বাসন্তী প্রেম/পিনাকী বসু
অলংকরণ- সুদীপ পরামানিক |
বাসন্তী প্রেম
পিনাকী বসু
কোনো এক জ্ঞানী সাধু নাকি মৃত্যুর পূর্ব মুহূর্তে বলে গিয়েছিলেন যে ," বিনি পয়সায় দুধ খেতে পারলে গরু কিনবেন না। "
সোনা বাছাটি, বিরক্ত হলেও মুখে প্রকাশ করেন না। বলেন ,"না মা ,একটু পরেই খাবো । এখন ব্যস্ত আছি। তুমি রাখো।" মায়ের চোখের সামনে মুহূর্তে ছেলের ব্যস্ততার আর দায়িত্বজ্ঞানের ,একটা শশব্যস্ত ছবি ভেসে ওঠে। ব্যস্ত ছেলেকে তিনি আর ডিসটার্ব করতে চান না। গর্বিত মা শুধু পাশের জানলার কাকিমাকে বলেন ," ছেলেটা ঠিক বাবার মতো হয়েছ ওর বাবাও তো মাঠের দূর্গা পুজোর সব দায়িত্ব
এবার ,ছেলেটির দায়িত্বজ্ঞানের ছবিটা একবার মনে করার চেষ্টা করুন ,দেখুন ,মেয়েটির রোদ লাগবে ,তাই ছেলেটি হাত দিয়ে রোদ আগলে রেখেছে।
ছেলেটির মনে মনে ইচ্ছে হচ্ছে, তিনি ,আর তার তিনি, একটু নির্জন জায়গায় গা ঘেঁসাঘেসি করে একটু ইন্টুমিন্টু করতে করতে হাঁটবেন । অথচ মেয়েটি , লোক চক্ষুর বাইরে যেতে ভরসা পাচ্ছে না। অগত্যা ছেলেটি , মেয়েটিকে আগলে আগলে ভিড় এর মধ্যে ডজ করতে করতে এগিয়ে যাচ্ছেন, যাতে আশপাশের অন্য কোনো পথচারী ফাউল না করে ।
না খাউংগা না খানে দুঙ্গা , এই রকম একটা ভাব |
আপাতত কনুই অব্দি ছেলেটার হাত ওপর নিচ করছে। তার ওপরে, মেয়েটি বগল দিয়ে লক্ষণরেখা টেনে রেখেছে।
ছেলেটির ইচ্ছে হয় ,সে মেয়েটিকে বলবে ,"আজ তোমাকে ‘চ’ দিয়ে শুরু একটা জিনিস খাওয়াবো।"
মেয়েটি হয়তো সবিস্ময়ে জিজ্ঞেস করবে," কি গো ? চাউমিন ?"
কি হ্যাংলা মেয়ে রে বাবা। খাওয়ার আইটেম ছাড়া কিচ্ছু ভাবতেই পারে না ? রোমান্স বলে কি কিচ্ছু নেই? মনের ভাব মনেই চেপে একটা দুষ্ট দুষ্ট ভাব করে ছেলেটি বলবে,"দেখতেই পাবে। "
সাবধানের মার নেই ,মেয়েটি আর ঝুঁকি নেবে না, বলবে ," জানো তো, একবার সরস্বতী পুজোয়, একটা ছেলে আমায় চুমু খেতে এসেছিলো। আমি তো তাকে এক চড় মেরে দিয়েছিলাম " ছেলেটি ঢোঁক গিলে নেবে । ভাগ্গিস সে পুরোটা বলে ফেলেনি ।
ছেলেটি এবার ডিফেন্সিভ খেলার চেষ্টা করবে-
"ওহ ,আমার আগেও তোমার বয়ফ্রেইন্ড ছিল নাকি ?" তার কান এখন নেতিবাচক একটা উত্তরের অপেক্ষায় উদগ্রীব।
মেয়েটি কিন্তু কোনো উত্তর দেবে না। মনে মনে শুধু সংখ্যা গুনবে । কয়জনের নামই বা সে বলবে ? কাঁধ থেকে বিস্ময়সূচক চিহ্ন ঝুলিয়ে ,সে শুধু একবার অভিমানী চোখে ছেলেটির দিকে তাকাবে। ব্যাস কেল্লা ফতে...
