সাম্য রাইয়ান— নির্বাচিত একক সংখ্যা



বিতার নাম করে প্রেমের দিকে যাত্রা অথবা হ্যালুসিনেশন— সাম্য রাইয়ান

আত্মজাগতিক ধ্বংসপাহাড়ের গুহায় আমাদের যাপনচিত্রের আদুরে নাম ‘কবিতা’৷ সারিবদ্ধ কালো মেঘের নিচে কবিতার দুধেভাতে সংসার; মৃদুমন্দ আলোকছটা— যা নিশ্চিতভাবে নিজেদের দিকেই আঙুল তোলে; দেখিয়ে দেয়, শাদাকালো আয়নামহল।

. — আপনার কবিতা বুঝি না ৷

— আমি নিজেই কি বুঝি?
কেউ কবিতা বুঝেছে কোনোদিন!

২. আজকাল কেউ কেউ আমার লেখা পড়েন; বেশ বুঝতে পারি৷ কেউ যদি আমার লেখা না পড়তেন তবুও আমি লিখতাম৷ অতএব আমার লেখা, পাঠকের পড়া না পড়ার উপর নির্ভর করে না! আমার কথা, আমার বক্তব্য, যে কোনো বিষয় নিয়ে আমার যা চিন্তা তা আমি লিখি; লিখে বলি; এছাড়া আমার আর কোনো মাধ্যম নেই; বিকল্প নেই৷ অতএব আমাকে লিখতে হবে; কথা বলতে হবে; যে কথা আমার, যা কেউ বলছে না৷

৩. তীব্র কবিতার দিকে যাত্রা ভিন্ন কোনো উদ্দেশ্য নেই...

৪. বুঝলা তাথৈ, আধুনিক কবিতা হইলো নারী সম্প্রদায়ের মতো; যতোই পড়ো— পুরাটা বোঝা সম্ভব না! হাঃ হাঃ হাঃ হাঃ


৫. কিছু শব্দ আমি লুকিয়েছিলাম 
    তোমার গোপন গুহায়,
              আমার ব্যক্তিগত পৃথিবীতে।

    মৃদু শব্দেরা খুব দূরন্ত হয়েছে
    আজকাল, ঘরবাড়ি 
                   তছনছ করে।

                  আমার পৃথিবী হলো উল্টোপালক
     ভেঙে তছনছ - শ্রী একাকার!

কেবলই শব্দ গাঁথি স্বপ্নবাজ তাঁতিদের মতো। পুরো গাঁথা শেষ হলে এগুলো ছেড়ে দিই; পুকুরে ছড়িয়ে পড়ে ঘন বুনটের জাল।


এইখান থেকে যতোগুলো শব্দ শোনা যায়, তার সবগুলো, কিছুটা সময় নিয়ে, মিশ্রিত, একটি গর্জন হয়ে হাজির হবে। আর দূর থেকে ভেসে আসা সহস্র প্রাণের কণ্ঠস্বর কুলধ্বনির মতোই মিশে যাবে একটি বিন্দুতে। বিক্ষিপ্ত সেই বিন্দুগুলো, অগণিত, জড়ো হতে হতে তৈরি করবে আরেকটি অকল্পিত বিন্দু, কবিতার শরীর।
কবিতার সত্য- সত্য নয় শুধু, দর্শিত সত্যের ওপরে তার গতিস্রোত; আর গভীরেও।

