তৃতীয়—মাস-সংক্রান্ত
এতেল আদনান ১৯২৫ সালে লেবাননের বৈরুত শহরের জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর মায়ের স্মুর্ণার একজন গ্রিক অর্থডক্স এবং তাঁর পিতা অটোমান সিরিয়ার দামেস্কে জন্মগ্রহণকারী একজন মুসলিম-তুর্কি ছিলেন। তাঁর পিতা ধনী পরিবার থেকে এসেছিলেন; তিনি সামরিক একাডেমিতে একজন শীর্ষ কর্মকর্তা ও মোস্তফা কামাল আতাতুর্কের প্রাক্তন সহপাঠী ছিলেন। এতেলের মাকে বিয়ে করার আগে, তাঁর পিতা তিন শিশুর পিতা ছিলেন। বিপরীতে, এতেলের মা চরম দারিদ্রের সাথে বেড়ে ওঠেন; তাঁর বাবা-মা প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় স্মুর্ণায় মিলিত হয়, যখন তাঁর বাবা স্মুর্ণা গভর্নর হিসেবে কর্মরত ছিলেন। পরে অটোমান সাম্রাজ্য ভেঙে যায় এবং স্মুর্ণা দখলের সময় আগুনে পুড়ে যায়, আদনানের এতেলের বাবা-মা বৈরুতে চলে যান। যদিও তিনি প্রাথমিকভাবে আরবি ভাষী সমাজে গ্রীক ও তুর্কি ভাষায় কথা বলে বড় হয়েছিলেন, তিনি ফরাসি কনভেন্ট স্কুলে শিক্ষিত হয়েছিলেন এবং তাঁর নিকট ফরাসি সেই ভাষায় পরিণত হয়েছিল যে ভাষায় তাঁর প্রারম্ভিক কাজ প্রথম লেখা হয়। তিনি তাঁর যৌবনে ইংরেজি অধ্যয়ন করেছিলেন, এবং তাঁর পরবর্তী কাজগুলির অধিকাংশই এই ভাষায় লেখা হয়।
আমার লিটল ম্যাগাজিন জীবন
[ এতেল আদনান তাঁর এই স্মৃতিকথাটি
লিখেছেন ২২ সেপ্টেম্বর, ২০১৫ সালে,
ফ্রান্সের পাহৃতে বসে ]
বাংলা ভাষান্তর
সুশোভন রায়চৌধুরী
লিটল ম্যাগাজিন আমার কাছে নদীর উৎসের মতো। বিরাট, বিশালাকার পাহাড়ের গা বেয়ে কোনো খরস্রোতাকে দূর থেকে দেখলে মনে হতে পারে, এতো কিছুই নয়। জল বয়ে চলেছে ওপর থেকে নিচে। হোল্ডারলিনের ' Rhine ' কবিতাটির কথা ভাবুন। শুরুটা কী সুন্দর এক ছোট্টো গর্ত থেকে। লিটল ম্যাগাজিনও ঠিক সেরকমই যার কাজ শুধু কুড়িয়ে চলা, লেখক, কবি বা শিল্পীর সৃষ্টি যা সাহিত্য ও শিল্প হয়ে উঠবে অনেক পরে। আমরা জানি না একটি পত্রিকা কতদিন বাঁচবে। তবু আশা কিন্তু থেকেই যায়। তবে খারাপ লেখা ছাপানোর চেয়ে বন্ধ থাকা অনেক ভালো।
আমার লেখালেখি এই লিটল ম্যাগাজিনকে যাপটে ধরে, সে বেইরুট হোক অথবা নিউ ইয়র্ক। আমার প্রথম লেখা প্রকাশ পেয়েছিল নিউ ইয়র্ক - এর ' দ্য স্মিথ ' এ। পত্রিকাটি পরে বন্ধ হয়ে যায়। যখন ডাকযোগে কোনো লিটল ম্যাগ এসে পৌঁছোয়, মনে হয় যেন সদ্যজাত কোনো শিশু এলো আমার কোলে। লিটল ম্যাগে একটা চার্ম, অননুকরণীয় অ্যাডভেঞ্চার আছে। যত বড়ো হয়, শুরু হয় সম্পাদকীয় পলিসি, গুচ্ছের জটিলতা, তাঁরাও খুঁজতে থাকেন প্রসিদ্ধ নাম। অবশ্য জনপ্রিয়তাই বা আসবে কী করে যদি না একটা জায়গা থেকে শুরু করা যায় ? লিটল ম্যাগাজিন তাই হয়ে ওঠে ঘরের কোণে ভুলে যাওয়া বইয়ের স্তুপের মতো। এমন এক পরিসর যেখানে চোখের পলকে আমরা কতকিছু জানতে ও শিখতে পারি। কুড়ি বছর পর হয়তো দেখছেন, আরে! যে মানুষটার লেখা এতদিন আগে পড়েছিলুম, তিনিই আজ সুপ্রতিষ্ঠিত!
