সম্পর্ক মণ্ডল
এক গুচ্ছ সম্পর্ক মণ্ডল
(১)
বাংলা ভাষা
প্রেয়সীকে অনুবাদ করি আজ
বাংলা ভাষায়
আকন্ঠ মুগ্ধতায় তার প্রতি রেখে যাই
স্বরের মদিরা
যে রস সিক্ত হলে ভাষায় ভাষায়
মাখামাখি হয়ে
লিখিত লিপির প্রতি
তার শরীর অনুবাদ করি আজ
আদিম সুরে
নবশৃঙ্গার
আদি প্রেমে
প্রেয়সীকে অনুবাদ করি আজ
বাংলার ভাষার
প্রেমের স্বরে
(২)
হাওয়ার গান
তোমার আমার দেখা হওয়া নিয়ে বাতাস উতলা
পশ্চিমে মেঘ
দু ফোঁটা বৃষ্টির জন্য চাতকিনীর সুরে
আকাশের মুখ ভার
এদিকে অবাক
বিকেলে বেনুবনে মর্মর
কে বার্তা দিলে
আজ দুজনের দেখা হবে
এ আকাশ
এ মেঘ
এ হাওয়া
ভেসেই চলেছে
মেঘের পেছনে মেঘ
তার পেছনে মেঘমালা
তার পেছনে
ভার মুখ থেকে দু দন্ড আকাশে
তুমুল বৃষ্টির পরে
দেখা হবে
দুজনের
হাওয়া হাওয়ায়
(৩)
৪৫,৬০০০০,৩৪৫৬৭ বছর পর, একদিন
বাইশ হাজার টন সূর্যতাপ গলে তপ্ত হল পৃথিবীর মাটি
উদ্ভিদ নেই
অক্সিজেনহীন বাতাস
চারদিকে ধূসর আকাশ
চারদিকে পুরু মেঘমালা
অ্যাসিড বৃষ্টির আশায়
দুদণ্ড গানের মতো
শুকিয়ে কাঠ হওয়া নদীতট
আজ কোনও প্রাণীর পদচিহ্ন নেই
আজ কোনও বীরুৎ প্রাণের স্তব নেই
শুধু বিষাক্ত বাতাসে বাতাসে নিঃশ্বাস নিচ্ছে
স্মৃতিলোপকারী কিছু পাখিদের গান
আর মানুষের হারিয়ে যাওয়া পদধ্বনি
(৪)
দশ অবতার চরিত
মৎসের উৎস সন্ধানে গিয়ে, মহাপ্লাবনের দিনে যার হাত ধরে রক্ষা পেয়েছিলাম তিনিই কি সমুদ্রমন্থনের কুম্ভ ধরে অমৃত দিয়েছিলেন আমার সুধাকণ্ঠে? তিনিই কি হিরণ্যাক্ষের হত্যার পর আমায় বলেছিলেন এই মর্তধামের কথা? যেখানে আমি প্রহ্লাদ রূপে জন্ম নিয়ে পিতার মৃত্যুকে দেখেছি সচক্ষে। দেখেছি সমগ্র এই বিশ্বলোকে মাত্র তিন পদক্ষেপ গ্যালে তিনি বামনদেব হয়ে পথ দেখান, তিনি ক্ষত্রিয়দের যম হয়ে পরশু হাতে মর্তলোকে ঘুরে ঘুরে, কখনোবা দূর্বাদলশ্যাম - নৃপতি হয়ে রাবণের মৃত্যু শেষে, বুদ্ধের প্রণতির প্রতি জীব-প্রাণের আকণ্ঠে জলে নামেন।
এখন তিনিই ডান হাতে তলোয়ার নিয়ে সাদা ঘোড়ায় চড়ে আসছেন, যার পদকম্পন-আয়ুরেখার বিস্তার হয়েছে
যেখানে
এই পাঠক, যিনি, শেষ লাইনটি এখন পড়ছেন।
Comments