শুশ্রুল বৃক্ষের নিচে শিশিরের মতো টুপ করে ঝড়ে পড়া মেঘ থেকে - যুদ্ধ পরবর্তী হিমায়িত নীরবতাসংগীত থেকে - শিশুদের কান্নার আওয়াজ থেকে - ঝিমলির ঘুরে দাঁড়ানোর প্যাটার্ন - টান দিলে খুলে আসা চোখের পালকের মতো - মৃদু শব্দেরা খুব দূরন্ত হচ্ছে কবিতায়। যোনিমুখ থেকে বেরিয়ে আসা ভাবনার কার্পেটে মোড়ানো কবিতা। আরো আরো নিবিড় যাপনে জন্ম নিচ্ছে কবিতা। কালো চায়ের লিকার থেকে নিবিড় ভালোবাসায় ভাতের মারের মতো উথলে আসে কবিতা - আরো গভীর আরো ব্যাপক বিস্তৃত উশৃঙ্খল আজেবাজে এলোমেলো হওয়ার শব্দ, পাতা ঝড়া হাসির শব্দ আরো নিবিড়; ব্যাথিত সূর্যের অসন্তুষ্ট রৌদ্রের ভেতর থেকে জন্ম নেয়া মেঘের বাচ্চা।

অলংকরণ-নম্রতা বালা


আলাপ-আলোচনা

১) বিন্দু পত্রিকার সম্পাদনা করছেন ২০০৬ সাল থেকে এবং এই পত্রিকা, আজকের দিনে ভারত ও বাংলাদেশের মিলিত উচ্ছ্বাস। আমাদের সকলেরই জানা। সম্পাদক হিসাবে নির্বাচনের জন্য সর্বপ্রথম আপনি কিভাবে একটি লেখাকে দেখেন—

উত্তর: প্রধানত আমি দেখি লেখাটি নতুন কিছু দিতে পারছে কী না৷ সেটা হোক চিন্তায়, আঙ্গিকে বা অন্য কোনোদিকে৷ আমি আসলে নতুন লেখা, নতুন চিন্তা প্রকাশ করতে চাই; কবিতা, গদ্য, যা-ই হোক৷ যে লেখা সাধারনত, সচরাচর প্রচলিত পত্রিকাগুলো প্রকাশ করতে পারে না, চায় না; আমি সেধরনের লেখা প্রকাশে অধিক মনযোগী৷ আমি মনে করি, শুধু লেখা প্রকাশ করেই একটি লিটল ম্যাগাজিনের দায় শেষ হয়ে যায় না৷ সার্বিকভাবে একজন লেখককে পাঠকের সামনে উপস্থাপনের দায়ও লিটল ম্যাগাজিনের উপর বর্তায়৷ আনন্দের সাথে এই দায় বিন্দু বহন করে চলেছে এত বছর ধরে৷ ফলে তুমি খেয়াল করবে, এমন সব লেখক, যারা জনপ্রিয় না, গুরুত্বপূর্ণ; কিন্তু পাঠক তাদের সম্পর্কে খুব একটা জানেন না, বিন্দু তাদের নিয়ে আলোচনা, সাক্ষাৎকার এবং বিশেষ সংখ্যা প্রকাশ করে৷

২) আপনার বেশিরভাগ কাব্যগ্রন্থের নামকরণ দেখতে পাচ্ছি নিসর্গবর্ণনামূলক— যেমন ‘হলুদ পাহাড়’, ‘চোখের ভেতর হামিং বার্ড’, কিংবা সদ্য প্রকাশিত ‘হালকা রোদের দুপুর’ এই নামকরণ গুলির প্রসঙ্গে যদি দু চার কথা বলেন…

উত্তর: তুমি বলার আগে আমি নিজেও এভাবে মিলিয়ে দেখিনি৷ আসলে এই কবিতাগুলো, যেগুলো নিসর্গপ্রবণ, সেগুলো আমার ব্যক্তিজীবনের চড়াই-উৎরাইয়ের সাথেই বোধয় সম্পর্কিত৷ কবিকে আমার কেবলই মনে হয়— জীবনব্যাপী সম্পর্কশাস্ত্র বিষয়ে গবেষণা করে চলা ব্যক্তি৷ সে নানান সম্পর্ক— প্রাণের সাথের প্রাণের, প্রাণের সাথে প্রাণহীনের, ক্ষুদ্রপ্রাণের সাথে মহাপ্রাণের…, সকল সম্পর্ক! এই প্রকারের সম্পর্ক স্থাপন— রক্ষা— চ্ছেদ— বিকাশ বিষয়েই মনে হয় কবিজীবনের সকল গবেষণা৷ সেই সম্পর্কশাস্ত্রেরই বহিঃপ্রকাশ কবিতাসকল৷ ২০১২ পরবর্তী সময়ে মনুষ্যসৃষ্ট দুর্যোগ আমার ব্যক্তিজীবনকে নির্মমভাবে আক্রান্ত করে তুলেছিলো৷ ‘পৃথিবী সিরিজ’ কবিতায় লিখেছিলাম, “মৃদু শব্দেরা খুব দূরন্ত হয়েছে/ আজকাল, ঘরবাড়ি তছনছ করে।/ আমার পৃথিবী হ’লো উল্টোপালক/ ভেঙে তছনছ—শ্রী একাকার!”

