Posts

Showing posts with the label প্রবন্ধ

প্রচ্ছদ আখ্যান

Image
  কাঁসাই নদীর থেকে সামান্য দূরেই আমাদের ছোট গ্রাম। মুকুটমণিপুর থেকেও খুব বেশি দূরে ছিল না আমার ছোটবেলার সেই বিদ্যুৎবিহীন গ্রাম। আলো-ঝাঁঝালো, শব্দে-জব্দ কলকাতার থেকে আমরা পালিয়ে বাঁচতাম স্কুলের ছুটি পড়লেই। “এখন তো জলই নেই, আগে কতবার বন্যা হয়েছে। আমাদের আটচালা অবধি জল থইথই করত। কত মাছ চারদিকে! মাছ ধরার ওটাই তো সময়।” জাল বুনতে বুনতে বলত দাদু। “এখন হাঁটু অবধিও জল ওঠে না। মাছটাছ আর নেই। ওই দহগুলোতেই এখন মাছ ধরে সবাই। কিন্তু কোথায় মাছ!”  বন্যার বিভীষিকা সম্পর্কে বিন্দুমাত্র জ্ঞান না থাকা শিশুমন বন্যার জন্য আকুল হয়ে উঠত। আহা, যদি আবার বন্যা হত, মাছ ধরতে ছুটতাম দাদুর সঙ্গে! যার জন্য কাঁসাইয়ে এখন জল নেই, সেই মুকুটমণিপুরের বাঁধটি হয়ে উঠত চক্ষুশূল।  দাদু জাল নিয়ে চলত ছানাতুপার দিকে। পিছনে আমি। উৎসাহে, আনন্দে আত্মহারা।  ছানাতুপা জায়গাটা ছিল গ্রামের বাইরে, হাঁটা পথ, মিনিট দশেকের বা আরেকটু বেশি। সেই যুগে কারোর হাতেই ঘড়ি নেই। ঘড়ি পরার চলও ছিল না। গ্রামের সময় চলত প্রকৃতির নির্দেশে। তাই দশ মিনিট না আধ ঘণ্টা, তা আজ আর মনে পড়ে না। তাছাড়া সময় কেটে যেত দাদুর নানা গল্পে। সে রূপকথাই হোক বা লোকগাথা, বা শুধুই

সিনেমা-বিষয়ক নিবন্ধ -- জয়দীপ চট্টোপাধ্যায়

Image
“The masses never revolt of their own accord, and they never revolt merely because they are oppressed. Indeed, so long as they are not permitted to have standards of comparison, they never even become aware that they are oppressed.” ― George Orwell, 1984 প রিচালক কেন লোচ-এর ২০১৬তে মুক্তিপ্রাপ্ত সিনেমা 'I, Daniel Blake ' দেখতে দেখতে ভীষণরকম রিলেটেবল লাগে সব কিছু। আমরা সবাই, কারো একটা বেঁধে দেওয়া নিয়মে সব কিছু করে যাচ্ছি। 'অসুবিধে হচ্ছে' থেকে ক্রমে 'এই ব্যবস্থা ন্যায়সংগত নয়' অবধি পরিস্থিতি চলে গেলেও, কিছু পালটাচ্ছে না নিয়মে। বেশিরভাগ মানুষ, যাদের অসুবিধে হচ্ছে, তারাও এমন ভাব করছে– যেন সব ঠিকই আছে, এভাবেই চলা উচিৎ রাষ্ট্রযন্ত্রীয় পরিকাঠামোতে। অশীতিপর বৃদ্ধা লাইনে দাঁড়িয়ে নিজের জীবিত থাকার প্রমাণ দিয়ে আসবেন– এটা স্বাভাবিক। এবং 'এইভাবে একজনকে বেঁচে থাকার প্রমাণ দিতে হবে?' প্রশ্ন উঠলে লাইনে দাঁড়িয়ে থাকাই আর এক বৃদ্ধ বিরক্তিপ্রকাশ করে বলছেন -- 'তাহলে কীভাবে করবে?' একজন বেয়ারা প্রশ্ন করলে এবং তা কর্তাদের কানে পৌঁছলে কর্তারা সেই নিয়ে আধঘন্টা কাটাবেন, অন্য

প্রবন্ধ : সুরজিৎ বেরা

Image
  জটার দেউল : প্রসঙ্গে সোনাটিকরি গ্রাম ' রোমিও অ্যান্ড জুলিয়েট' নাটকের একটি সংলাপ হল - 'হোয়াটস ইন আ নেইম।' যার বাংলা ভাষান্তর, 'নামে কী আসে যায়।' বাংলার স্থাননাম নিয়ে বিষয়টি ভাবতে গেলে দেখতে পাই, নামে সত্যিই আসে যায়। নামের ভিতরেই লুকিয়ে স্থানের বিশেষত্ব। সেই স্থানকে চিনতে গেলে, জানতে গেলে নামের বিশেষত্বের প্রকৃতি মানসিক দায় হিসেবে যে বিবেচিত হয় তা অস্বীকার করার জায়গা নেই। বাংলার স্থাননাম লোকসংস্কৃতির বৈচিত্র্যময় বিষয়। অক্ষর থেকে সংখ্যা, ব্যক্তিনাম, বৃক্ষ, বিভিন্ন প্রাকৃতিক উপাদান প্রভৃতি স্থাননামকে প্রভাবিত করেছে। বিশেষকরে লোককথা সথাননামের এক মূল্যবান উপকরণ। কোনো ভূখন্ডের প্রাকৃতিক, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক, প্রশাসনিক, স্থানভিত্তিক বিবরণকে অনেকাংশে লিপিবদ্ধ করে লোককথা। তার আঙ্গিকেই রচিত 'সোনাটিকরি' নামকরণের ইতিহাস। জটার দেউল ছিল দেবত্ব ধন-ঐশ্বর্যে পরিপূর্ণ। তার যথার্থ সত্য উদাহরণও পরিদর্শিত (১৯২৮ সালে মন্দিরের পাশে মাটি খোঁড়ার সময় এক কলসভর্তি প্রাচীন মুদ্রা পাওয়া যায়)। এই দেবত্ব ধন-ঐশ্বর্যের লোভে দক্ষিণ ভারতের রাজেন্দ্র চোল, রাঢ় বাংলার লক্ষ

