কবিতাপাক্ষিক ও আমি—জ্যোতির্ময় মুখোপাধ্যায়

 



দিনটা ছিল ২৪ শে বৈশাখ, ১৪০০ বঙ্গাব্দ (৭ই মে ১৯৯৩)। স্থান, কালিঘাট মিলন সংঘ সভাগৃহ। প্রকাশিত হলো কবিতাপাক্ষিক। প্রকাশ করলেন ফাদার গাঁস্ত রোবের্জ। যদিও প্রথম সংখ্যার সম্পাদকীয় থেকে জানতে পারছি, কবিতাপাক্ষিক প্রকাশ করার কথা ছিল সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের। কবিতাপাক্ষিকের পরিকল্পনা, প্রকাশ ও পরবর্তীতে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের একটা বিশেষ ভূমিকা ছিল। কিন্তু তাঁর বিলম্বজনিত কারণে নির্ধারিত সময়ের আধঘন্টা পরে ৬ টা ৩০ মিনিটে ফাদার গাঁস্ত রোবের্জ কবিতাপাক্ষিকের কপি তুলে দেন প্রণবেন্দু দাশগুপ্ত, ডাঃ শ্যামলেন্দু মুখোপাধ্যায় ও নীতা দাশগুপ্তকে। কৃষ্ণা বসু পুষ্পস্তবক দিয়ে বরণ করেন ফাদার গাঁস্ত রোবের্জ, প্রণবেন্দু দাশগুপ্ত, পবিত্র মুখোপাধ্যায় ও অজিত বন্দ্যোপাধ্যায়কে। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় পরে উপস্থিত হওয়ায় তাঁকে পুষ্পস্তবক দেন প্রভাত চৌধুরী স্বয়ং। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় কবিতাপাক্ষিক প্রকাশের প্রয়োজনীয়তা এবং পত্রিকা সম্পাদনা বিষয়ে তাঁর অভিজ্ঞতা ও মতামত ব্যক্ত করেন। কবিতা পাঠ করেন সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, প্রণবেন্দু দাশগুপ্ত, পবিত্র মুখোপাধ্যায়, কাননকুমার ভৌমিক, গোবিন্দ ভট্টাচার্য, নমিতা চৌধুরী, সমীরণ মজুমদার, প্রশান্ত গুহ মজুমদার, সত্যসাধন চেল, গৌতম চট্টোপাধ্যায়, অরূপ পান্তী, সোমনাথ রায়, নাসের হোসেন, রমেন আচার্য, সুব্রত চেল, মানসকুমার চিনি, দিলীপ ভৌমিক, সৌমিত বসু, দেবব্রত চট্টোপাধ্যায়, তমিস্রাজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়, গোপাল আচার্য, শান্তিময় মুখোপাধ্যায়, প্রভাত চৌধুরী প্রমুখ। ছড়া বলেন দীপ মুখোপাধ্যায়। গল্পকার বলরাম বসাক, প্রলয় শূর এবং স্বপন সেন, রক্তকরবীর সম্পাদক প্রদীপ ভট্টাচার্য অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। সংগীত পরিবেশন করেন স্বপন রায় ও সুদক্ষিণা চৌধুরী। সমগ্র অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন প্রণবেন্দু দাশগুপ্ত।