এত আঘাতে জর্জরিত হয়েই বোধকরি মানুষ থেকে দূরবর্তী হয়ে আমি প্রকৃতির নিকটবর্তী হয়েছি৷ অর্থাৎ মানুষকে বন্ধু বানানোর পরিবর্তে নিসর্গের বন্ধু হতে চেষ্টা করেছি৷ ‘ফুলকুমার’ কবিতায় লিখেছিলাম, “মানুষের প্রতি নিষ্ফল প্রণয়যান/ এড়িয়ে চলেছি আমি৷ দেখেছি/ সেসব জীবনের ব্যর্থ অভিযান৷”

আরেকটি কবিতার কথা মনে পড়ছে, ‘লিখিত রাত্রি ২০’, “ওরা চায় আমি পাগল হয়ে যাই, একা হয়ে যাই/ শহরে ঘুরিফিরি নিঃসঙ্গ মানুষ; আমার মৃত্যু হোক/ জলের অভাবে নির্মম: বর্ণনাতীত। অথচ কতো/ পাখি ফুল নদী বন্ধু হচ্ছে অকপটে; কী তুমুল/ আড্ডা দিচ্ছি আমরা। সুযোগ নেই, হবো: একলা-পাগল।”

৩) পাঁচের দশকের কবি, কবিতার অনিবার্য নাম উৎপলকুমার বসু এবং এই কাজের আগেও গদ্য রূপে উঠে আসে আরেকটি নাম আপনার কাছ থেকে সুবিমল মিশ্র (২০১৪)। তারপর সদ্য প্রকাশিত জন্মশতবর্ষে সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ (প্রবন্ধ সংকলন) এই নামগুলো বেছে নেওয়ার নির্দিষ্ট কারণ আছে কোন?

উত্তর: উৎপলকু্মার বসু, সুবিমল মিশ্র কিংবা সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ, এঁদের সাহিত্যের প্রতি ব্যক্তিগত ভালো লাগা তো আছেই৷ সুবিমল মিশ্রকে নিয়ে যে পুস্তিকাটি লিখেছিলাম, সেটি ছিলো তাঁর সাহিত্য পড়তে পড়তে লিখিত নোটের সংকলন৷ এরপর উৎপলকুমার বসুকে নিয়ে সাত বছর ব্যাপী যে কাজটা করেছিলাম, সেটার কারন উৎপল পরবর্তী সময়ের কবিদের কবিতায় তাঁর প্রভাবের তীব্রতা; যা দেখে আমি প্রকৃতপ্রস্তাবে এর কারন অনুসন্ধান করতে চেয়ে ছিলাম৷ আবার যখন দেখলাম শারীরিক প্রয়াণের পর উৎপলকুমার বসুর কবিতা আরো তীব্রতর হয়ে উঠছে বাঙলা মুলুকে, তখন আরো বেশি আগ্রহী হলাম এর কারন জানতে৷ বাঙলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গের অর্ধ শতাধিক লেখকের দৃষ্টিভঙ্গি, বিশ্লেষণ একত্রিত করে এই সংকলন প্রকাশ করেছিলাম৷ আর ওয়ালীউল্লাহ’র কথা নতুন করে কী বলবো! তিনি মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে বাঙলা সাহিত্যের অন্যতম স্মার্ট কথাসাহিত্যিক৷ আমি ভেবেছিলাম তাঁর জন্মশতবার্ষিকীতে বাঙলাদেশে অনেকেই অনেক উদ্যোগ নিবেন৷ কিন্তু আমি হতভম্ব হয়ে লক্ষ্য করলাম কেউই তাঁর শতবার্ষিকী প্রবন্ধ সংকলন প্রকাশের উদ্যোগ নিলেন না৷ এত বড় অসম্মান মেনে নিতে পারলাম না৷ তাই বিন্দুর পক্ষ থেকেই উদ্যোগ নিয়েছিলাম ‘জন্মশতবর্ষে সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ’ প্রবন্ধ-সংকলন প্রকাশের৷

