তিস্তা পাড়ের মেয়েটি— কবিতা সিরিজ

 



















(১)
তিস্তা পাড়ের মেয়েটি


নিশিদিন পদ্ম ফোটে গো, পাঁকে

জল
মেয়েটির চোখে জল, বুকে জল, কণ্ঠ চিরে অগাধ জল
কলকলিয়ে জল, খলখলিয়ে জল

 র ক্ত  ভে জা  জ ল 
মেয়েটির বাড়ি ঘরে জল
মেয়েটির অথৈ নৌকায় জল
মেয়েটির মাংস পিণ্ডে জল
মেয়েটির শীতল ব্রহ্মাণ্ডে জল

জল
মেয়েটির সারস বক্ষে জল, মেয়েটির দেহ - হাঁসে জল
মেয়েটির সর্বশান্তে জল, মেয়েটির জঙ্ঘা চিরেও জল
কা লি জ ল 
বীজ ফোটা আজীবন নিষিদ্ধ জল
এই জল
         এই জল
               এই জলের ভিতর আগুন পাশা
 চিরটাকাল শান্ত নির্বাক নির্মানুষ সমীচীন পাখিদের হ্রাসে
মেয়েটি হাওয়ায় হাওয়ায় ভেসে গেল তিস্তা পাড়ে—


(২)
প্রায়শ্চিত্ত


 প্রায়শ্চিত্তের ধরন আতব চালের ধান
দূরবর্তী বালকের প্রেমে গজিয়ে ওঠা ঘাসের ডগায় জমা বরফ জল
আলুথালু অপূর্ব বয়ান 
সংসারের আর্য বনের ক্লেশে
কে কাকে মিথ্যে বলে ?
কে কাদের চোখে চোখ রাখে ...?
রাখবে না কেন -- বলবে না কেন ? রাষ্ট্রের মুখে গন্ধ
রাষ্ট্রের কাটা ঘা
কাটা ঘায়ের ওপর ভিত্তিমাখা প্রলেপ নিস্তার
বড় বড় ঘায়ের চারুপথ ছাড়িয়ে 
রাষ্ট্র 
      দুলে দুলে ওঠে

সংগ্রামের আজান 
আয়োজন মাফিক
এবং নিশুতি মেয়েটির নাভি পদ্মে পদ্ম ডাঁটার ঝোল
আয়োজন বহিষ্কৃত খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে ওরা মরবে
রাষ্ট্রের সকল মঙ্গল গান
  কীর্তি সুলভ দারুচিনি দ্বীপে বসে কে শুনবে...!
অলংকরণ- নম্রতা বালা 

(৩)
ধুলো ওড়া পথ


ও পথেই তার বাড়ি
ও পথেই তার দুঃখের ছড়াছড়ি

শ্রমিক কবির  মন ভর্তি গন্ধরাজ
ঘৃণার চেয়েও প্রবল বেশি
কামারশালা পেড়িয়ে যায় আসে
আমরা শুনতে পাই ঝরঝরে বাতাস
গচ্ছিত রাখা কেবল চন্দন কাঠের আলমারি
আলমারীর তাঁকে মেয়ে বউয়ের মলিন শাড়ি
তার কেন এত দুঃখের ছড়াছড়ি...?

কেউ কথা বলেনি দাওয়ায় সন্ধ্যের ভিড়ে
তুলসী মঞ্চ ছেড়ে যায় দূরের মন্দিরে

পরিযায়ী ভাষার শ্লোক কেবল আনুগত্য নয়
শ্রমিকের তরয়ারি
গা ছাড়িয়ে অন্যের ধুলো পথে উড়ি

নিতান্তই পাখি নয়
পাখির মতোই ঝড়া পালক
— ও পরিযায়ী, তুমি মেহনতে দৃরতা জ্বালো "


(৪)
কাঁচা হলুদের রং


কাঁচা হলুদ গায়ে মেখে মেয়েটি রুপচন্দন পাড়ে 
                                                      বসে আছে
বিন্নিধানের কাঁথায় ঘেরা ঘর
আলোর ভেতর জ্বলছে জোনাক ছটা
তিরতির করে নিমীল হাওয়া বও—

— এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে কি দ্যাখো তুমি ? 
— চন্দ্রপ্রভ বিড়াল আর জানালার শিক

চন্দ্রপ্রভ বিড়াল ?
— আর কিছু দেখতে পাও না ?  
— উহু, পাই না

হাতের মাঝে ডোরাকাটা দাগ তুমি দেখতে পাও?
যেভাবে ভবিষ্যতের চিত্রপট বেয়ে নেমে আসে অশালীন 
বৃষ্টি ভেজা দাগ
যে দাগের ওপর কেউ না কেউ মৃতরুপ অথবা দগদগে ঘায়ের নিরুত্তাপ

এভাবে অবশ করে দিনের পর দিন জেগে থাকা —

Comments

আরও পড়ুন

তৃতীয়— মাস-সংক্রান্ত

২৩ | ফেব্রুয়ারি সংখ্যা | ২০২৫

“মহানগর” - ধীমান ব্রহ্মচারী | পর্ব ৩

রঙ্গন রায়

কবিতা গুচ্ছ

জুজুতন্ত্রের সমূহ শ্বাপদ এবং হুজ্জতি

সিনেমা-বিষয়ক নিবন্ধ -- জয়দীপ চট্টোপাধ্যায়

একটি কবিতা সিরিজ —

সৌমিক মৈত্র

মনোজ চৌধুরী