Posts

Showing posts with the label গদ্য

বীথিকা ধরে হেঁটেছে দীন

Image
  (ক) প্রত্যেকের বুকের পাশে একটা টলটলে কালো দিঘী থাকে। যে দিঘীগুলো বর্ষায় সাদা শালুকে ভরে ওঠে। কালো জলের গন্ধ ছড়িয়ে পড়ে গোটা শরীরে যেভাবে সাজের কাজল ছড়িয়ে পড়ে চোখের তলা জুড়ে। তারপর সমস্ত শরীরের মাংসপিণ্ডকে পাঁজা কোলা করে তুলে নেয়, সহসা রেখে আসে পাপড়িদের কাছে। ভুলগুলো বেছে বেছে তুলে নেয়, খুদকুঁড়োর মতো ছুঁড়ে ফেলে দেয় জলেদের গানে। যে গানগুলো বাজে, খারাপ, ডানা ভেঙে যাওয়া মথেদের মতো অদরকারী। তাদের পাশ কাটিয়ে সবাই মেতে ওঠে শালুকের রঙ্গে, কালো রঙ সরে যাওয়ার মহোৎসবে। কালো রঙ সরে যায়, টগবগ করে উঠে আসে সাদা শালুকের প্রজন্ম। সবুজ জলের কল্লোলে প্রজন্মরা হেসে ওঠে, ধুপকাঠি জ্বালায়, মোচ্ছব বসায়, তারপর হইহই করে জড়ো হয় সাদা শালুকদের গোড়ায়। বিস্ময়ে তাকিয়ে থাকে ওরা। ওদেরও শেখানো হবে সব অপমান মুখ বুজে শুষে নিতে হয়, সব কান্না বৃষ্টিতে আড়াল করে নিতে হয়, সব মন খারাপ সুখী ঘরের কোণে একপাশে চাপা দিয়ে রেখে দিতে হয়, সব বিষন্নতা ভুলে যেতে হয়, দুঃখগুলোর কোনো নাম দিতে নেই। ওরা শিখবে সুখী হতে— কালো জলের উপর দাঁড়িয়ে কিভাবে কালো জলকে সুনিপুণভাবে আড়াল করা যায়। সুখী মাংসপিন্ডের দল ...

ঝুলন্ত উইন্ড চাইম...

Image
  Misha Gordin's Photographic Collection ট্রামলাইনের ধার দিয়ে সচেতনভাবে যেতে হয়-- জীবন দিয়ে সচেতন করে দিয়ে গেছেন একজন। ট্রামলাইন ধরে এগোতে এগোতেই হঠাৎ পেছন থেকে আসা একটা শব্দে সচেতন হয়ে গেলাম। ট্রাম না, হাতে টানা রিকশার ঘন্টি। এভাবে সচেতনতা এসে হঠাৎ কলার ধরলেই কবির মুখ মনে পড়ে যায়। কাব্য না, শুধু কবির মুখ। বাস বা অন্য কোনো যানবাহনের সামনে এসে পড়লে না... শুধু ট্রামের ক্ষেত্রেই। কোনো প্রকার অ্যালগোরিদম হয়ে আছে মাথার ভেতর। অবশ্য, মাঝে মাঝে রেল লাইন পার হওয়ার সময়েও মনে পড়ে। নিয়ম না মেনে প্ল্যাটফর্ম থেকে কিছুটা দূরে গিয়ে সরাসরি লাইন পার করে যাওয়ার সময়ে। সবাই দুদিক দেখেই আত্মবিশ্বাস নিয়ে পার হয়। ট্রেন তো ভূত না যে হঠাৎ উদয় হবে! রাণা দা কি সচেতন ছিলেন না সেদিন তাহলে?... অন্য কারো কথা ভাবছিলেন... কবির মতো? আনমনে এগোতে এগোতে কখন রুটি-তরকারির দোকানের ফাঁক দিয়ে ফুটপাথে উঠে যাই, কখন নেমে যাই আবার রাস্তায়-- খেয়াল থাকে না। চেনা পথের একটা নিজস্ব রিপিট-মোড অ্যালগোরিদম থাকে বোধহয়। মাথা নিজের মতো চালিয়ে নেয় পা-দের। মাঝে মাঝে কাঁধে ধাক্কা লাগে। প্রতিটা ধাক্কা যতিচিহ্নের মতো। কিছু যতিচিহ্ন দীর্ঘ হয়। ...