তৃতীয়—মাস-সংক্রান্ত

Image
এতেল আদনান ১৯২৫ সালে লেবাননের বৈরুত শহরের জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর মায়ের স্মুর্ণার একজন গ্রিক অর্থডক্স এবং তাঁর পিতা অটোমান সিরিয়ার দামেস্কে জন্মগ্রহণকারী একজন মুসলিম-তুর্কি ছিলেন। তাঁর পিতা  ধনী পরিবার থেকে এসেছিলেন; তিনি সামরিক একাডেমিতে একজন শীর্ষ কর্মকর্তা ও মোস্তফা কামাল আতাতুর্কের প্রাক্তন সহপাঠী ছিলেন। এতেলের মাকে বিয়ে করার আগে, তাঁর পিতা তিন শিশুর পিতা ছিলেন। বিপরীতে, এতেলের মা চরম দারিদ্রের সাথে বেড়ে ওঠেন; তাঁর বাবা-মা প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় স্মুর্ণায় মিলিত হয়, যখন তাঁর বাবা স্মুর্ণা গভর্নর হিসেবে কর্মরত ছিলেন। পরে অটোমান সাম্রাজ্য ভেঙে যায় এবং স্মুর্ণা দখলের সময় আগুনে পুড়ে যায়, আদনানের এতেলের বাবা-মা বৈরুতে চলে যান। যদিও তিনি প্রাথমিকভাবে আরবি ভাষী সমাজে গ্রীক ও তুর্কি ভাষায় কথা বলে বড় হয়েছিলেন, তিনি ফরাসি কনভেন্ট স্কুলে শিক্ষিত হয়েছিলেন এবং তাঁর নিকট ফরাসি সেই ভাষায় পরিণত হয়েছিল যে ভাষায় তাঁর প্রারম্ভিক কাজ প্রথম লেখা হয়। তিনি তাঁর যৌবনে ইংরেজি অধ্যয়ন করেছিলেন, এবং তাঁর পরবর্তী কাজগুলির অধিকাংশই এই ভাষায় লেখা হয়। আমার লিটল ম্যাগাজিন জীবন [ এতেল আদনান তাঁর

প্রবন্ধ: সুরজিৎ বেরা

Image
  ইতিকথায় জটার দেউল : উৎপত্তি ও জন্মতথ্য  বাংলা প্রবন্ধ সাহিত্যে ইতিহাস আলোচনার স্থান প্রায় শূণ্য বললেই চলে। কিছু পুরাতত্ত্ব অনুসন্ধান চললেও তাতে ইতিবাচক দর্শন তেমনভাবে প্রতিফলিত হয়নি। শুধুমাত্র মধুহীন ফুলের মত সৌন্দর্য বহন করেছে; প্রত্নতাত্ত্বিক আলোচনা তো অনেক দূরের ব্যাপার। তার একটি উল্লেখযোগ্য উদাহরণ হল পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণ ২৪ পরগণায় অবস্থিত জটার দেউল। ইতিহাসবিদ, প্রত্নতত্ত্ববিদ, সুন্দরবন গবেষকগণ প্রমুখ প্রচুর সময় ধরে গবেষণার পরেও 'জটার দেউল' এর ইতিহাস নিয়ে সম্পূর্ণ ইতিবাচক বিশ্লেষণ উপস্থাপন করতে পারেননি। একের পর এক তর্ক বিতর্ক জমেছে এই দেউল নিয়ে।কুজ্ঝটিকাচ্ছন্ন ছায়ামূর্তি যেন নৈবেদ্য সাজিয়ে রেখেছে সৌধ জুড়ে। বিষয়সমূহের মধ্যে পার্থক্য থাকলেও সবগুলিতে বিশেষ আলোচনা প্রণালী রয়েছে।শ্রী বিনয়কুমার সরকার তাঁর 'ঐতিহাসিক প্রবন্ধ ' পুস্তকে বলেছেন -" মানব কখনও কোন দেশেই সার্বজনীন চরম সত্যের উপলব্ধি করে নাই। সকল যুগেই মানবসমাজ কালোপযোগী সমস্যার মীমাংসা করিয়া সাময়িক ও প্রাদেশিক ধর্মের প্রতিষ্ঠা করেছে মাত্র।" মণিনদী, আদি গঙ্গা ও তাদের অজস্র শাখানদী, উপনদীর