প্রসাদ মল্লিক



শীতকালীন অমনিবাস

প্রসাদ মল্লিক









(১)


কুয়াশা ঘিরে এলে মনে পড়ে রোদের উপকথা,

নতুনত্বের ঘ্রাণ মেখে উড়ে যায় কিছু পরিযায়ী পাখি।

শীত-ভোর সেজে খেজুর রসের গন্ধ-

ভেসে ভেসে আসছে বাতাসের শুষ্কতায়।


চন্ডীতলায় আগুন জ্বলেছে সবে,

ঘিরে ধরেছে চাদর-মুড়ি দেওয়া চার প্রবীণ প্রকোষ্ঠ,

সেই উত্তাপ জানান দিচ্ছে ক্রমশ ক্ষয়ে যাওয়া উলের জীবৎকাল সম্পর্কে।


নিস্তব্ধ চতুর্দিক। শুধু-

মাঝে মাঝে বাতাসের জ্ঞান ফেরায় ফুঁপিয়ে ওঠা ফসলের যন্ত্রণা।


দেখি- প্রতিদিনের মতো

অস্থায়ী জীবন হাতে চাষীরা সব মাঠে গ্যাছে,

নতুন সকাল আনবে বলে।



(২)


জলহীন নদীর মতোই শুকিয়ে যায় মানুষের ক্ষোভ।

তার সমস্ত অধিকার- যেন ক্ষয়ে যাওয়া এক-একটা নুড়িপাথর,

ক্রমশই বেছে নেয় নির্গমনের মহাপথ।


আমি জানালা খুলে দেখি-

অসহায় চাঁদ বেচে দিয়েছে তার শেষ আলোটুকুও।

একটা গাঢ় অন্ধকার জলরং হয়ে রাঙিয়ে দেয় সমগ্র পৃথিবীকে!

গৃহহীন গাছগুলো অচিরেই মেনে নেয় সেই অন্ধকারের সর্বগ্রাসী রূপ-

তাদের ঝরে যাওয়া পাতার সমর্থনে।


দেখি- রাষ্ট্রদ্রোহের মিথ্যা অভিযোগে কেটে ফেলা হয় পাখিদের ডানা।

চুঁইয়ে পড়া সেই রক্তফোঁটা ক্রমশই শুষে নিচ্ছে মাটির ক্লান্ত নিরবতা।


স্তব্ধ চারিদিক,

ঠিক তখনই, নিষ্প্রাণ জানালা দিয়ে এগিয়ে আসা দুর্বোধ্য শীত

আমায় প্রবলভাবে ঠান্ডা করে তোলে।

রাত গভীর হয়, ঘুম ভাঙলে আমি ঘুমাতে যাই।



(৩)


প্রতিটা চৌরাস্তার মাঝে উবু হয়ে বসে থাকে শীত।

তার নিজস্বতা প্রবলভাবে ক্লান্ত করেছে কুয়াশাময় পৃথিবীকে।

জীর্ণতার পসরা-হাতে অপেক্ষমান মানুষের দল

কেবলই চায় তার সবটুকু দিয়ে পুড়ে যেতে!


আমি দেখি,

সর্বগ্রাসী রূপ ভুলে গিয়ে ক্রমশ ফ্যাকাশে হতে চায়

প্রতিটা জলন্ত অগ্নিকনা,

আর সেই অগণিত কাঠ-কয়লার রক্তচক্ষু বেয়ে

নেমে আসে শীতল এক কান্নাবায়ু।


সমস্ত কান্নার গভীরতা জড়িয়ে নিয়ে আমি তখন

রাত্রি হয়ে উঠি,

দুর্বোধ্য, দুর্বল এক শীত-রাত্রি।


Comments

দারুণ কবিতা। আমার ভালোবাসা জানাই।

আরও পড়ুন

ছোট গল্পগুলি

একটি কবিতা সিরিজ

জুজুতন্ত্রের সমূহ শ্বাপদ এবং হুজ্জতি

কবিতা

উপসংহার থেকে ফিরছি —কবিতা সিরিজ

কবিতা সিরিজ

বাসন্তী প্রেম/পিনাকী বসু

তন্ময় ভট্টাচার্য

অবগুণ্ঠন সাহিত্য পত্র ও কিছু কথা— অমিতাভ দাস

সাহিত্য বাজারের হাতে বাংলা ভাষাটার অবস্থা বড়ই করুণ----দীপ শেখর চক্রবর্তী