যেন ঠিক সেই রকমই তৈরির প্রথম পদক্ষেপ সুনিশ্চিত হল নীলাদির জীবনে। কিন্তু এই তৈরি করার সঙ্গে জড়িয়ে থাকা মানুষ, সমাজ এবং সময় সবইতো তার হাতের বাইরে। কাকে নিয়ে এগিয়ে যাবে, আর কাকে না নিয়ে ফেলে রেখে যাবে তার শৈশবের স্মৃতি থেকে আজকের সময়। এই ধরনের নানা ভাবনা-চিন্তা মাথার মধ্যে উদ্ভট হয়ে সবকিছুকে যেন আচমকায় ভুলিয়ে দিল। সামান্য লাইব্রেরির কাজ করে ফিরে এসে বড় মামার কাছে তাকে যে কটু কথা শুনতে হয়েছে, সে কথাই যেন তাকে বারবার বিদ্ধ করছে। কিন্তু উপায়ও যে খুব একটা বেশি রয়েছে এমনটা নয়। বাড়ির আর্থিক অসংগতির একট...

“মহানগর” - ধীমান ব্রহ্মচারী | পর্ব ৭

Image
  কোনো রকমে নীলাদ্রির লাইব্রেরির টাকাটা জোগাড় হলো। এবার আর যাইহোক কিছুটা স্বস্তি। কলেজের পর এবার লাইব্রেরিতে কিছুটা কাজ সেরে বাড়ি ফিরতে পারবে। একটা যেন ম্যাচ জিতে গেল। টান টান সে খেলা। শেষমেষ জিততে পারবে কিনা, এই সংশয় আর দ্বন্দ্ব ছিল। এভাবে কোনোদিন টাকার জন্য এতোটা লড়াই করতে হয়নি। এই ছোট্ট ঘটনা যেন ওকে জীবনের অনেকটা পথ চিনিয়ে দিল। পরের দিন কলেজে আবার তিন বন্ধু এক জাগায় হয়েছে। কথা বার্তা চলছে, যে সন্ধ্যায় যাবে লাইব্রেরিতে মেম্বারশিপ নিতে। ওইদিন কলেজে বাংলা বিভাগের একজন প্রফেসর উপন্যাস পড়াতে এলেন। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এর চোখের বালি। নীলাদ্রির প্রথম উপন্যাস পড়া। তাও আবার চোখের বালি। কতটুকুই বা জ্ঞান, অভিজ্ঞতা রয়েছে যে চোখের বালি পড়ে ফেলতে পারবে! ক্লাসে ওর প্রফেসর জিজ্ঞেস করল, কী বই পড়তে ভালো লাগে?  - ম্যাম মোটামুটি সব।  - গান শোনা হয়? - হ্যা।  - কোন লেখক প্রিয়? - একটু আমতা আমতা করে বলল, ম্যাম রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। - কী কী পড়েছ? ব্যাস এবার আর তেমন কোনো উত্তর নেই। আসলে নীলাদ্রি কোনদিনও বাংলা সেভাবে পড়েনি। ওই বাবার কাছে বার বার শুনতো রবীন্দ্রনাথ, বঙ্কিম, শরৎচন্...

“মহানগর” - ধীমান ব্রহ্মচারী | পর্ব ৬

Image
  সেদিন বিকেলে এগলি সেগলি দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে এসে পৌঁছল কলেজ স্ট্রিট। ছোটবেলা থেকেই নীলাদ্রি এই কলেজ স্ট্রিট সম্পর্কে জেনে এসেছে। কারণ ছোটবেলাতে ওর মামার বাড়ি এই অঞ্চলেই ছিল। তাই যতবার নিজের বাড়ি থেকে মামার বাড়িতে বেড়াতে আসতো তখন মাঝে মাঝেই এই কলেজ স্ট্রিট চত্বরে বেড়াতে আসতো বাবার হাত ধরে। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ স্কোয়ার, কফি হাউজ, বসন্ত কেবিন এই সবগুলোই কেমন যেন চোখের সামনে পুরনো সেই ব্ল্যাক এন্ড হোয়াইট এর মত ভেসে উঠলো। আসার সময় দুই বন্ধুকেই বলেছে আজকে তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরে যাব। তাই একটু আগেই বেরিয়ে যাব।  কিন্তু তাড়াতাড়ি বাড়ি না ফিরে সোজা চলে এলো এই কলেজ স্ট্রিট পাড়ায়। সেই পুরনো বইয়ের দোকান, শত শত মানুষের আনাগোনা। বইপত্র ঘাটাঘাঁটি। বইপত্র কিছু কেনাকাটি, দুপুর থেকে বিকেল পর্যন্ত পড়ুয়া থেকে কত শিক্ষক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক প্রফেসরদের চলে এই বইপাড়ায় আনাগোনা। একটা চায়ের দোকানে নীলাদ্রি বসলো। এরপর ভাবনা চিন্তা করতে লাগলো যদি তাকে এই কলেজের পড়াশোনা এগিয়ে নিয়ে যেতে হয় তাহলে নিজেকে কিছুটা উপার্জন করতে হবে। কেননা বাড়ি থেকে কিন্তু টাকা আসার অনিশ্চয়তা একট...

“মহানগর” - ধীমান ব্রহ্মচারী | পর্ব ৫

Image
আসলে তিন বন্ধুর মধ্যে অভিষেক অনেকটা হয়ে উঠেছিল কাছের। যেহেতু অভিষেকের বাড়িতেই বেশিরভাগ সময় নীলাদ্রি থাকত। কলকাতায় কলেজ। আবার কলেজ শেষে ট্রেনে করে যাওয়া অনেক সময় খুব সময় সাপেক্ষ হয়ে যেত,তাই মানিকতলা রোডের বাড়িতেই ছিল ওর থাকা। এই থাকতে থাকতে কত কথা,আলোচনা বা নিজেদের মতো করেই সময় কাটাত দুজনে। প্রকৃত বন্ধু পাওয়াটা সত্যিই অনেক ভাগ্যের- এমনই মনে করত, মাঝে মাঝে নীলাদ্রি। কেননা গ্রাম থেকে আসা কোন ছেলের পক্ষে কলকাতা নামক এই বিরাট শহরের ছায়ায় সুযোগ থাকে কম। আলিঙ্গন অপেক্ষা ঠকানোর কাজ থাকে বেশি। সেই সময়ে দাঁড়িয়ে ওর এমনটা হলো না। একটা সময় থাকা খাওয়া সবই এই মানিকতলার বাড়িতে হতে থাকল। কলেজে তিন জনে সব সময়ের জন্য এক হয়ে থাকত। কলেজের সময় লাঞ্চ টাইমে ওরা তিন জনে প্রায় চলে যেত লেবুতলা পার্কে।যার অন্য নাম সন্তোষ মিত্র স্কোয়ার। সেদিনের সব স্মৃতি মনেপড়ে যায় ওর আস্তে আস্তে। কলেজের পড়ার চাপ বাড়তেই থাকল। বইপত্র,যাতায়াত। এ লাইব্রেরি থেকে ও লাইব্রেরি। আবার সেখান থেকে অন্য লাইব্রেরি এভাবেই বাড়তে থাকল পড়াশোনার ব্যস্ততা ও চাপ। কিন্তু এই চাপ জোগানোর জন্য দরকার টাকা। মাসে মাসে ওর বাড়ি থেকে যে টাকা আসত, তাতে তেমন ...