প্রশ্নটা করার জন্য, এবার ছেলেটির মন অনুশোচনায় ভরে যাবে। ছেলেটির একবার ও মনে পড়বে না সেই আপ্তবাক্য " মৌন্যতা সম্মতির লক্ষণ । "
ছেলেটি তখন খিচুড়ি হাতে নিয়ে ভাববে, সে কি কোনো অফেন্সিভ প্রশ্ন করে ফেললো ? এই কেসটাও কেঁচে যাবে না তো ? কথা না বাড়িয়ে, স্কুলে ,বাকি সকলের সঙ্গে সেই কাগজের প্লেটে ,চির অপছন্দের খিচুড়ি হাসতে হাসতে পেটে চালান করে দেবে সে।
বড়ে বড়ে শহর মে এইসি ছোটি ছোটি বাতে হোতি রেহেতি হায় সিনিওরীটা।
যদিও ব্যাপারটা খানিকটা মশা তাড়ানোর মতো । মশাকে যেমন বহু কসরত করেও বাগে আনতে ব্যর্থ হলে নিজের গালেই বেশ কয়েকটা চড় থাপ্পড় হজম করতে হয় । তারপর এক্কেবারে হাল ছেড়ে দিলে , মন বলে ওঠে, যে উড়তে চায় তাকে উড়তে দেয়াই ভালো। যদি না ফিরে আসে তবে সে কোনোদিনই তোমার জন্য ছিল না। এই বলে মন সাধারণত, মশারি টাঙিয়ে নেয়।
তবে শুধু সরস্বতী পুজোয় বা বলি কেন ,প্রতিটা দিনই তো জনসংখ্যার মতো নিত্য নতুন কত্তো প্রেমের জন্ম হয় । যা জন্মায় তার মৃত্যুও তো অবশম্ভাবী। এটাই নিত্য সত্য। মাঝে শুধু কয়েকদিন জীবন মঞ্চে ,প্রেম নাট্যের অভিনয় আর মনের মধ্যে লাডডু ফোটা । তারপর যথা নিয়মে একদিন পর্দা পড়বে-ই পড়বে । আবার পরের শো এর টিকিট বিক্রি হবে ।
দার্শনিকেরা বলেন প্রেম নাকি চাইনিজ প্রোডাক্ট ,কোনো গ্যারান্টি বা ওয়ারেন্টি থাকে না।
তবুও মন ,কেন যে সারাক্ষণ এরকম প্রেম প্রেম করে তার কোনো বিজ্ঞান সম্মত ব্যাখ্যা এখনো আবিষ্কার হয়নি বলেই জানি। অবশ্য পৃথিবীর বহু কোণেই তো বিজ্ঞান এখনো পৌঁছয় নি। এটাও হয়তো সেরকম।
আমাদের বিশু পাগলের ঠাকুমার যুক্তিটা তবু কিছুটা বিজ্ঞান সম্মত বলে মনে হয়েছে। তিনি বলতেন ,"কুঁজোরও তো চিৎ হয়ে শুতে ইচ্ছে হয়। "
একবার বিজ্ঞান নিয়ে স্নাতকোত্তর করা দুই ছাত্র ছাত্রীকে এক নিরীহ বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে শুনেছিলাম ছেলেটি জিজ্ঞেস করেছিল , "শি শি শব্দ করলে হিসি পায় কেন বলতো ?"