এইসব যখন ঘটছে, তখন প্রায় ১০০ কিলোমিটার দূরে একটি ছেলে, বয়স প্রায় আট, সম্ভবত দিদির হাত ধরে পড়তে গিয়েছিল নিখিল মাস্টারের বাড়ি। এবং সে প্রায় ৩০ বছর জানতে পারবে দেশিক হাজরা তাঁর পত্রিকার জন্য এমন কিছু লিখতে বলবে, যা লেখার যোগ্যতা তার নেই। সে শেষ দলের শেষ 'পাখি' মাত্র, শুধু উড়ে যায়নি, ফেলে যায়নি পালক। কবিতাপাক্ষিক তার কাছে এখনও ইতিহাস, ব্যক্তিগত অনুভব ও যাপন নয়। যেটুকু জানা, পড়ে ও শুনে। সম্পাদক দেশিক হাজরা জানাল, তুমি শুধু সেই সময়টুকুই লেখো, যাতে তুমি আছো। নিশ্চিন্ত হলো সে। পেল একটা নতুন শিরোনাম, 'কবিতাপাক্ষিক ও আমি'—
লেখালেখি শুরু আমার ২০১৭ সালের প্রথমদিকে। ফেসবুকে। মূলত মেয়েদের লাইক-কমেন্টের লোভে টুকটাক কাব্যচর্চা। ফেসবুক সূত্রেই পরিচয় পার্বতী রায়ের সঙ্গে। সেই আমাকে পৌঁছে দেয় কবিতাপাক্ষিকের দোরগোড়ায়। যুক্ত করে দেয় কবিতাপাক্ষিক হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে। যুক্ত হতেই কিছু কবিতা পোস্ট এবং ঝামেলা শুরু। মুরারি সিংহ জানালেন, পদবীর বানান 'মুখার্জ্জী' লিখো না, লেখো 'মুখার্জি' বা 'মুখোপাধ্যায়'। কেন? আ-হাতেখড়ি লিখে এসেছি, ভুল কীসের? ক্রমে আমার কবিতা নিয়ে অনেকের বিরূপ মন্তব্য। এবং আমারও তাঁদের ও প্রভাত চৌধুরীর কবিতা নিয়ে বিরূপ মন্তব্যে পরিবেশ বেশ অস্বস্তিকর। যেকোনও সময় আমাকে গ্রুপ থেকে বার করে দেওয়া হবে। সে সময় প্রভাত চৌধুরী স্মার্টফোন ব্যবহার করতেন না, তাই হোয়াটসঅ্যাপেও নেই। তাঁর কাছেই দুটো কবিতা পাঠালাম কবিতাপাক্ষিক দপ্তরে। আশ্চর্য! ১৫ জুলাই ২০১৭ আমার প্রথম কবিতা প্রকাশিত হলো কবিতাপাক্ষিকে। ধীরে ধীরে সহজ হতে থাকল কবিতাপাক্ষিকের সঙ্গে আমার সম্পর্ক। একদিন ফোন এল, 'আমি প্রভাত চৌধুরী বলছি, তোমার সঙ্গে দেখা করতে চাই।' ২২ নভেম্বর, ২০১৭ প্রভাত চৌধুরীর সঙ্গে আমার প্রথম দেখা গুসকরা স্টেশনে। প্রথম আলাপেই তিনি জয় করে নিলেন আমাকে।

ধীরে ধীরে কবিতাপাক্ষিক দপ্তরে যাতায়াত শুরু। কথা, গল্প, আড্ডা, আলোচনা, তর্ক। আমাকে সম্পাদক মণ্ডলীতে গুঁজে দিলেন এপ্রিল ২০১৯ সংখ্যা থেকে, সেই সংখ্যা থেকেই কবিতাপাক্ষিক পুনরায় 'আবার প্রতিমাসে' হল। এই সংখ্যার এডিটোরিয়াল নোটে যুক্তি হিসাবে লিখলেন 'স্নেহ অতি বিষম বস্তু'। আমার সঙ্গে একইসঙ্গে সম্পাদকমন্ডলীতে যুক্ত হলেন সবর্ণা দে ও তথাগত দত্ত।



নাসেরদার মৃত্যুর পরেই মূলত কবিতাপাক্ষিকের দায়িত্ব এসে পড়ে। যদিও অনেক আগে থেকেই প্রভাতজ্যেঠু সম্পাদনার ব্যাপারে টুকটাক অনেক কিছু জানাতেন, বোঝাতেন। প্রাথমিকভাবে লেখা বাছাই করতে দিতেন, কেন কোনও লেখা বাছলাম বা বাতিল করলাম, বলতে বলতেন। যদিও এসব তিনি কোনও নির্দিষ্ট উদ্দেশ্য নিয়ে নিশ্চিত করেননি, কারণ প্রভাতজ্যেঠুর পর নাসেরদাই এডিটোরিয়াল নোট লিখবেন, এটাই স্বাভাবিক ছিল। কিন্তু নাসেরদার মৃত্যু সবকিছু ওলোটপালট করে দিল, তার সঙ্গে প্রভাতজ্যেঠুর অসুস্থতা।

