একটি কবিতা সিরিজ
নিসর্গতাড়িত
(১)
বিষন্নতা, অংশত ঝুঁকে আছে, দূর ঝাউবনে
গুলিগোলা চলার পরে বেশ শুনশান রাস্তাটি—
একটি পাখি শুধু মেঘের দিকে তাকিয়ে ছিল
সামান্য টাকার বিনিময়ে, তাহলে সব বিকিয়ে গেল?
আর আমাদের রাস্তা হয়ে গেল ওদের রাস্তা!
ইথারে কবেকার পুরনো গান ভেসে চলেছে
সময় এক হাত-পা ভাঙা পাথর,
কোমরে ফিক লাগা সাইটিকা
আগুন-ঝড়ে পুড়ছে এতদিনের জমানো ভুল দস্তাবেজ।
(২)
কালো চশমার ভিতর থেকে দেখা সমুদ্র, ঢেউহীন—
ভেসে চলেছে উদ্দেশ্যবিহীন নীল নক্ষত্র, ভ্রষ্ট দেবশিশু
দূরে দূরে শোকচাপা ঝাউবন।
উদ্বেগে হাওয়ায় উড়ে যেতে চায়—
কিছু না পাওয়া বাতাস আজ একটানা উড়িয়ে নিয়ে
চলেছে শতছিন্ন পাতা,
দিশেহারা গোঁয়ার পাতাটি কতদূর যাবে?
অন্তহীন ধুলোমাখা রাস্তা
বারবার ছুটে গেছে নিসর্গতাড়িত।
(৩)
বাবা মা তখনও ঘুমিয়ে
দাঁড়ের ময়নাও বুঝি ঘাড় গোঁজা
অন্ধকারে সিঁড়ি গুলো
নেমে গেছে
রহস্যের পাতালঘরে।
ওখানে রয়েছে ঢের, টিকটিকি আরশোলা
ডেঁয়ো পিঁপড়ের সারি, চামচিকে
আড়ি পেতে বসে থাকা বাস্তুসাপ
টেবিলের ভাঙ্গা পা, বালিশ এর খোল
বিশাল এক ল্যাবরেটারি।
আমি দেখি এরই মধ্যে সহসা সিঁড়ি বেয়ে উঠে এলো
আর ফের নেমে গেলো,
চুলহীন ড্যাবা ড্যাবা চোখ, বিশাল এক ডেমনের মাথা।
এক শান্ত ভোরবেলায়
চকিতে মেলানো ওই ডেমনের ধড় হীন মুণ্ডু আঁকা শুরু করি
ভায়োলিন বাজছে কোথাও
নীচু স্কেলে,
ভীষণ করুণ।
একটি তালা কবে থেকে লটকে আছে দরজায়
এ নিয়ে গভীর কোনও ভাবনা নেই—
ভিতরের অন্ধকার, বাইরের অন্ধকার
ক্রমশ সমান হয়ে আসে।
কিন্তু আমি ভিতরের দরজা খুলতে চাইছি কেন?
সারাদিন মানুষের কথা, ছোট ব্যথা ও বেদনা নিয়ে
ভোরের হিমের সাথে চলে যাই আড়ালে আড়ালে—
ভিতরের অন্ধকারে স্মৃতি-বিস্মৃতির নীরবতা,
ওই ঘনায়মান কুন্ডলী এক একদিন বেরিয়ে আসতে চায়
দরজার ফাঁক গলে, আর খুঁজতে থাকে লক্ষ্যবস্তু;
তালার ভেতরে আমি, আমার ভেতরে তালায়
ভিতরকাঁপানো ভয় নিয়ে একটি পতঙ্গ লুকিয়ে পড়ে
শুনতে থাকে বিষমাখানো হিস হিস শব্দ—
জালফেলা চোখ দিয়ে কেউ খুঁজে ফেরে আঁধার মাণিক
(৫)
সংসার
মৃদু কাঁপনের মধ্যে আমি ভেতরের শীর্ণতাকে পাই
এই কাঁপন আমি অনেকদিন ধরে দেখছি, তবু এই
ঘনিয়ে ওঠা ধোঁয়া, ঝুলে পড়া মালিন্য,
ছিটকে আসা রাগ-অভিমান দেখে
সেভাবে কিছু কি বোঝা যায়?
ছুঁড়ে দেওয়া কোন কথাটি, কোন অবহেলা, গলায় আটকে গেছে—
একে একে খুলছে পাশের বাড়ির জানলার উৎসুক খড়খড়ি
দেখি দেয়ালটা ফেটে গেল, দুলে উঠল ঘড়ি ও ক্যালেন্ডার,
সপাটে দরজা বন্ধ আর ভেতরে ধুপধাপ কিছু ছুঁড়ে ফেলার শব্দ
বাড়ি এবার সত্যি থরথর করে কেঁপে ওঠে।
ভয়ে ভয়ে আমরা ডাইনিং এ জড়ো হতে থাকি
আর ফিনকি দিয়ে ওঠা রক্তকে বলি—
এবারটা মাফ করে দাও,
জলের ভিতরে মেশা ঘন নীল ফেলে
একবার বেরিয়ে এসো হাসিমুখে।
Comments