৪) আমার শেষ প্রশ্ন, এই দশকের আপনার প্রিয় কবি—

উত্তর: গত দুই দশকে এত এত ভালো কবিতা লেখা হয়েছে, হচ্ছে, যা অভাবনীয়৷ আগের দশকগুলোতে আমরা যেমনটা দেখেছি কয়েকজনমাত্র কবি উজ্জ্বল হয়ে উঠছেন, ভালো কবিতা লিখছেন, কিন্তু দুই হাজার পরবর্তী সময়ে আমরা তেমনটা দেখছি না৷ এসময়ে একসাথে অনেকেই ভালো লিখছেন, উজ্জ্বল হয়ে উঠছেন৷ যেন একটা বিকেন্দ্রীকরণের মতো ঘটনা ঘটছে৷ এইটা নতুন ঘটনা বাঙলা সাহিত্যে৷ ফলে অগ্রজরা অনেক ক্ষেত্রেই কনফিউজড হয়ে যাচ্ছেন এই সময়ের কবিতা আলোচনায়, চিহ্নায়নে৷
আর এই দুই দশকে আমার প্রিয় কবি, প্রিয় কবিতার সংখ্যা অনেক৷


সাম্য রাইয়ান'র এক গুচ্ছ কবিতা—


শৈশবভর্তি গ্রাম

কোলাহলে ঘুমাও তুমি। নৈঃশব্দ্য 
আতঙ্কের। ভয় পেয়ে ভেঙে যেতে পারে ঘুম।

এইসব বৃষ্টিদিনে ভোরের আকাশে দ্বিধাহীন পাখি ভেসে থাকে। নদী ভেঙে যায়, আঁচল ভিজে যায়। হাতের আঙুলে লুকিয়ে থাকে শৈশবভর্তি গ্রামাঞ্চল। লালগ্রাম নীলগ্রাম ছুঁয়ে ছুঁয়ে একদা বিশেষ ভঙ্গিতে ঠোঁটের কারুকাজ দেখিয়েছো।

ঘুম ভাঙাবো না, তোমাকে জাগাবো না। কোলাহল হোক। সঙ্গীপ্রিয় হামিংবার্ডের মতো প্রেম জাগিয়ে ঘুমাও। চারিদিক উচ্ছন্নে যাক।


শাদা প্রজাপতি

এইখানে আমি একা, নিঃসঙ্গ পরিব্রাজক।
তারপরও সে আছে এখানেই
মাড়াইকৃত চালের মতো শুভ্র শরীর নিয়ে
এখানেই কোথাও সে রয়ে গেছে
অপ্রকাশিত প্রজাপতি হয়ে।

শাদা প্রজাপতি এক জীবন্ত এরোপ্লেন।
হাত বাড়ালেই তার উন্মাতাল গান
উঠে আসে হাতে কান্নার সুর।


হাওয়াই জাহাজ

একদল আত্মহত্যাপ্রবণ কৈ মাছকে
তীর থেকে ডেকে স্বপ্নমাখা শাদাকালো
ফুটবল উপহার দিলাম।
হাওয়াই জাহাজ থেকে নেমে এলো
প্রজনন্মুখ কিশোরী হামিংবার্ড।
আমিও উচ্ছন্নে গেলাম
চাওয়া—না চাওয়ার উর্ধে।