কবিতাপাক্ষিক কি আর প্রকাশিত হবে? না, বন্ধ করে দেওয়া হবে? — এটাই ছিল সেইসময় মূল প্রশ্ন। কারণ নাসেরদার তো কোনও বিকল্প হয় না। আর প্রভাতজ্যেঠুর পক্ষেও অসুস্থ শরীরে কবিতাপাক্ষিক চালিয়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব ছিল না। সিনিয়ররা আলোচনা করে সম্ভবত সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন কবিতাপাক্ষিককে অনলাইনে নিয়ে আসার। তাহলে হয়তো এতদূর থেকে আমি কাজটা করতে পারব। অনলাইন ম্যাগাজিন করার একটা অভিজ্ঞতা আমার ছিল এবং প্রিন্টেড ম্যাগাজিনের বিরুদ্ধে অনলাইন ম্যাগাজিনের প্রতিও ছিল আমার পক্ষপাতিত্ব।

প্রভাত চৌধুরী ফোন করলেন, বললেন, কবিতাপাক্ষিককে হয় অনলাইনে নিয়ে যেতে হবে, না হলে বন্ধ করে দিতে হবে, তোমার কী মত? আমি বললাম, তাহলে বন্ধই হোক। কবিতাপাক্ষিক অনলাইনে গেলে তার ডিগনিটি হারাবে,  হারাবে তার এসেন্স। আরও কিছু আলোচনা হলো, বুঝতে পারছিলাম উনি চাইছেন না কবিতাপাক্ষিক বন্ধ হোক। আমার যুক্তি ছিল, বন্ধ হলেও কবিতাপাক্ষিক তার মর্যাদা নিয়েই থেকে যাবে চিরদিন। বরঞ্চ যা হোক করে পত্রিকা প্রকাশ করে কবিতাপাক্ষিকের গুরুত্ব কমানোর চেয়ে সেটা অনেক ভালো। তাছাড়া নাসেরদা নেই, আপনি অসুস্থ, সিনিয়ররা প্রত্যেকেই দূরে, কীভাবে কবিতাপাক্ষিকের স্পিরিট বজায় থাকবে? উনি শেষ চেষ্টা করলেন এই বলে যে, তুমি অনলাইনে শুধু নতুনদের লেখা রাখবে, প্রতি সপ্তাহে না হোক মাসে ছোটো করে বার করবে। বিশেষ দু-একটা সংখ্যা একটু বড়ো করে হবে, তখন সিনিয়ররা প্রত্যেকেই সাহায্য করবে। আমি রাজি হতে পারলাম না। অবশেষে ঠিক হলো, শেষ একটা সংখ্যা প্রকাশ করে কবিতাপাক্ষিক বন্ধ করে দেওয়া হবে। উনি বললেন, তুমি যত তাড়াতাড়ি সম্ভব কলকাতা এসো। নাসের একটা সংখ্যার ম্যাটার প্রায় রেডি করেই গেছে, ওটা কমপ্লিট করে পত্রিকাটা প্রকাশ করে দাও।

সম্ভবত দু-তিনদিন পর কোলকাতা গেলাম। আমার সঙ্গে সেদিন ছিলেন রাহুল গঙ্গোপাধ্যায় ও হারাধন চৌধুরী। রাহুলদা চায়নি কবিতাপাক্ষিক বন্ধ হোক আর হারাধনদা পত্রিকা প্রকাশের ব্যাপারে সবরকম সহযোগিতা করতে প্রস্তুত ছিলেন। পটলডাঙা দপ্তরে ঢুকে দেখলাম প্রভাতজ্যেঠু চোখের উপর হাত রেখে শুয়ে আছেন। আমাকে ঘরে ঢুকতে দেখেও উঠলেন না। এমনটা আগে কখনও হয়নি, গেটে নক করার আগেই উনি পায়ের শব্দ পেয়ে জ্যেঠুমাকে চেঁচিয়ে বলতেন, জ্যোতি এসেছে, গেট খুলে দাও। জ্যেঠুমাকে জিজ্ঞাসা করলাম, কী হয়েছে? জ্যেঠুমা বললেন, কবিতাপাক্ষিক বন্ধ হয়ে যাবে শুনে সেদিন থেকে উঠছে না, ভালো করে খাচ্ছে না, ঘুমাচ্ছে না। জানি না কেন, আমার মুখ দিয়ে বেরিয়ে গেল, 'জ্যেঠু, কবিতাপাক্ষিক বন্ধ হবে না।' — উনি ধীরে ধীরে উঠে বসলেন, বললেন সত্যি বলছ? — হ্যাঁ। রাহুলদা ও হারাধনদাও সায় দিলেন। পরবর্তী প্রায় ২ ঘন্টা ধরে উনি আমাদের নিয়ে পরিকল্পনা করলেন, খুঁটিনাটি বিষয় বোঝালেন, সেদিনই ঠিক হলো এবার মেইলে লেখা নেওয়া হবে। তারপরেও দপ্তরে যে সমস্ত লেখা আসবে সেগুলো আমি মাসে একবার কোলকাতা এসে দেখব। খুব সম্ভবত সেদিনই কবিতাপাক্ষিকের নতুন মেইল আইডি ক্রিয়েট করা হলো, ফেসবুক পেইজ খুললাম সেদিন রাতে হোটেলে ফিরে।