মেয়েটি সলজ্জ কন্ঠে বলেছিলো ," জানিনা; যা -, অসভ্য একটা " বুঝলাম, এটাও একটা আইটেম, যেটা বিজ্ঞানের সিলেবাসে ছিল না। এমন না জানি আরও কত বিষয় আছে ।
আসলে এই প্রেমে পড়া ,কষ্ট পাওয়া, আবার প্রেমে পড়া ,এগুলো সব জীবনচক্রের ফের ছাড়া কিছু নয়। এই যে আমরা তেলেভাজা ,ফুচকা ইত্যাদি ইত্যাদি খাই , হাতের জল শুকোয় না ,তারপর কয়েকদিন কাঁচকলার সিদ্ধ ঝোল খাই,তারপর আবার তেলেভাজা ,ফুচকা ইত্যাদি । এই আবর্তটাই জীবনচক্র।
অথচ এই খুচরো প্রেমেও পরিশ্রম আর খরচ দুটোই আছে কিন্তু । শুধু দেখলে হবে ন। প্রেমিকার মন রাখতে, আর মানভঞ্জন করতে কোনো কোনো সময়ে তো কালঘাম ছুটে যায়। তাৎক্ষণিক মন রাখা কথা বানাও রে , গিফট কেনো রে , খাওয়া খরচ ,রাহা খরচ ,গাদা গাদা ফোনের ,ইন্টারনেটের বিলের খরচ ,বাড়িতে, বানিয়ে বানিয়ে ঝুড়ি ঝুড়ি মিথ্যে বলার খরচ,ইত্যাদি ইত্যাদি ইত্যাদি।
মাঝে মাঝে তো এত্তো সময় লাগে ,এত্তো তোলা দিতে হয় ,যে ধৈর্য হারিয়ে যায়। তবু লেগে থাকতে হয়। মনে মনে দাঁত কিড়মিড় করে বলতে হয় ," আজকের দিন তোর ,আমার ও দিন আসবে " সে দিন ও যে আসে না তা নয়। কারো কারো খুব তাড়াতাড়িই আসে কারো বা একটু দেরিতে। তবে আসেই। ভগবান তো কারো একার হয়না তবে রাগ কমাবার এক অভিনব বুদ্ধি দেখেছিলাম আমার এক ছাত্রের । ঘন্টা খানেক ধরে চেষ্টার পর সেও ক্লান্ত। মেয়েটি ফুঁপিয়েই চলেছে। ছেলেটি জলের বোতলটা এগিয়ে দিলো। নকল ফোঁপাতে ফোঁপাতে মেয়েটিরও গলা শুকিয়ে কাঠ সে বোতলটা প্রায় ছিনিয়েই নিল। কিন্তু একি ? ছিপিটা তো খোলাই যাচ্ছে না এতো টাইট। এদিকে ,তেষ্টায় ছাতি ফেটে যাবার উপক্রম খানিকটা ব্যর্থ চেষ্টার পর মেয়েটিকে , সেই ছেলেটির সাহায্যের জন্যই হাত বাড়াতে হলো। আঙ্গুল ধরতে দিলে লোকে হাত ধরবেই। এটাই নিয়ম। ব্যাস ছেলেটিও সুযোগ পেয়ে ব্যাটে বলে ছক্কা মেরে দিলো।
ঐ যে কথায় বলে না ভালোবাসা প্রমাণের জন্য তাজমহল বানানোর দরকার নেই , বৌয়ের এঁটো বাসন মেজে দিলেও হবে। এই ফর্মুলাটাও অনেকটা সেইরকমই আর যার কিছু নেই তার হাতে অপ্রতুল সময় থাকলেই যথেষ্ট। অতীত চলে গেছে ,ভবিষ্যৎ কেই বা দেখেছে , অতএব বর্তমানকে নিয়ে চিন্তা করাই প্রেমের স্বাস্থ্যের পক্ষে ভালো । সময় আসবে-যাবে ,কিন্তু সময়ের কাছ থেকে যেটুকু বাগিয়ে নেয়া যায় সেটাই লাভ। অভিযোগ করে সময় নষ্ট না করাই ভালো। সত্যিকারের প্রেমিক সময় নষ্ট না করে কাজে লাগায়।
তবে খেয়াল রাখা ভালো যে একসাথে একাধিক প্রেম না করাই ভালো। দুহাতের তালুতে যতটুকু ফল ধরে ততটুকুই ভালো করে জলে ধোয়া যায়। অতিরিক্ত হয়ে গেলে অনেকগুলো ফলই হাত ফস্কে পরে যেতে পারে। সাধু সাবধান।
কোনো এক জ্ঞানী সাধু নাকি মৃত্যুর পূর্ব মুহূর্তে বলে গিয়েছিলেন যে ," বিনি পয়সায় দুধ খেতে পারলে গরু কিনবেন না। "
