গুচ্ছ কবিতা

 



অবন্তিকা এবং জলবৎ জীবন


(১)

অসুখের খয়েরী রাস্তা দিয়ে অবন্তিকা হেঁটে যায়।
পক্ষপাত দুষ্ট শ্লোকের গায়ে
নির্মিত হয় বিন্দু বিন্দু প্রেম। দুই পাশে
নগর গড়ে ওঠে, মানুষ জ্বলে ওঠে,
নিভে যায় স্মৃতির সরণীতে শীত কাল!
পাতা ঝরে। দুঃখজীবি জীবনের মাথায়
নেমে আসে খাদ্য বিপ্লবের কাক!
অবন্তিকা হেঁটে যায় এসবের ভেতর দিয়ে
অনাদিকালের নারীর মতো খোলা চুলে!

ঘোড়া মুখো রাত তাকে অনুসরণ করে যায়
কৃতদাস হয়ে!


(২)

অবন্তিকা মজুমদার ইতিহাসের পাতায়
নিজের মমি খুঁজে পায় রোজ।
ডাল ভাতের সরল ঢেকুর থেকে
স্কুলের ব্ল্যাক বোর্ডে নামিয়ে আনেন হিটলারের
ইহুদী বিদ্বেষ। আর চোখের কোনে
হীরে খন্ডের মতো চিকচিক করে
প্রাচীন প্রণয়ের বিলুপ্ত হ্রদ লিপি!


(৩)

অবন্তিকা ফিরে আসে সান্ধ্য আয়োজনে
ঘর মুখো ঠোঁটে করে
অতীন্দ্রিয় খড়কুটো। বিষাদ বিবরণী।
বিলুপ্ত হাটের মুখে ক্রয় করা
পটোল, আলু, পাঁচ মেশালি আলোচনা!
ঘরে ফিরে আসে
অবন্তিকা। দরজা খুলে ঢুকে যায় অনন্তের শূন্যস্থানে।

ঘর তখন হয়ে যায় আধপোড়া মহানভ!



(৪)

অবন্তিকাকে প্রথম দেখেছিলাম
দারিদ্র্যের সীমারেখার নীচে ঝিলমিলি আলোয়,
রেশন বন্টনের শীর্ষস্থানে দাঁড়ানো মানবী!
কপালে প্রস্তরীভূত টিপে তখনো বেঁচে
আছে গার্হস্থজীবন বিন্যাস। হাতে থলি।
সংসার ঠেলে ঠেলে পার করছে জলমগ্ন চড়া!

তার কেতকী জড়ানো আলতো খোঁপায়
কবিতা গন্ধের খোঁজে, তখনও
যুবক কবিরা মিছিল ছেড়ে বেরিয়ে এলো!



(৫)

আমার মুন্ডুহীন কনিষ্ক জীবনে
অবন্তিকা ছিলো মৃদু বজ্রপাত অথবা
অলৌকিক ভুবনমোহিনী! তার জন্য
রাস্তায় রাস্তায় জমে উঠতো
মানুষের সমাগম, চায়ের দোকানে
বাঙালিরা খুলে ফেলতো ভাগ্যলক্ষী লটারী।
অলস দীঘির জলে ডুবে যাওয়া কিরণ বালিকা
তুলে আনতো গ্রামীণ চিত্রপট।
অবন্তিকা বুটিকের শাড়ী পরে
উড়ে যেতো স্কুল শিক্ষিকা
কবিতার শুনশান ছায়াপথে হকারদের দখল
আর কোলহল জেগে উঠত নরকের মতো!



(৬)

অনেক দিন হলো
অবন্তিকাকে আর তেমনটি দেখিনি ছাতিমছায়ায়।
মৃত্যুর উৎসব শেষে ঘরে ফিরছে শশ্মাণ যাত্রীরা।
একটা মানুষ কেমন করে
জোৎস্না রাত হয়ে যায় মৌন নীলে। কে তার
খবর রাখে!
তবুও অবন্তিকা মজুমদার
নিরলস বেঁচে থাকে, ঘেমে ওঠা কপাল মুছে
পৃথিবীর ঘূর্ণন দেখে!



(৭)

মোবাইল স্ক্রিনে অবন্তিকার ছবি ক্রমশ
প্রাকৃতিক হয়ে আসছে। ঘন পর্ণমোচী হয়ে আসছে,
পাখিরাও উড়ে এসে বাসা বুনছে ডালে ডালে।

ডারউইন তত্ত্ব মেনেই
হারিয়ে গেছে অভিমানের জিরাফ!
আমিও ক্রোমোজোমাল জঁট থেকে
এক এক করে আলাদা করছি সেই সব
উপকূলীয় অঞ্চলের উড়ে যাওয়া দিন গুলো!



(৮)

এভাবেই ভিজতে চাই
যদি তুমি লাল আদাচায়ের পাশে
অবন্তিকা হয়ে দাঁড়াও। কাঁচের সার্সি দিয়ে
গড়িয়ে নামছে সময়। তুমিও আঁচল থেকে
আমায় কবিতা দিচ্ছো গুনে গুনে
অন্নপূর্ণা প্রতিমায় অবন্তিকা ডুবে যায়।
দ্রবীভূত হয় নিথর সম্মোহনে!







Comments

প্রভাত শতপথী said…
কবি রূপক চট্টোপাধ্যায়কে অনেক অনেক শুভেচ্ছা জানাই। খুব সুন্দর লেখা আমাদের উপহার দিয়েছেন।

আরও পড়ুন

“মহানগর” - ধীমান ব্রহ্মচারী | পর্ব ৩

২৩ | ফেব্রুয়ারি সংখ্যা | ২০২৫

তৃতীয়— মাস-সংক্রান্ত

রঙ্গন রায়

কবিতা গুচ্ছ

জুজুতন্ত্রের সমূহ শ্বাপদ এবং হুজ্জতি

সিনেমা-বিষয়ক নিবন্ধ -- জয়দীপ চট্টোপাধ্যায়

একটি কবিতা সিরিজ —

সৌমিক মৈত্র

মনোজ চৌধুরী