নিউটন

নিরাকার— জলের সাইরেন৷
এলো আমফান— সাফোর 
কলোনীতে৷ বৃষ্টিবৈভবে জেগে উঠি৷
শব্দ হয়৷

নিউটন, আপেলতলায় থাকো৷
বাড়িতে যেও না৷

বাড়িতে হৃদয় নেই৷
মানুষভর্তি বেদনা৷

অলংকরণ- নম্রতা বালা





গহ্বরে

এমনই অন্ধকার, যেন পৃথিবী গাছের গহ্বর৷
মগ্নগাছের শরীর থেকে চুল ছেঁড়া যায়
সারি সারি পালক খসানো যায়
দুপুর গড়িয়ে পড়ে হামিংবার্ডের শরীরে
ভুলে যাওয়া নীল হয় সত্যক্লেশে স্থির!


পতঙ্গডানা

পাশ ফিরে ঘুমুচ্ছিলাম। হাওয়াকল জাগাচ্ছিলাম। জামরুল বন থেকে আবছা তাথৈ একা, গান শেষে ফিরে এলো।

তুমুল পাগল হাসছে। নদী-সব জাগছে পুরোনো প্রতিবাদে, শরীর ছাড়িয়ে। গভীর বিস্মৃতি পেরিয়ে বিপুল পতঙ্গডানা, এসো। অপরাধ ভেবে পাখির বল্কল, দূরে যেতে যেতে জমছে আবছা নীল। নির্বিকার যন্ত্রণা ছেড়ে এসো মুক্তকেশী সত্য বাহানা। মাথায় ফিতে বাধা শিখতে শিখতে ঘনহলুদের বুকে বিঁধে যাওয়া উভয় বেদনা এক ফুল থেকে ভীষণ রাইপথ বেয়ে উঠে যাবে যাতনা-সজাগ হরিণীর ছায়ায়। কোমলমতি কদমফুলের দিকে, তুমি মূঢ় তুমি জলবৎ তরলং।


বানানবিভ্রাট

এতো যে জোনাকি-আলো, পথ দেখায় না, আশা জাগায় না; ব্যথা ভোগায় না; কিছুই...

আমি শুধু জন্মকে মৃত্যুর প্রতিদ্বন্দ্বী ভাবতে ভালোবাসি। প্রতিবার জন্মের ত্রুটি নিয়ে এতো-যে-প্রবণ মাঝি, তোমার জন্য লাগে আমার কব্জি-জোরের থেকে বেশি; পুরোনো ক্রোধের সুরে গর্জন। কেন প্রায়শ গোলাপের নামে প্রতারণা মুদ্রণ করো! শীতার্ত ভয়ে কেঁপে ওঠা, দুলদুল এই পাতাগুলো অসহায়, কপর্দক ছুঁতে পারছে না। সোডিয়াম বাতি থেকে মিনতিমিনার অব্দি, ভাসে অনঙ্গ বাতাশ শুধু বাদামের পাতা থেকে যথার্থ মনীষা জাগাতে। আমার ঈশ্বর তুমি, ভেতরে সবুজাভ পাট; অথচ আশ্চর্য, তোমারই হৃদয়ে ঘটে বানানবিভ্রাট!