ভাবুন , একজন মৃত্যুপথযাত্রী সাধুর কি চূড়ান্ত একটা উপলব্ধি। একদিকে নামকরা সাধু এবং তার প্রবচন বলে কথা - আমাদের এখানে অধিকাংশ ধর্মভীরু কিশোর-কিশোরীরা আজও তাই মনেপ্রাণে সেই ঐতিহাসিক ট্যাগ লাইনটা মেনে চলারই চেষ্টা করেন। আসুন ,ব্যাপারটা মিলিয়ে নেবার জন্য সরস্বতী পুজোর দিনটাকেই বেছে নেয়া যাক ,কারণ এখনকার কিশোরকিশোরীরা যেমন বিনিপয়সায় শিক্ষার সুযোগ পায় তেমনিই ,ছাত্রছাত্রীদের কাছে সরস্বতী পুজোর দিনটাই হলো "ভ্যালেন্টাইনের দিন" বা খুচরো প্রেমদিবস। -
ভেবে দেখুন ,সরস্বতী পুজো বললেই, যে ছবিটা প্রথমে আপনার চোখের সামনে ভেসে উঠবে , সেটা হলো, শাড়ি পড়া স্কুল কলেজের কিছু মেয়ে যাচ্ছে, পাশে পাশে পায়জামা পাঞ্জাবি পড়া কোনো কিশোর ,একমুখ বোকা বোকা দেঁতো হাসি নিয়ে ,তার ছায়াসঙ্গীর মতো হেঁটে চলেছে । যেন কোনো ব্রজের সুবোধ রাখাল বালক , গোপিনীদের সাথে যমুনা তীরে লীলায় বেড়িয়েছেন। অথচ , মুখে চোখে তার এক লড়াকু অভিব্যক্তি ঝরে ঝরে পড়ছে। যেন সে , নিজের ভালোবাসাকে প্রমাণ করার জন্য এক মরণপণ যুদ্ধ লড়ছে। (এই আন্তরিকতাই ,পরীক্ষার খাতায় দেখালে ছেলেটি হয়তো পরীক্ষায় ফার্স্ট হতে পারতো।)
মেয়েটির মুখমণ্ডলেও , তারিয়ে তারিয়ে উপভোগ করার প্রশান্তি। ছেলেটির বা মেয়েটির মায়ের দিকে এবার ক্যামেরা ফোকাস করুন। দেখবেন, তিনি বেশ নিশ্চিন্তেই আছেন। কারণ তিনি নিশ্চিত জানেন যে , তার সন্তানের ওপর স্কুলের বা কলেজের পুজোর ,সব দায়িত্ব দেয়া রয়েছে। তাই মায়েরাও আর ছেলেমেয়েদের ফোন করে বিরক্ত করেন না। ছেলেটির মা বড়োজোর এক আধ বার খোঁজ নেন আদরের বংশধর খেয়েছেন কিনা।
সোনা বাছাটি, বিরক্ত হলেও মুখে প্রকাশ করেন না। বলেন ,"না মা ,একটু পরেই খাবো । এখন ব্যস্ত আছি। তুমি রাখো।" মায়ের চোখের সামনে মুহূর্তে ছেলের ব্যস্ততার আর দায়িত্বজ্ঞানের ,একটা শশব্যস্ত ছবি ভেসে ওঠে। ব্যস্ত ছেলেকে তিনি আর ডিসটার্ব করতে চান না। গর্বিত মা শুধু পাশের জানলার কাকিমাকে বলেন ," ছেলেটা ঠিক বাবার মতো হয়েছ ওর বাবাও তো মাঠের দূর্গা পুজোর সব দায়িত্ব
......."।
এবার ,ছেলেটির দায়িত্বজ্ঞানের ছবিটা একবার মনে করার চেষ্টা করুন ,দেখুন ,মেয়েটির রোদ লাগবে ,তাই ছেলেটি হাত দিয়ে রোদ আগলে রেখেছে।
ছেলেটির মনে মনে ইচ্ছে হচ্ছে, তিনি ,আর তার তিনি, একটু নির্জন জায়গায় গা ঘেঁসাঘেসি করে একটু ইন্টুমিন্টু করতে করতে হাঁটবেন । অথচ মেয়েটি , লোক চক্ষুর বাইরে যেতে ভরসা পাচ্ছে না। অগত্যা ছেলেটি , মেয়েটিকে আগলে আগলে ভিড় এর মধ্যে ডজ করতে করতে এগিয়ে যাচ্ছেন, যাতে আশপাশের অন্য কোনো পথচারী ফাউল না করে ।
না খাউংগা না খানে দুঙ্গা , এই রকম একটা ভাব |
আপাতত কনুই অব্দি ছেলেটার হাত ওপর নিচ করছে। তার ওপরে, মেয়েটি বগল দিয়ে লক্ষণরেখা টেনে রেখেছে।
ছেলেটির ইচ্ছে হয় ,সে মেয়েটিকে বলবে ,"আজ তোমাকে ‘চ’ দিয়ে শুরু একটা জিনিস খাওয়াবো।"
মেয়েটি হয়তো সবিস্ময়ে জিজ্ঞেস করবে," কি গো ? চাউমিন ?"
