স্বীকারোক্তি — কবিতা সিরিজ
(১)
আমি মানুষ খুব গৃহস্থ নই, বয়সে সৌখিন;পিঠে ককুদ নিয়ে ঘুরি-ফিরি, দু-হাতে শখের করাত!
নিয়মিত অশান্ত হবো, এমন তীর নই -----
এমন তুরীয়তা নিরাশ করবে তোমায়।
তবে গান-বাঁধা বয়াতীর মতো
রাত্রি ভেঙে যায় আমারও গৃহে, মৌরচাং বাজে বধিরতায়।
এই তো শুয়েছিলাম ছাদে, মেঘভরা আকাশের নীচে
এই তো পড়েছিলাম স্টেশনে বাজারে, বারবার উঠে-নেমে
পুণ্যলবা শাকের গভীরে, কখনও দেশী কলমির
খুঁটে তোলা মাথার ভেতরে আমি শব্দের গন্ধ সুখী।
এই দ্যাখো দু-হাত আমার পাশবিক চুলে ভরে আছে -----
কোনো তাপ নেই, শুদ্ধতাও নেই, জলকুন্তল সারা শরীরে
কোনো পাখি নেই, কোনো ঘোড়া নেই, খালি ব্যাসকূট মুখগহ্বরে
(২)
ভাগীরথী টিলার চূড়ায় আমার শহর
আমার প্রায়োপবেশিক নির্জনতার আঁচিল
সেখানে অনন্য রায়ের 'ব্রাউন বিস্ময়' খেলা করে -----
অথবা, আরেকটি জগত আছে আমার, বিভ্রমাচ্ছন্ন
সুরধনী নদীর মতো যাকে দখল নিয়েছে মানুষ
শুধু রাতের বেলা, লুকিয়ে চুরিয়ে
আমি গণেশ পাইনের ছবি আঁকি সেখানে
নাম দিই 'এপ অ্যান্ড দ্য ফ্লাওয়ার' —
এছাড়া, তৃতীয় কোনো প্রবাহ নেই
দুটি নৌকায় অস্থির হয়ে বসে থাকা দুটি পা
দু-পায়েই ক্লান্তিহীন আড়ষ্টতার ঢল —
নিজের বলতে শুধু এটুকুই তাপ আমার, এটুকুই প্রবাহ
(৩)
আখক্ষেতের নীচ দিয়ে মূলাধার, সরু আলপথ
সেই বরাবর নিতান্ত একলা হেঁটে চলেছি -------
এখন বর্ষাকালীয় হাঁটার চেয়ে কঠিন কিছু নেই আমার
অথচ চেয়েছিলাম দুজনে মিলে দোয়াব তৈরি করবো
তুমি আগ্রা আমি এলাহাবাদ। সত্যি কথা বলতে
এরপর গ্রিন-সিটি প্রকল্পের বাঁধানো ঘাটে বসে
বিশ্রামরত উন্নয়নের সাথে আলোচনা আমাকে মানায় না ব্যক্তিগতভাবে বৃষ্টিপাত হলে আমি তুমুল হয়ে উঠি
ঘাসের রক্তের গন্ধ আমাকে বেসামাল করে রাখে ভোর
তুমি তখন ফেরিওয়ালার কঙ্কাল ছুঁয়ে দেখো, শুনতে পাবে
— ষোড়শ মহাজনপদের ইতিকথা, পরিত্যক্ত ছায়ায়
চিনে নিতে পারবে গতরাতের ময়ূর-ধ্যাবড়ানো কাজল!
ভিন্ন রঙের মুখের মলাটে তীব্র দূষিত শহরতলির ঝড়
হুড-খোলা হৃৎপিণ্ডের প্রতি প্রকোষ্ঠে উথালপাথাল করে
থিকথিক করে পুরুষ শ্বাসের কার্বন —
তার উচ্চতা ও প্রশস্ততা খুব তীর কবিতার কথা বলে —
(৪)
অচেনা নিশ্বাসে শুয়ে থাকি রোজ। আলো, আলো হবে।
কাত হয়ে যাই জন্মদিনের ধানে, দূর্বায়, পরমান্নে —
মাঠে মাঠে আলোকবর্তিকার উপহার ফুটে ওঠে
পুনরায় চোখা ভোর প্রীতি হাতপাখা নাড়তে নাড়তে
আমাদের কবরের পাশে হেঁচে ওঠে একবার... দু-বার...
ধীর পায়ে মাকড়সার জাল দুহাতে ঠেলে
ফিরে আসি গন্তব্যে — অপেক্ষার চোরাপাথর খেলি
দেবীর তেলমাখা চুল, বাসি সিঁদুর অথবা গতিহীন আলোর
এই ভরা হাঁটে বেমানান রক্তের ছোটো জমায়েত হবে আজ
এই ভোর আমাদের ভালো কিছু দেবার আশা
এই ভোর সূর্যকে আটকে রাখবে আরো কিছুক্ষণ
এই ভোর পাখির ডাক বলা যায় তারপরও
এই ভোর এমন রং সরাসরি আত্মাশ্রয় — আত্মখনন!
(৫)
এই যে বিপন্ন মাহুতগুলোকে ধরে এনে ক্রোমোজোম জোড়
মেলানোর চেষ্টা করছে কিংকর্তব্যবিমূঢ় পটু হাতের হাপর
ডিজিটাল ক্যামেরায় বেঁধে দেওয়া হচ্ছে ঘাতক প্রশ্নমালা
হতাশার জঙ্গল পেরিয়ে মৌন মাল্টিপ্লেক্স
অথবা আদর ও স্তালিন বিষয়ক ভয়
কোনোকিছুই আমায় পেয়ারা পাতার আত্মকথা শোনাতে পারেনি
ঘাড়সংলগ্ন ছলিদাগ মুছতে পারেনি কোনো মাইকালাল!
এই কস্তুরীরং শহরে স্নানঘর বলে কিছু হয় না
তবু তো কবিতার বই ছাপা হয় এখান থেকেই চিরকাল
ফলে এই অমৃত তোমার ছায়া, এই মৃত্যুও তোমারই ছায়া...
Comments