জলের অপেরা

ডানা আঁকো—সশব্দে ঝাপটাও
ডাকছে ব্যাকুল নদী
শিহরিত
হেঁটে হেঁটে আমি পৌঁছলাম
নদীর কাছে৷ অনেক মানুষ—
যারা হৃদয় ফেলে এসেছে 
ধরলার জলে, সকলে
একত্রিত আজ৷ হারানো 
হৃদয়ের গান শুনছে মেয়েটি
ছেলেটিও৷
হাটু মুড়ে ওর পাশে বসি
আমি তো যাবো না কারো সাথে
তোমার উপশিরা
যেদিকে এঁকেছে পথ
শুধু সেই দিকে যাবো৷
অন্য কোনো জলে
যাবো না৷

হামিংবার্ড

চোখের ভেতরে একটা হামিংবার্ড
নিয়ে বসে আছি;
চমকে দিওনা তাথৈ
উড়ে যাবে৷

উড়ে যাবে তারা, স্বপ্নেরা
সারি সারি ডানা
ঘুমের ভেতরে বয়ে চলা নদী
হাতের তালুতে বয়ে যাবে
ঢোড়া সাপ, রক্তের ধারা৷


আমাকে বহন করো

আমাকে বহন করো নখের মতো, বেড়ে ওঠার যত্নে। উর্ধ্বশ্বাসে বেরিয়ে পড়া এই নভোযান, মেতে উঠেছিলো শব্দে। গন্তব্যের ছায়ায় পেয়েছিলো কোমল পানীয়, বিশুদ্ধ আহার। সবুজ পত্রালি, অপূর্ব ইচ্ছের দিগন্তে কারো খাদ্যকষ্ট নেই। নিবিড়তম গাছ উপচে পড়ছে ফলে। ফলাহার অনুভব করো মায়ের গল্পজুড়ে। অবশিষ্ট শরীরে বুনোফুল আর পাতার পোশাক। পাশ ফিরে আচানক গুলিয়ে যাচ্ছে সব। বিরতিদিনের ওঁম। জামার পকেটে ছিলো হিতাহিত জ্ঞান, বিরল পাখির মতো অপ্রকাশিত। তবুও গল্পগুলো, মেদহীন, নিটোল, বহন করো নখের মতো যত্নে।
অলংকরণ-নম্রতা বালা

লেখক পরিচিতি:

সদা নিরীক্ষাপ্রবণ কবি ও গদ্যকার সাম্য রাইয়ানের জন্ম ৩০ ডিসেম্বর, নব্বইয়ের দশকে কুড়িগ্রাম জেলায়। ২০০৬ থেকে সম্পাদনা করছেন শিল্প-সাহিত্যের অন্যতর লিটল ম্যাগাজিন ‘বিন্দু’ (www.bindumag.com)৷ বাংলাদেশ ও ভারতের বিভিন্ন লিটল ম্যাগাজিনে নিয়মিত লিখছেন। কবিতা, প্রবন্ধ ছাড়াও তিনি লিখেছেন নতুন ধরণের আখ্যানধর্মী গদ্য৷ প্রকাশিত গ্রন্থ: সুবিমল মিশ্র প্রসঙ্গে কতিপয় নোট [গদ্য, ২০১৪]; বিগত রাইফেলের প্রতি সমবেদনা [কবিতা, ২০১৫]; মার্কস যদি জানতেন [কবিতা, ২০১৮]; হলুদ পাহাড় [কবিতা, ২০১৯]; চোখের ভেতরে হামিং বার্ড [কবিতা, ২০২০]; লোকাল ট্রেনের জার্নাল [গদ্য, ২০২১]; লিখিত রাত্রি [কবিতা, ২০২২] ও হালকা রোদের দুপুর [কবিতা, ২০২৩]৷ সম্পাদিত গ্রন্থ : উৎপলকুমার বসু [নির্বাচিত রচনা ও পর্যালোচনা, ২০২২], জন্মশতবর্ষে সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ [প্রবন্ধ সংকলন, ২০২৩]৷ তাকে নিয়ে পশ্চিমবঙ্গের লিটলম্যাগাজিন ‘তারারা’ ও কানাডার সাহিত্যপত্র ‘মনমানচিত্র’ বিশেষ সংখ্যা প্রকাশ করেছে৷

































Comments

আরও পড়ুন

অয়ন হালদার

কবিতা

চন্দন রায়

প্রত্যাখ্যানের জার্নাল: অয়ন হালদার'র এক গুচ্ছ কবিতা

কবিতা