প্রচ্ছদ আখ্যান

Image
  কাঁসাই নদীর থেকে সামান্য দূরেই আমাদের ছোট গ্রাম। মুকুটমণিপুর থেকেও খুব বেশি দূরে ছিল না আমার ছোটবেলার সেই বিদ্যুৎবিহীন গ্রাম। আলো-ঝাঁঝালো, শব্দে-জব্দ কলকাতার থেকে আমরা পালিয়ে বাঁচতাম স্কুলের ছুটি পড়লেই। “এখন তো জলই নেই, আগে কতবার বন্যা হয়েছে। আমাদের আটচালা অবধি জল থইথই করত। কত মাছ চারদিকে! মাছ ধরার ওটাই তো সময়।” জাল বুনতে বুনতে বলত দাদু। “এখন হাঁটু অবধিও জল ওঠে না। মাছটাছ আর নেই। ওই দহগুলোতেই এখন মাছ ধরে সবাই। কিন্তু কোথায় মাছ!”  বন্যার বিভীষিকা সম্পর্কে বিন্দুমাত্র জ্ঞান না থাকা শিশুমন বন্যার জন্য আকুল হয়ে উঠত। আহা, যদি আবার বন্যা হত, মাছ ধরতে ছুটতাম দাদুর সঙ্গে! যার জন্য কাঁসাইয়ে এখন জল নেই, সেই মুকুটমণিপুরের বাঁধটি হয়ে উঠত চক্ষুশূল।  দাদু জাল নিয়ে চলত ছানাতুপার দিকে। পিছনে আমি। উৎসাহে, আনন্দে আত্মহারা।  ছানাতুপা জায়গাটা ছিল গ্রামের বাইরে, হাঁটা পথ, মিনিট দশেকের বা আরেকটু বেশি। সেই যুগে কারোর হাতেই ঘড়ি নেই। ঘড়ি পরার চলও ছিল না। গ্রামের সময় চলত প্রকৃতির নির্দেশে। তাই দশ মিনিট না আধ ঘণ্টা, তা আজ আর মনে পড়ে না। তাছাড়া সময় কেটে যেত দাদুর নানা গল্পে। সে রূপকথাই হোক ব...

সিনেমা-বিষয়ক নিবন্ধ -- জয়দীপ চট্টোপাধ্যায়

Image
“The masses never revolt of their own accord, and they never revolt merely because they are oppressed. Indeed, so long as they are not permitted to have standards of comparison, they never even become aware that they are oppressed.” ― George Orwell, 1984 প রিচালক কেন লোচ-এর ২০১৬তে মুক্তিপ্রাপ্ত সিনেমা 'I, Daniel Blake ' দেখতে দেখতে ভীষণরকম রিলেটেবল লাগে সব কিছু। আমরা সবাই, কারো একটা বেঁধে দেওয়া নিয়মে সব কিছু করে যাচ্ছি। 'অসুবিধে হচ্ছে' থেকে ক্রমে 'এই ব্যবস্থা ন্যায়সংগত নয়' অবধি পরিস্থিতি চলে গেলেও, কিছু পালটাচ্ছে না নিয়মে। বেশিরভাগ মানুষ, যাদের অসুবিধে হচ্ছে, তারাও এমন ভাব করছে– যেন সব ঠিকই আছে, এভাবেই চলা উচিৎ রাষ্ট্রযন্ত্রীয় পরিকাঠামোতে। অশীতিপর বৃদ্ধা লাইনে দাঁড়িয়ে নিজের জীবিত থাকার প্রমাণ দিয়ে আসবেন– এটা স্বাভাবিক। এবং 'এইভাবে একজনকে বেঁচে থাকার প্রমাণ দিতে হবে?' প্রশ্ন উঠলে লাইনে দাঁড়িয়ে থাকাই আর এক বৃদ্ধ বিরক্তিপ্রকাশ করে বলছেন -- 'তাহলে কীভাবে করবে?' একজন বেয়ারা প্রশ্ন করলে এবং তা কর্তাদের কানে পৌঁছলে কর্তারা সেই নিয়ে আধঘন্টা কাটাবেন, অন্য...

তৃতীয়— মাস-সংক্রান্ত

Image
    মা র্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া রাজ্যের সেক্যুয়া ও কিংস ক্যানিয়ন ন্যাশনাল পার্কের প্রথম পোয়েট ল্যরিয়েট। ‘দ্য বেস্ট স্মল ফিকশনস্ ২০১৬’-সহ বহু পত্রপত্রিকায় প্রকাশ পেয়েছে তাঁর লেখা। এখনও পর্যন্ত তাঁর প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ ও ফিকশন-বইয়ের সংখ্যা মোট দশ, যাদের মধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য ‘দ্য এল্-এ ফিকশন অ্যান্থোলজি’ (রেড হেন প্রেস) এবং ‘আ সাবলাইম অ্যান্ড ট্র্যাজিক ডান্স’ (কোলা নিডলস্)। কবি পেশায় মাউন্ট সান অ্যান্টোনিও কলেজের অধ্যাপক। জন ও তাঁর স্ত্রী অ্যানি সেক্যুয়া ও কিংস ক্যানিয়নের জায়েন্ট ফরেস্টের বিটল্ রক সেন্টারে বিনামূল্যে কবিতা, গল্প, ও চিত্রশিল্পের ক্লাস নেন। এই ক্লাসের দরজা সবার জন্য খোলা, অবারিত। নিউ জার্সি-নিবাসী অনুবাদক সোহম চক্রবর্তী ডিসেম্বর’২০২২ – জানুয়ারী’২০২৩-এ ক্যালিফোর্নিয়া ভ্রমণে গিয়ে সেক্যুয়া ন্যাশনাল পার্কের জায়েন্ট ফরেস্ট মিউজিয়াম থেকে সংগ্রহ করে ২০১৯ সালে প্রকাশিত কবির এই কাব্যগ্রন্থখানি ‘ ক্রসিং দ্য হাই সিয়েরা’ কাব্যগ্রন্থ থেকে চারটি কবিতা; বাংলা ভাষান্তর   — সোহম চক্রবর্তী (১) প্রথম উষ্ণ ভোর, অবিলম্ব বসন্তের আগে সকালে, গেট খোলার আগে, মিনারেল...