'সারমেয় শাবকদের স্মৃতি' কবি নীলাঞ্জন চক্রবর্তী

 





(১)
দুটি ভাইবোন


দুটি ভাইবোন পিছু পথ ধরে চলে যাচ্ছিল দূরে
একটু যে বসতে বলবো
সেইটুকু জায়গা ছিলনা আর

জায়গা কি সত্যিই ছিলনা?
নাকি মুহূর্তের সংশয়তা স্তব্ধ করেছিল আমায়

একটু যে জল-মিষ্টি দিতে হতো
হায়রে আমার সৌজন্যতাবোধ!

নেহাতই কি চক্ষুলজ্জার অভাব?
নাকি নিয়তির অসহায়তা দারিদ্রের আঁচলে ঢাকা!

দুটি ভাইবোন মুক্তির পথ ধরে
চলে গেলো আজ দূরের থেকেও দূরে

আমার শুন্য দুটি চোখ
আর নিঃস্ব দুটি হাত
তাদের শৈশবটুকু ছাড়া
আর কিছুই রাখতে পারেনি ধরে...

(১৭.০২.২০২৪, দুপুর ৩:২৫)



(২)
বন্ধুরতা


পুরনো বন্ধুর সাথে বচসা হওয়া ভালো
সমস্ত বিলাপ, প্রলাপ উগরে দেওয়ার পর
শান্তিতে খোসা ছাড়িয়ে বাদাম চিবোনো যায়
খোশ গল্পে ফের মুখরিত হয় চায়ের প্রতিটি চুমুক

জীবন তো সামান্য আজ আর কালের সঞ্চয়
তারপর পরশুদিন সমস্ত খরচ শেষে বাড়ি ফেরার পালা
সেই অবকাশে একটা দিনের অর্ধ একটি বেলা
পুরনো বন্ধুর সাথে বচসা হওয়া ভালো

নতুন কিবা পুরনো সমস্ত বন্ধুর সাথেই
বচসা চলুক নিরন্তর,
অভিমান জমুক পাথর পাথর শীতল
মা বাপ তুলে খিস্তি-খেউড় হোক ক্ষতি নেই

শুধু সৌজন্যতার আঁধার সৃজিত হলে
বন্ধুর অতি পরিচিত ঠিকানাও হয়ে যায় দূর্গম ও বন্ধুর

(০৬ মার্চ, ২০২৪)



(৩)
স্বর্গ


ব্যস্ততাটুকু গচ্ছিত রেখে
নিজের সম্পূর্ণ মালিকানা নিয়ে যাও
ক্ষতি নেই

শুধু তোমার ভিতর যতটুকু যা কিছু আমার
সেই অধিকার হতে বঞ্চিত কোরো না
সুদের কামনা নেই, শুধু আসলটুকুই ফিরিয়ে দিও

অযাচিত এই জীবনের সামান্যতম যে চাওয়া
তাই দিয়ে আমার নিঃস্বতা টুকু
আলো হয়ে থাক

তোমার শাড়ির ভাঁজে যে চোরকাঁটাগুলি লেগে আছে
তারা আজন্মকালীন সতেজতা নিয়ে ঘুরে বেড়াবে
আরও অনেক রঙিন যুবতী আঁচল

অথচ আমি নগন্য একটি ঘাসফুলের মতো
ক্ষণজন্মা অস্তিত্বটুকু নিয়ে তোমার কানের লতিকাতেই
নিজের স্বর্গ খুঁজে বেড়াই

(১০ এপ্রিল, ২০২৪)



(৪)
বাহুল্য


এতটা বেশি চাইনি কখনোই
এই অট্টালিকা, রঙিন টালি
মাথার উপর জ্বলতে থাকা শুভ্রতা
এতো বেশি আয়োজনে শরীর ভারি হয়ে আসে
মনের অসুখ হয় আমার

সামান্য ছাদ যাতে রোদ বৃষ্টির ভালোবাসা বাঁধা যায়
ছোট্ট দুটি ঘর যাতে
শান্তির শীতলতা আর মায়ার উষ্ণ ওম সংসার পাতে সাথে
সাড়ে চার হাত বাগান যাতে একটি কাগজী, দুইটি জবা
আর কিছু কাগজ ফুলের সন্তান বড় হয়


ঠিক এইটুকুই চাওয়া ছিল আমার
এদের গল্প লিখে যেতে চেয়েছিলাম
পাসবুকে বাঁধা কিছু সংখ্যায় নয়
আমি জীবন পাঁজির হলুদ দিস্তায় সমৃদ্ধ হতে চেয়েছিলাম

আজ আমার ব্যালকনিতে জবার বদলে ফুটেছে
দামী অর্কিড, টিউলিপ আর বিলাসিতার জঞ্জাল

জাগতিক বাহুল্যতায় ঢেকে গেছে
মাটির গন্ধ মিশ্রিত আমার
শুন্য দুটি হাত

প্রসিদ্ধতার এই দণ্ডকারণ্যে আমি
ছেঁড়া চিরকুটে প্রস্ফুটিত দুটি শব্দ খুঁজে বেড়াচ্ছি

Comments

আরও পড়ুন

বীথিকা ধরে হেঁটেছে দীন

সংবেদন চক্রবর্তী

উপসংহার থেকে ফিরছি —কবিতা সিরিজ

একটি কবিতা সিরিজ

এক গুচ্ছ কবিতা

প্রচ্ছদ আখ্যান

তৃতীয়—মাস-সংক্রান্ত

তিস্তা পাড়ের মেয়েটি— কবিতা সিরিজ

দেবজ্যোতি দাশগুপ্ত

ছোট গল্পগুলি