নাসেরদার প্রায় রেডি করে যাওয়া ম্যাটার নিয়ে প্রকাশিত হলো মাঘ, ১৪২৭ সংখ্যা (৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২১)। এই সংখ্যাটির এডিটোরিয়াল নোটেই প্রভাত চৌধুরী-কে কবিতাপাক্ষিক বন্ধের ঘোষণা দিতে হতো, কিন্তু তার পরিবর্তে উনি লিখলেন, 'ঘুরে দাঁড়াতে হবে…।'

লকডাউনে কবিতাপাক্ষিক প্রকাশ নিরবিচ্ছিন্ন না হলেও বন্ধ হলো না। প্রতি মুহূর্তে প্রভাতজ্যেঠু অনেক খুঁটিনাটি বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছেন, বুঝিয়ে দিয়েছেন। কিন্তু সেইসময় উনি বারবার অসুস্থ হয়ে পড়তে লাগলেন, এমনও হয়েছে এডিটোরিয়াল নোট উনি নিরূপায় হয়ে ছোট্ট করে লিখে পাঠাচ্ছেন হোয়াটসঅ্যাপে। খুব সম্ভবত বৈশাখ, ১৪২৮ সংখ্যায় এমনটা ঘটেছিল। আমিও সেইসময় মারাত্মক সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগতাম। কিছুতেই নির্দিষ্ট সময়ে প্রতিকা প্রকাশ করতে পারতাম না। সবচেয়ে বড়ো সমস্যাটা হয়েছিল শারদীয়, ২০২১ প্রকাশে। এতদূর থেকে হোয়াটসঅ্যাপে ম্যাটার পাঠানো, প্রুফ চেক, পত্রিকার খুঁটিনাটি দেখতে গিয়ে সমস্যায় পড়লাম বারবার। সমস্যা দুতরফেই, যিনি DTP করছেন, তাঁর পক্ষেও এভাবে কাজ করা কঠিন হয়ে উঠেছিল। তবু সংখ্যাটি প্রকাশিত হলো।

প্রভাত চৌধুরী ফেসবুকে প্রচ্ছদের ছবি পোস্ট করে লিখলেন, 'নাসের হোসেন ও প্রভাত চৌধুরী-র অনুপস্থিতে কবিতাপাক্ষিক শারদীয় ২০২১ সংখ্যার ড্যামি কপি পেলাম।' এডিটোরিয়াল নোটে লিখলেন,

'না, কোনো হা-হুতাশ নেই। আজ শনিবার। ডায়ালিসিস থেকে ফিরে কিছুটা বিশ্রামের পর লিখতে বসেছি এই এডিটোরিয়াল নোট। আমিও মনে করি নাসের হোসেনের থাকা ও না-থাকার মধ্যে একটা বড়ো ফ্যাক্টর কাজ করে। গৌরাঙ্গ মিত্র-র অনুপস্থিতিও একটা ঘটনা। এখন মেনে নিতে হবে — নাসের হোসেন নেই। গৌরাঙ্গ মিত্র নেই। আর এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে গত ফেব্রুয়ারি থেকে আমিও পটলডাঙার দপ্তরে নেই। নিজেকে নিয়ে ঢক্কানিনাদ করার কিছু নেই। কিন্তু একটা সত্য-কে অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই। সেই সত্যটি হল নাসের উইথ কবিতাপাক্ষিক আর নাসের উইদাআউট কবিতাপাক্ষিক-এর মধ্যে যে তুমুল পার্থক্য। কিন্তু এই উইদাআউটের কোনো সমাধান নেই।… তবে একটা সত্যকে লুকিয়ে রাখা যাবে না 'নাসেরের কবিতাপাক্ষিক'-এর সঙ্গে আজকের কবিতাপাক্ষিক এক নয়। পার্থক্য থেকেই যায়। থেকে যাবে। তবু এই পরিবর্তিত, নাসেরের সক্রিয় উপস্থিতির বাইরের এই কবিতাপাক্ষিক-কে মেনে নেওয়া ছাড়া কোনো বিকল্প নেই। 'না' দিয়ে শুরু হওয়া এই নোটটি শেষ করতে চাইছি 'হ্যাঁ' দিয়ে। 'হ্যাঁ' আমরা আছি। এই সংখ্যাটির গায়ে হাত দিয়ে দেখুন, উষ্ণতা টের পাচ্ছেন কিনা! উত্তরটি হবে হ্যাঁ' — প্রভাত চৌধুরী, ৩০.০৯.২০২১।