কি হ্যাংলা মেয়ে রে বাবা। খাওয়ার আইটেম ছাড়া কিচ্ছু ভাবতেই পারে না ? রোমান্স বলে কি কিচ্ছু নেই? মনের ভাব মনেই চেপে একটা দুষ্ট দুষ্ট ভাব করে ছেলেটি বলবে,"দেখতেই পাবে। "
সাবধানের মার নেই ,মেয়েটি আর ঝুঁকি নেবে না, বলবে ," জানো তো, একবার সরস্বতী পুজোয়, একটা ছেলে আমায় চুমু খেতে এসেছিলো। আমি তো তাকে এক চড় মেরে দিয়েছিলাম " ছেলেটি ঢোঁক গিলে নেবে । ভাগ্গিস সে পুরোটা বলে ফেলেনি ।
ছেলেটি এবার ডিফেন্সিভ খেলার চেষ্টা করবে-
"ওহ ,আমার আগেও তোমার বয়ফ্রেইন্ড ছিল নাকি ?" তার কান এখন নেতিবাচক একটা উত্তরের অপেক্ষায় উদগ্রীব।
মেয়েটি কিন্তু কোনো উত্তর দেবে না। মনে মনে শুধু সংখ্যা গুনবে । কয়জনের নামই বা সে বলবে ? কাঁধ থেকে বিস্ময়সূচক চিহ্ন ঝুলিয়ে ,সে শুধু একবার অভিমানী চোখে ছেলেটির দিকে তাকাবে। ব্যাস কেল্লা ফতে...
প্রশ্নটা করার জন্য, এবার ছেলেটির মন অনুশোচনায় ভরে যাবে। ছেলেটির একবার ও মনে পড়বে না সেই আপ্তবাক্য " মৌন্যতা সম্মতির লক্ষণ । "
অপরাধীর মতো সে বলে উঠবে "সরি । " ওরা এগিয়ে যাবে , প্রসঙ্গটা আর এগোবে না।
অতীতের পরিসংখ্যান নিয়ে ছেলেটিই বা কী করবে ? তার গার্লফ্রেইন্ডের সংখ্যাও তো কম নয়। তার চেয়ে এই মুহূর্তটাই সত্যি হোক জীবনে।
একটু পরে ,স্কুলের মাঠে বসে” খিচুড়ি “আর “চাটনি” খেতে খেতে মেয়েটি ও ভাববে ,”চ” দিয়ে জিনিস বলতে ছেলেটি নিশ্চয় এই চাটনির কথাই বলেছিলো। বেচারা….
অতীতের পরিসংখ্যান নিয়ে ছেলেটিই বা কী করবে ? তার গার্লফ্রেইন্ডের সংখ্যাও তো কম নয়। তার চেয়ে এই মুহূর্তটাই সত্যি হোক জীবনে।
একটু পরে ,স্কুলের মাঠে বসে” খিচুড়ি “আর “চাটনি” খেতে খেতে মেয়েটি ও ভাববে ,”চ” দিয়ে জিনিস বলতে ছেলেটি নিশ্চয় এই চাটনির কথাই বলেছিলো। বেচারা….
