কবিতা

 












নিষিদ্ধ কবিতা


১.

বিপন্ন দিন ফুরিয়ে আসছে দ্রুত।
সূর্যতেজ কমছে, কমছে নৈরাশ্য;
অঙ্ক খাতার শেষ পৃষ্ঠায় উঁকি দিচ্ছে—

বিন্যাস ও সমন্বয়।

শ্বাশত হয়ে উঠেছে, না মিলতে থাকা সূচকরা।
দূরে হিজল বনের মাথায় ভেসে উঠেছে—
একটু করো ক্ষুধা, তৃষ্ণা, বাসস্থান।

কুন্তলের মায়াবী ঘ্রাণে—

ভালোবাসা থেমে ছিল অনেক্ষণ।
যে ভালোবাসা সুক্ষকোণের সাথে মিলে যায়—
ডিগ্রি, মিনিট, সেকেন্ডে।

তবুও এই বিদগ্ধতা মৃত্যুকে মিলিয়ে দিতে অপারগ।
প্রচ্ছদ
কেবল অঙ্ক খাতার শেষ পৃষ্ঠায় এসে থেমে যায় হিসেব,

বিন্যাস–সমন্বয়ে পড়ে থাকে কয়েকটা দশমিক, অথবা ভাগশেষ।


২.

কালই হয়তো মরে যাবো,
এই ভেবে কাটিয়ে দিচ্ছি একের পর এক দিন।
এই আছি, এই নেই–
হৃদয় বিদীর্ণ সংশয়ে ভর করে কাটিয়ে দিচ্ছি ঘুমহীন রাত, চেতনাহীন ভোর।
কয়েকটা কবিতা আছে সঞ্চিত—
রাতে বৃষ্টির তেজ বাড়লে সেসব পড়েই বেঁচে থাকি।
জানলার পাশের কাঁঠাল গাছটা ঝড়ে হেলে পড়েছিল, গেল বছর।
সেই অভিমানে সে ফল দেয়নি এবার।
আসলে মৃত্যুভয় নিয়ে বেঁচে থাকা প্রাণীরা,
সমবেদনা ছাড়া অন্যকিছু দিতে পারেনি কখনোই।
মৃত্যুও এখন অতিসাধারণ।
আসলে কাছের মানুষদের দুদন্ড কাঁদার সময় নেই।


৩.

অতিসাধারণ এক পাখি এসে বসে
বিকেল বেলার ছাদে।
ঠোঁটে করে নিয়ে আসে গাছের ছাল, টুকরো কাঠ।
যেমন আমি সারাদিন হেঁটে চলি পথে পথে,
হাতে করে বয়ে আনি এক রাত্রির ক্লান্তি।

সিগারেট ঠোঁটে নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকি জেব্রা ক্রসিং'এ।
ঝোলা ব্যাগ থেকে চুঁইয়ে পরে ঘাম।
কপাল থেকে মুছতে থাকে আয়ু রেখা।
রাস্তা'র কালো পেরিয়ে যখন সাদা স্থাপত্যের সামনে দাঁড়াই—
তখন হিসেবের খাতার প্রতিটা পাতা উলটে যায় চোখের সামনে।
মনে মনে ভাবি,
শুধুমাত্র মাথার ওপর ছাদ আছে বলে—
অন্ধকার দেখলে এখনো দুচোখ বুজে আসে।

৪.

প্রতিদিনের একই অভ্যাস, একই খাবার—
একই মানুষের মুখ।
শুধু ঘুম ভেঙে মায়ের মুখটা রোজ আলাদা লাগে।
যে লোকটা রোজ একা কাজ করে ফেরে শুনশান রাস্তা দিয়ে, তার মুখটাও আলাদা।
সদ্য মৃত্যুভয় কাটিয়ে ফিরে আসা রুগীর মুখটাও আলাদা।
শহর পরিস্কার করে যে বাচ্চাটা তার ঘেমে যাওয়া মুখটাও অনেক আলাদা, আমাদের চে।
চারিদিকে হাজার হাজার আয়নার মাঝে এই কটা মুখের দিকে তাকালে মনে পড়ে—
আমার শহর অসহায় তবুও হাসতে ভুলে যায়নি।


৫.


আমার বাড়ির চারভাগের একভাগ অংশে আমি থাকি; বাকি তিনভাগ জল দিয়ে ঘেরা।
সকালে অগোছালো বিছানায় বসে আমি শুনতে পাই ঢেউ এর শব্দ।
দেখি সফেন সমুদ্রে মাথা তুলে দাঁড়িয়ে আছে মগ্ন মৈনাক।
কত আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুপাত ঘটে চলেছে এই তিনভাগ জলে তা আমি খুঁজে দেখিনি কখনো।
বিছানা থেকে নেমে সমুদ্রে ডুব দিলে ফিরে আসে মধ্যবিত্ত সংসারের শব্দ।
হেঁসেলের নোনা গন্ধ।
আমি নির্জন দ্বীপে বসে তারার দিকে চেয়ে কাটিয়ে দিই পুরো রাত।
সমুদ্র নিস্তব্ধ হয়, স্নিগ্ধ হয়, প্রাচীন হয়।
তবু কখনো শুকিয়ে যায় না।
আমি ব্যর্থ রবিনসনের মতো অপেক্ষা করি
একটা ফ্রাইডের জন্য...




Comments

আরও পড়ুন

“মহানগর” - ধীমান ব্রহ্মচারী | পর্ব ৩

২৩ | ফেব্রুয়ারি সংখ্যা | ২০২৫

তৃতীয়— মাস-সংক্রান্ত

রঙ্গন রায়

কবিতা গুচ্ছ

জুজুতন্ত্রের সমূহ শ্বাপদ এবং হুজ্জতি

সিনেমা-বিষয়ক নিবন্ধ -- জয়দীপ চট্টোপাধ্যায়

একটি কবিতা সিরিজ —

সৌমিক মৈত্র

মনোজ চৌধুরী