কবিতা—জয়াশিস ঘোষ

অলংকরণ-ধান

স্পর্শ

(১)

ছুঁয়োনা আমাকে। বসে থাক বিছানার অন্যপ্রান্তে। মাঝে আগ্নেয়গিরি আসুক। লাভায় লাভায় ভরে যাক আমাদের স্টেশনচত্বর। তোমাকে বিভাজিকা দেব। দেব স্টেশনমাস্টারের হারানো ডায়েরি। সেখানে লেখা থাকবে বসন্তকাল আর ফুল কুড়ানোর কথা। আমাদের মাঝে ভেঙে পড়বে ফ্যাকাশে ডিসেম্বর। বেদুইনের আত্মহত্যার কাহিনি। এসব বলেও আমাকে ভাঙতে পারবে না প্রিয়তমা। বরফ মরে গেলে বিছানা রক্তাক্ত করে পৌঁছে যাব তোমার কাছে।

ততদিন ঘুমের ওষুধে লিখে রাখ আমাদের লুকানো স্নানঘর


(২)

এক মিটার দূরে দাঁড়িয়ে আছে সমুদ্র। আমি তার ঢেউ ভাঙতে পারি না। এসব দিনে পিঠের ওপর বকুলফুল ঝরে।তার টিপটিপ শব্দ শুনি। বিছানা জুড়ে জ্বরের গন্ধ। যেন আদর বাসি হয়ে গেছে। আদর বাসি হলে কি বকুলফুল হয়? আমাদের পাড়ার বকুলগাছটা যেদিন মরে গেল, ঢেউয়ের শব্দ পেয়েছিলাম। যে কথা বলতে পারিনি, এক মিটার দূর থেকে সমুদ্র তাকে নিয়ে গেছে। একরাশ জল ঢেলে আকাশ বলছে —

আজ একটু আমার কাছে থাকবি, প্লিজ!


(৩)

জীবন থেকে কিছু সময় হারিয়ে গেলে কেমন একটা নির্জন জায়গায় হারিয়ে গেছি মনে হয়। একটা সমুদ্র হঠাৎ শান্ত হয়ে গেছে। গোড়ালি ডুবিয়ে বসে আছি। এইসময় একটা ঝিনুক গল্প করতে আসে। তার ভেতরে জমে থাকা অভিমান রোদে ঝলমল করে। আমি এসব দেখতে পাই না। দেখি কীভাবে সে নিজেকে লুকিয়ে রাখছে সমুদ্র থেকে পেছন ফিরে।

ফিরে আসার কথা যারা বলেছিল, তারা ফিরবে না। যেমন ওই সময়টা৷ পড়ে যাওয়ার আগে একটা তীব্র আলো। তারপর অনেকক্ষণ পর সমুদ্রের জল লাগে গায়ে। নোনা গন্ধ। নাবিকের দেখা নেই। মেসেজ করবে বলে ভুলে গেছে মনে হয়…


(৪)

আমাদের দুজনের মধ্যে বহুকাল কথা নেই। আমরা ঠোঁট নাড়ি কেবল। পায়রাদের জ্বর এলে মেঘ থেমে যায়। আমাদের কুয়াশাজন্মের অসমাপ্ত চুম্বন গলা টিপে ধরে। আর তখনই একটা অদ্ভুত কামনা পায়, জানো? পা টিপে টিপে চলে যাই শিউলিগাছের পাশে। দেখি পিঁপড়েরা সারি সারি বয়ে চলেছে গাছের মৃতদেহ।

এসবের থেকে অনেক দূরে ঘুমিয়ে আছ তুমি। তোমার ঘরে ছড়ানো রয়েছে পালক ও বেদনা। আমাদের শোকসভায় একসাথে কবিতাপাঠ করবো দুজনে। সেদিন পায়রাদের জ্বর সেরে যাবে, দেখো...



 

Comments

Chandrani said…
প্রত্যেকটি অনন্য , অসাধারণ

আরও পড়ুন

কবিতা সিরিজ

বি শে ষ সা ক্ষা ত কা র : শ্রী সন্দীপ দত্ত

কবিতা

কবিতা