কবিতা সিরিজ
গাইঘাটা সভ্যতা
কবি: শান্তিব্রত বারিক
(১)
এলো চুলের ঝরনা মেলে
বসেছ রিকশার ওপর
আর চলে যাচ্ছো সাঁকলোবনি হাটের দিকে
জারুল গাছের ডাল নুয়ে পড়েছে
ইচ্ছেমতো ছুঁতে পারছি না মাথা
অঙ্কে ভালো মেয়ে তুমি
ঠিক চিনেছ ক্লোরোফিল মোহ
চেয়ার সৌখিন আনন্দ নিয়ে
ফিরে আসছি একা,
বারিদা আঞ্চলিক স্কুলের পাশ দিয়ে...
(২)
ইচ্ছে করে সন্ধ্যের আঁধার হয়ে
পৌঁছে যাই তোমার সাঁওতাল গ্ৰামে
লুকিয়ে পড়ি স্তন গোপন ছায়ায়
তারপর চুলের বিনুনি খুলে
পড়ে নিই খাজুরাহো সিলেবাস
গলা বেয়ে নেমে যাবে শিহরণ
আদরিণী বুকে উচ্চমাত্রার ভূমিকম্প
চোখের পাড়ায় বৃষ্টিপাত
প্রতীক্ষার সংসার সাজিয়ে রেখেছে
না বলা সহজ কথাগুলো ...
(৩)
সামান্তরিকের ঘরে শূন্য
দু’পাশে দু'টো ক্রশ
ওপর নীচ দুই ঘরে শূন্য বসিয়ে
তুমি জিতে নাও বাজী
আমি অপেক্ষায় থাকি
যদি কখনও ভুলবশত এসে
খেলে নাও আর এক হাত
জিতে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে
ধাক্কা খেতে গিয়ে উঁচু হয় বুক
পুড়ে যায় আদিম আস্তরণ ...
(৪)
ফাটল চুঁইয়ে নেমে যায় জল
গাছের শিকড়ে অমৃত ঘ্রাণ
মাটির ফসল আর ফসলের মাটি
ঘিরে থাকে নীল শূন্যতা
তোমার চোখময় স্বপ্নের হেঁশেল
ঈশ্বরের খিদে আঙুরের মতো ঝুলে আছে
কালো ঠোঁটে হাসির জ্যোৎস্না
তবু দু’পা এগিয়ে ছোঁয়া যায় না
কপালে হাত রেখে
গরম জ্বর অনুভব করা যায় না...
(৫)
বৃষ্টি থেমে গেছে অনেকক্ষণ
ছপছপ জলে ভিজে গেছে
মায়ের লাগানো লেবুগাছ
ফোঁটা ফোঁটা মুক্তো ঝুলে আছে
শিউলি পাতার ঠোঁট থেকে
দুপুরের ঘুম বিছানায় রেখে
তুমি যে কখন এসেছ বাইরে
টের পাইনি, ফিরে গিয়ে দেখি -
জামার পকেটে চড়ুইভাতি সেরে নিচ্ছে
একজোড়া নূপুরের আওয়াজ...
(৬)
সাত সকালে তোমাকে নিয়ে গেল ট্রেন
খুব দূর থেকে হাত নাড়তে নাড়তে
হাওয়ায় মিলিয়ে যাওয়ার পর
আমার চোখে শ্রাবণী বর্ষা
তুমিও অনেক কষ্টে সামলে রেখেছিলে
দিনের মরশুমী বিরহ
আত্মগত ডানার চেনা ঢেউ
তবু দুঃস্বপ্নের শীতলতা ছুঁতে চায়
দূরত্বের দিকে এগিয়ে গিয়ে দেখি
দুঃখের কাঁপনে গজিয়ে ওঠে শ্বাসমূল
(৭)
গভীর রাত, ঘুমিয়ে পড়েছ।
তোমার আর বোনের মাঝখানে বালিশ
আমার অনাদি চোখে ঘুম নেই
পাগলামী করছে শৈবাল নরম ইচ্ছেরা
মেসেজের ইনবক্সে অদৃশ্য কথা
ঝিঁ ঝিঁ পোকার ভয়ে চুপ করে থাকে
গোপন তৃষ্ণায় উড়ে বেড়াও নিঝুম
ঘুমন্ত বিবেকের মতো তুমি ঘুমাও
আমি জেগে আছি অপেক্ষায়
ইশারা পেলে শিউরে উঠবো প্রবল ...
(৮)
এইমাত্র নেমে গেলে অটো থেকে
ফাঁকা সিটের পাশে বসে
বিদায় দিলাম গোলাপী কুর্তির নাভি
কিছুক্ষণ আগেও ছায়ার কাছে বসে
ভিজে যাচ্ছিলাম বোধের রক্তপাতে
মানচিত্রের গুহায় রোপণের সংলাপ
তোমার লোমকূপ কামড়ে ধরেছে আঘাত
আমার আঙুল পাহারা দিচ্ছে ফর্সা ক্ষত
কদমতলার মোড়ে রিকশার অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে
তুমি হয়তো এইসবই ভাবছো ...
(৯)
শেষবার তুমি চলে যাওয়ার পর
কষ্ট পেয়ে কেঁদেছিলাম বোকার মতো
তখন বুঝিনি আমাকে ফেলে গেছ
কেলেঘাই ঘেরা আদিম স্নানঘরে
যার বালিজ ঘাসে মুখ ডুবিয়ে
খুঁজে পাই নিরালা এক ঠোঁট।
শাড়ি চেনার কৌশল চেয়ে তাকাই
হাড়বিহীন চাঁদের ধোঁয়ায়
পাতালের শক্ত শামুকে হাত রাখি
নিঃশ্বাসের জলে স্থাপিত হয়
কাঙ্খিত সিফিলিস উদ্যান ...
কবি পরিচিতি :
জন্ম পূর্ব মেদিনীপুর জেলার যশীপুর গ্ৰামে। বলার চেয়ে লিখতে পছন্দ করেন বেশি। নিজেকে সভ্যতার আগুনে পুড়িয়ে নতুন করে আবিষ্কার করার কাজে লেখালেখির সূচনা। কবির নিজস্ব কোনো পরিচিতি নেই, সমস্ত পরিচয় লুকিয়ে আছে লেখার ভেতরে।
Comments