শারদীয় সংখ্যা, ২০২১ প্রকাশের পরেই জ্যেঠুকে জানালাম এতদূর থেকে এইভাবে কাজ করা প্রায় অসম্ভব হয়ে উঠছে। বিশেষ করে এমন কারও সঙ্গে যিনি এইভাবে হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে কাজ করতে অভ্যস্ত নন। তিনি বললেন, তাহলে কী করবে? আমি বললাম, অন্য কাউকে দেখতে হবে। বললেন, যেটা ভালো হয় করো। সৌমেন চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে কথা হলো। Dtp থেকে প্রেস ও বাইন্ডিং, কবিতাপাক্ষিকের পুরো সিস্টেমটাই চেঞ্জ করে নতুনভাবে শুরু করলাম। বেশ কয়েকমাস এভাবে চলল।

জানুয়ারি হলো নাসেরদার জন্মমাস। ঠিক ছিল, জানুয়ারি (২০২২) সংখ্যায় নাসেরদার শেষ লেখাটি প্রকাশ করা হবে এবং সেইসঙ্গে থাকবে নাসেরদার উপর প্রভাত চৌধুরীর একটা বিশেষ লেখা। এই সময়েই সৌমেনের ল্যাপটপে সমস্যা দেখা দিল, আটকে গেল কাছ। সাময়িক অনিশ্চয়তা দেখা দিল পত্রিকা প্রকাশে। প্রভাতজ্যেঠু বেশ কয়েকবার বললেন, তুমি একবার কলকাতা এসো। আমি জানালাম, পত্রিকা রেডি করে একবারে পত্রিকা নিয়ে যাব। কিন্তু সেই যাওয়া আর হলো না। প্রভাতজ্যেঠু যেদিন শেষবার হসপিটালে যাচ্ছেন, ফোন করলেন, বললেন, 'হসপিটালে যাচ্ছি, লেখাটা ফিরে এসে দেবো, তুমি কি একটু অপেক্ষা করতে পারবে?' — এটাই ছিল তাঁর সঙ্গে আমার শেষ কথা।

জানুয়ারি, ২০২২ সংখ্যাটি প্রকাশিত হলো প্রভাত চৌধুরীর মৃত্যুর পর। এবং বুঝলাম, পত্রিকা ঠিকঠাক চালাতে গেলে নিজেকেই পেজ-মেকিং, টাইপ-সেটিং করতে হবে। ভরসা ইউটিউব। ফেব্রুয়ারি ২০২২ সংখ্যাটা নিজেই করলাম। প্রেস থেকে বাইন্ডিং আবার কবিতাপাক্ষিকের পুরনো সিস্টেমেই ফিরে এলাম।

তারপর থেকে আর খুব একটা আর অসুবিধা হয়নি। যূথিকা চৌধুরী তো আছেনই, তার সঙ্গে প্রভাত চৌধুরীর পুত্র গৌরব চৌধুরী এবং সবর্ণাদি ও উপদেশকমণ্ডলীর পূর্ণ সহযোগিতা ও সমর্থন নিয়ে ধীরে ধীরে হেঁটে চলেছি।








Comments

আরও পড়ুন

কবিতা সিরিজ

বি শে ষ সা ক্ষা ত কা র : শ্রী সন্দীপ দত্ত

কবিতা

কবিতা