ছেলেটি তখন খিচুড়ি হাতে নিয়ে ভাববে, সে কি কোনো অফেন্সিভ প্রশ্ন করে ফেললো ? এই কেসটাও কেঁচে যাবে না তো ? কথা না বাড়িয়ে, স্কুলে ,বাকি সকলের সঙ্গে সেই কাগজের প্লেটে ,চির অপছন্দের খিচুড়ি হাসতে হাসতে পেটে চালান করে দেবে সে।
এসব তো গেলো কল্পনার কথা । বাস্তবেও কিন্তু সরস্বতী পুজোয় , যেসব টুকরো প্রেমের জন্ম হয় ,তার আয়ুষ্কাল সাধারণত লম্বা হয় না। ল্যাবরেটরিতে যদি এগুলোর কেমিকাল এনালাইসিস করা যায় তবে দেখা যাবে যে এতেও তিনভাগ জল আর একভাগ একভাগ মাটি থাকে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ,এই জল বাষ্পীভূত হলে ,সরকার পক্ষ, একে উড়ো খৈ গোবিন্দায় নমো বলে উড়িয়ে ,এক মহান দার্শনিক হয়ে ওঠেন। বাদী পক্ষে, প্রেম বেশি দ্রবীভূত হওয়ার কারণে, জমা জল ,বৃষ্টি হয়ে ঝরে পরে |
বড়ে বড়ে শহর মে এইসি ছোটি ছোটি বাতে হোতি রেহেতি হায় সিনিওরীটা।
যদিও ব্যাপারটা খানিকটা মশা তাড়ানোর মতো । মশাকে যেমন বহু কসরত করেও বাগে আনতে ব্যর্থ হলে নিজের গালেই বেশ কয়েকটা চড় থাপ্পড় হজম করতে হয় । তারপর এক্কেবারে হাল ছেড়ে দিলে , মন বলে ওঠে, যে উড়তে চায় তাকে উড়তে দেয়াই ভালো। যদি না ফিরে আসে তবে সে কোনোদিনই তোমার জন্য ছিল না। এই বলে মন সাধারণত, মশারি টাঙিয়ে নেয়।
তবে শুধু সরস্বতী পুজোয় বা বলি কেন ,প্রতিটা দিনই তো জনসংখ্যার মতো নিত্য নতুন কত্তো প্রেমের জন্ম হয় । যা জন্মায় তার মৃত্যুও তো অবশম্ভাবী। এটাই নিত্য সত্য। মাঝে শুধু কয়েকদিন জীবন মঞ্চে ,প্রেম নাট্যের অভিনয় আর মনের মধ্যে লাডডু ফোটা । তারপর যথা নিয়মে একদিন পর্দা পড়বে-ই পড়বে । আবার পরের শো এর টিকিট বিক্রি হবে ।
দার্শনিকেরা বলেন প্রেম নাকি চাইনিজ প্রোডাক্ট ,কোনো গ্যারান্টি বা ওয়ারেন্টি থাকে না।
তবুও মন ,কেন যে সারাক্ষণ এরকম প্রেম প্রেম করে তার কোনো বিজ্ঞান সম্মত ব্যাখ্যা এখনো আবিষ্কার হয়নি বলেই জানি। অবশ্য পৃথিবীর বহু কোণেই তো বিজ্ঞান এখনো পৌঁছয় নি। এটাও হয়তো সেরকম।
আমাদের বিশু পাগলের ঠাকুমার যুক্তিটা তবু কিছুটা বিজ্ঞান সম্মত বলে মনে হয়েছে। তিনি বলতেন ,"কুঁজোরও তো চিৎ হয়ে শুতে ইচ্ছে হয়। "
একবার বিজ্ঞান নিয়ে স্নাতকোত্তর করা দুই ছাত্র ছাত্রীকে এক নিরীহ বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে শুনেছিলাম ছেলেটি জিজ্ঞেস করেছিল , "শি শি শব্দ করলে হিসি পায় কেন বলতো ?"