![]() |
Shi'ir — এর কিছু প্রচ্ছদ |
![]() |
সম্পাদক—ইউসুফ আল-খাল |
![]() |
ইউসুফের স্ত্রী শিল্পী হেলেন আল-খাল |
![]() |
Souffles-এর প্রচ্ছদ |
সেই সময়ে আমরা বিশ্বাস করতাম আরব ঐক্যে। আর আমাদের মতোই Souffles সম্পাদক লাবিও চেয়েছিলেন আরব যুক্তরাষ্ট্র। তাঁকে বলেছিলাম, আমরা সরকারের জন্যে অপেক্ষা করবো না, তৈরি করবো নিজেদের মতো করে এক যুক্তরাষ্ট্র। বললুম, খুব তাড়াতাড়ি আমাকে বেইরুট ফিরতে হবে, তবে সেখানে পৌঁছে আপনার Souffles নিয়ে আলোচনা করবো। পরবর্তীতে সিরিয়ান কবি আদোনিসকে তিনি আমন্ত্রণ জানিয়েছেন তাঁর পত্রিকায়। ভালো লাগে, কারণ আমিই তাঁদের মধ্যে তৈরি করেছিলাম সংযোগ। পরে Souffles এর জন্যে আমার Jebu শীর্ষক কবিতার একটা অংশ পাঠিয়েছিলুম। লাবির সঙ্গে আমার বন্ধুত্বে কোনোদিন চিড় ধরেনি।
মরোক্কোতে সেই সময়ে Souffles ভালো প্রভাব ফেলেছিল। ফ্রেঞ্চ- মরোক্কান তরুণ সম্প্রদায়ের প্রায় প্রত্যেকেই লেখালেখি করেছে এই কাগজে। এটিতে রাজনীতিও ছিল পুরো দমে। ফলে সেই সময়ের তরুণ সম্প্রদায় সাহসিকতার পরিচয় দিয়েছে বলেই আমি মনে করি। আমার অন্যতম প্রিয় উত্তর আফ্রিকান কবি মোস্তাফা নিসাবোরি ও তাহার বেন জালুনের কবিতাও প্রকাশিত হয়েছে Souffles এ।
পরবর্তীতে আব্দুল লতিফ লাবি যখন জেলে, আমরা একে অপরকে বহু চিঠি লিখেছি। তাঁর স্ত্রী একবার আমাকে চিঠিতে লেখেন, এঞ্জেলস এর সমগ্র দিয়ে এসেছেন জেলে, লাবি পড়বেন বলে। আমার কাছে দর্শনের বই খুবই কঠিন বলে মনে হয় তাই লাবি কে একবার পাঠিয়েছিলুম রং পেন্সিল আর আঁকার খাতা। লাবি সব সময় বলে, আমাদের বন্ধুত্বের বয়স ঠিক ততটাই যতটা বয়স হবে আমার প্রথম কন্যার।
Comments