অনিরুদ্ধ সুব্রত

 




এক গুচ্ছ কবিতা

অনিরুদ্ধ সুব্রত

                                 




(১) বাড়িটা পরিত্যক্ত

সফল হয়েছে, মধ্য নিশির চামচিকিরা

উড়ছে এবং ঝুলছে দেয়ালে, খেয়ালে

পছন্দ মতো বিপরীত বর্গক্ষেত্রে, বর্গ গুণনে

স্তব্ধ সিলিং ফ্যানকে 'ফুঁ'-এ তাচ্ছিল্য করে।


জানলার বাইরে কতগুলো জোনাকি

তাদের প্রশ্ন অন্য, অবান্তর ধরণ, যা নাকি

রাত বাতির অবকাশে, মুখ্য হতে পারত

সবুজাভ ঝিকমিক, নিশ্ছিদ্র অসুখের সুখে।


দুটি আরশোলা আজ বিছানায় শুয়েছে

শুয়ে শুয়ে হাসছে---'বিছানা বা গড়ের মাঠ'

মুখে বলছে--- মেঝের নিচের ফুটো গুলোতে

দম বন্ধ হয়ে আসত, আপদের কীটনাশকে।


বাইরে বৃষ্টি হচ্ছে, জল ঢুকছে গর্তে

এক বিবাগী সাপ ফটকের ফোঁকর দিয়ে

ঢুকল, অথচ সারারাত ঘুমোতে পারল না সে--

পাথরের বুকে, কোনো স্যাঁতসেতে প্রত্ন-গন্ধে।


(২) পুরনো গানের গায়ে

ঠোঁটের কাছে, তোমাকে বলবার

নতুন কোনো কথা, গচ্ছিত নেই আর

কতক প্রতিধ্বনি, দূর পাহাড়ে ধাক্কা খেয়ে

ফিরে আসে, পুরনো উচ্চারণে, আবার


লেগেছে শ্রাবণের ছাঁট তাতে

আবৃত্তি করতে গেলেই দেখি, ভিজে ভাব

জানি না ভবিতব্য নতুন গান খোঁজে কিনা

কেবল কিছু মেঘ রয়েছে হাতে


গান গুলো কি রোজ নতুন হয়ে আসে

গাইতে গাইতে কত ব্যর্থ মনোরথে

বাইতে বাইতে সন্ধে ঘাটের কাছে

কন্ঠ কেন বৃষ্টি-নদী, পুরনো কথায় ভাসে...



(৩) গ্যালারি

আমি দেখি, কতগুলো ছবি দেখি

পৃথিবীতে ছবির কোনো ক্ষমতা নেই, তা কিন্তু না

ছবি যখন মুখোমুখি কথা বলতে আসে, দেখি

আশ্চর্য ! সে জ্যান্ত মানুষের চেয়ে কম কিছু নয়

যুক্তি খণ্ডায়, নতুন যুক্তির শব্দবন্ধ সৃষ্টি করে

হতচকিত করে, আমাকে শাসায়

হারিয়ে ভুত করে দেয়, বিশ্বাসের খেলায়


তখন আমাকে আবার পড়াশোনা করতে

বসতে হয়, মলাট ছেঁড়া বইয়ের কাছে

পাতা গুলো ওল্টাতে হয়, পর পর

আঙুল দিয়ে বুঝতে হয়

সংখ্যা ও সমীকরণ অথবা শূন্য দর্শন

মুখস্থ করতে হয়--- যা কিছুতেই মনে থাকে না

এমন কতগুলো অনুবাদ বা অনুচ্ছেদ 


আসলে ছবি গুলো তো আকাশ থেকে পড়েনি

পৃথিবীর ঘূর্ণায়মান পরিস্থিতির মুহূর্ত

তারও মধ্যে আকাঙ্ক্ষা, আনন্দ ইত্যাদির সমর্থনে

যার কৌণিক অবস্থানের পিছনে

ইচ্ছে, রং, বোধ, ভাবনা, প্রয়োগ কাজ করেছিল

শিল্প তখনই সুন্দর হয়ে ওঠে, যখন তা সত্য---

আমি কি আর এমনি এমনি ছবিগুলো দেখি...