মেয়েটি সলজ্জ কন্ঠে বলেছিলো ," জানিনা; যা -, অসভ্য একটা " বুঝলাম, এটাও একটা আইটেম, যেটা বিজ্ঞানের সিলেবাসে ছিল না। এমন না জানি আরও কত বিষয় আছে ।
আসলে এই প্রেমে পড়া ,কষ্ট পাওয়া, আবার প্রেমে পড়া ,এগুলো সব জীবনচক্রের ফের ছাড়া কিছু নয়। এই যে আমরা তেলেভাজা ,ফুচকা ইত্যাদি ইত্যাদি খাই , হাতের জল শুকোয় না ,তারপর কয়েকদিন কাঁচকলার সিদ্ধ ঝোল খাই,তারপর আবার তেলেভাজা ,ফুচকা ইত্যাদি । এই আবর্তটাই জীবনচক্র।
অথচ এই খুচরো প্রেমেও পরিশ্রম আর খরচ দুটোই আছে কিন্তু । শুধু দেখলে হবে ন। প্রেমিকার মন রাখতে, আর মানভঞ্জন করতে কোনো কোনো সময়ে তো কালঘাম ছুটে যায়। তাৎক্ষণিক মন রাখা কথা বানাও রে , গিফট কেনো রে , খাওয়া খরচ ,রাহা খরচ ,গাদা গাদা ফোনের ,ইন্টারনেটের বিলের খরচ ,বাড়িতে, বানিয়ে বানিয়ে ঝুড়ি ঝুড়ি মিথ্যে বলার খরচ,ইত্যাদি ইত্যাদি ইত্যাদি।
মাঝে মাঝে তো এত্তো সময় লাগে ,এত্তো তোলা দিতে হয় ,যে ধৈর্য হারিয়ে যায়। তবু লেগে থাকতে হয়। মনে মনে দাঁত কিড়মিড় করে বলতে হয় ," আজকের দিন তোর ,আমার ও দিন আসবে " সে দিন ও যে আসে না তা নয়। কারো কারো খুব তাড়াতাড়িই আসে কারো বা একটু দেরিতে। তবে আসেই। ভগবান তো কারো একার হয়না তবে রাগ কমাবার এক অভিনব বুদ্ধি দেখেছিলাম আমার এক ছাত্রের । ঘন্টা খানেক ধরে চেষ্টার পর সেও ক্লান্ত। মেয়েটি ফুঁপিয়েই চলেছে। ছেলেটি জলের বোতলটা এগিয়ে দিলো। নকল ফোঁপাতে ফোঁপাতে মেয়েটিরও গলা শুকিয়ে কাঠ সে বোতলটা প্রায় ছিনিয়েই নিল। কিন্তু একি ? ছিপিটা তো খোলাই যাচ্ছে না এতো টাইট। এদিকে ,তেষ্টায় ছাতি ফেটে যাবার উপক্রম খানিকটা ব্যর্থ চেষ্টার পর মেয়েটিকে , সেই ছেলেটির সাহায্যের জন্যই হাত বাড়াতে হলো। আঙ্গুল ধরতে দিলে লোকে হাত ধরবেই। এটাই নিয়ম। ব্যাস ছেলেটিও সুযোগ পেয়ে ব্যাটে বলে ছক্কা মেরে দিলো।
ঐ যে কথায় বলে না ভালোবাসা প্রমাণের জন্য তাজমহল বানানোর দরকার নেই , বৌয়ের এঁটো বাসন মেজে দিলেও হবে। এই ফর্মুলাটাও অনেকটা সেইরকমই আর যার কিছু নেই তার হাতে অপ্রতুল সময় থাকলেই যথেষ্ট। অতীত চলে গেছে ,ভবিষ্যৎ কেই বা দেখেছে , অতএব বর্তমানকে নিয়ে চিন্তা করাই প্রেমের স্বাস্থ্যের পক্ষে ভালো । সময় আসবে-যাবে ,কিন্তু সময়ের কাছ থেকে যেটুকু বাগিয়ে নেয়া যায় সেটাই লাভ। অভিযোগ করে সময় নষ্ট না করাই ভালো। সত্যিকারের প্রেমিক সময় নষ্ট না করে কাজে লাগায়।
তবে খেয়াল রাখা ভালো যে একসাথে একাধিক প্রেম না করাই ভালো। দুহাতের তালুতে যতটুকু ফল ধরে ততটুকুই ভালো করে জলে ধোয়া যায়। অতিরিক্ত হয়ে গেলে অনেকগুলো ফলই হাত ফস্কে পরে যেতে পারে। সাধু সাবধান।
Comments
Lekhok ke Dhanbad.
অতীতের ফেলে আসার আর ও ভালো নতুনত্ব গল্পের জন্যে অপেক্ষায় রইলাম, ভালো থাকবেন।