(৪) মেঘ শ্রীবাস্তব

আমি ? তোমার বর্ষার মেঘ।

দু'একটা দিনে মেঘ ভালবাসে মানুষ

আসলে মানুষের ততটা মেঘ চাই না

চাই ছায়ার মতো নরম দুপুর অথবা

একদিন সারারাত বৃষ্টি।

সারাটা যাপন তার রোদ্দুর পথ ঘাট

ঝড় শুনলে তার গা গুলোয় হঠাৎ

ঈশান কোণে তাকালে মাথা ঘোরে

কত যে সন্ধে নষ্ট করেছে, অবিবেচক

এক পশলায় ।

আমি, তোমার ঘন বর্ষার মেঘ।

তুমিও জানো স্যাঁতসেতে কতটা

বলো না, কিন্তু সঙ্গে রাখো ছাতা

তোমারও তো মেঘ চাই না---

শুধু জানলায়, ঝেঁপে এলে ভালো হয়

নিপাট দু'একটি নিরিবিলি

ছুটির দিন।


এই মুগ্ধ মধ্যাহ্ন, বেড়াবার দিন

আলো ছায়া খেলবার বালি চড়া

জোছনা চোখে, দূর আকাশের তারা,

হঠাৎ ঘন কালো মেঘ করে এলে তখন

সেই যে সবচেয়ে বড় না নিতে পারা

বিরক্ত সঙ্গীন।

আমি ? তোমার অ-ভরসার মেঘ।



(৫) কালো বিন্দু

যে ভাগ মিলবে না, 

হয়তো না মিলেও চলে যাবে

ভেঙে ভেঙে দশমিকের পর খুব জোর তিন ঘর

গণিতেরও সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম মেনে নেওয়া আছে

কে পরিমাপে আর, পৃথিবীর বুকের ঢালু মাটি---

কী সে স্কেলে ফেলে, কে বা দেখেছে মনের উর্বর।


ধুলো খেলা থেকে ফিরে

গা ধুয়ে স্তিমিত সন্ধ্যেয়

খোপ খোপ রূপ ও আকৃতি, আত্ম-রাত্রির ভিতর

কিছু শব্দ প্রবেশাধিকার না পেয়ে বিলীন শূন্যে

কে জানে জীবন কীভাবে সেরে নেয় তার পুণ্যস্নান---

আছে পরম আলোকের বুকে কত অদৃশ্য গোপন গহ্বর।


 (৬) স্বপ্ন-সংসার

স্বপ্নের সমুদ্র পর্বতের পাশেই আছে

ইচ্ছের ঘর সংসার

সেখানে দীর্ঘ রাতের নদীজলে ভাসে

নৌকোর ছই-ঘর

পেরিয়ে যায় উষ্ণ মরুতে মন্থর উট

আশ্রয় পিঠের উপর

স্বপ্নের বরফে পড়ে সাধের সৌর-সুখ

গলিত সোনা-রূপ

ফুটে ওঠে যে গাছে কখনও ফোটেনি

আশ্চর্য দুটি ফুল

অবিকল জীবনের বিকল্প জীবন লেখে

মানুষ স্বপ্নের ভিতর

শরীরকে রেখে,শরীরের উন্নততর ছাপ

লাগে মনের পর।




Comments

আরও পড়ুন

ছোট গল্পগুলি

উপসংহার থেকে ফিরছি —কবিতা সিরিজ

জুজুতন্ত্রের সমূহ শ্বাপদ এবং হুজ্জতি

বাসন্তী প্রেম/পিনাকী বসু

নগ্ন দিনলিপি— কবিতা সিরিজ

অবগুণ্ঠন সাহিত্য পত্র ও কিছু কথা— অমিতাভ দাস

সাহিত্য বাজারের হাতে বাংলা ভাষাটার অবস্থা বড়ই করুণ----দীপ শেখর চক্রবর্তী

একটি কবিতা সিরিজ

শুভ্র সরকার

সম্পর্কগাছ— কবিতা সিরিজ