একটি কবিতা সিরিজ
(১)
ফেরি করি মিছে গন্ধের শোক। সায়ম ফেরি করি
ধ্বংসকাল...
বৃথা অভিঘাত ভন্তের যোজনায়। স্থিরচক্ষু ;
শ্রাবণ সন্তাপে স্থির। শাদাপত্র সম্মুখে দেখি,
নাকফুল ঝরে আছে...
তাই লিখি। নিশ্চিন্দায় লিখি আলো। গর্ভাকারে ভুল ?
এত বর্ষা গেল তুমি, না পেয়েছ মাটি তাপ
শ্রীপান্থের, কদমের ঘ্রাণ। বণিকের কাছে যাও—
আদি সিংহল জলে পর্ণীপথে...
পরমদ্রব্যশিষে সেতু ক’রে যাও
সে সময়ে কাঙালিয়া ধন শালপাতাটির মতো
চেয়ে আছে ; বুনোশিশু হাতে তুলে নেবে না কখনো ?
(২)
আমারে দেওয়ার মতো কিছুমাত্র ধনী নও, জানি
মোক্ষে কী দিতে পারো কল্পনার দিনকানা মেয়ে !
এত লেখো আশাবাদ, রাতপাখি চরাচরে
আঁখিমিলন সুরভিরে লেখো। শ্মশানে ব্যথার ঘাটে
আনপক্ষী আনমনে ভাবে, এমনই অথর্ব আমি !
সৎকার শিখিনি এখনও !
আহারে শাবক তোর, অবিশ্বাস পুড়ে যায় যেন—
হতভাগ্য দম্পতির শোক উড়ে যায়...
আমারে শোকের গাঙ মনান্তরে কলস ভরে দেবে ?
দাও গ্রীবা, দাও চঞ্চু, পালকপর্ব দাও—
অগ্রদান শিখিনি জীবনে। আমায় নীলকন্ঠ হ’তে তুমিই শেখাও।
চিত্রশিল্পী — ঋতুপর্ণা খাটুয়া |
(৩)
অদর্শন কি সুখের গরিমা ? চিরসফল না-দেখাপ্রীতি
তুলোবীজ হয়ে ওড়ে গন্ধর্ব তৃপ্তিহীন...
মাঝে যন্ত্রগান ; ব্যর্থ সুরলোক থেকে শ্বাসের
যে সরল হাওয়া আসে, সুপ্তবুকে শীতল সক্ষম ?
ভরা জনপদে কেন হায়নামরণধ্বনি ওঠে !
সকল মানব আকুল হ’ল তিমির জলের কাছে এসে—
ভাসমান থির, ভাসমান শ্লোক...
তরী যায়, সাধের তরীটি দ্যাখো,
প্রিয়মন দংশন হেতু টেরি নায়িকারে
কানীজননীর পাঠ দিয়ে কানপাশা সঙ্গসুধা করে।
স্বর্গপথ ক্যামনে বিলায়, জানবে না কি সে ?
জেনেছি বিজনে, দেহঘিরে কুন্ডলী জাগে,
ছাতিমসুগন্ধ তুমি এ অপজনে থাকো ধ্যান বিমোচনে।
(৪)
অচিন্তনরীতি, চন্দ্রশোক ঐ গমক্ষেতে ঘোর কেটে গেছে ;
লিখব না আর। যা কিছু সমাধিফলক তৈয়ার শেষে
ক্লান্ত এখন সুলতানের পাশে ঘুমোবো, ভাবি।
দিগভ্রান্ত করো যদি পথে,
যাও মেঘ— তারে কী উপায়ে বলি !
অভিনন্দন প্রিয়তম— এই শেষ বাক্যখানি
লাডলীরাণীর কাছে রাখা আছে ; তাই নিতে কত আর
ঊর্ধ্ব হতে পারি ? রাণীমাগো...
বোকাবান্দার মতো যাচনারহিত মুখ খুলে যায় ;
অকথার শাস্তি বুঝি এই !
মাথা পেতে নিই নিজে, চেয়ে নিই—
হোক ঘৃণা, তবু আপনি এগিয়ে এসে দেবে,
এত উদারতা বান্দাকে নয় ; কীট, অজ্ঞ কোথাকার !
৫
ওস্তাদ ডাকে ; বলে— মিঞা, কোথা গানে মত্ত রে দোস্ত্ ?
ওস্তাদ ওহে, রঙ্গনাথ... হাতড়াই ওরে, চলো।
পাহাড়ে পাহাড়ে ঘুরি...
অকবিযাত্রাপথে সঙ্গী নটপ্রভু ; রতন বেশকার।
বংশী হয় কুন্দাল যে কুন্ডে, তার পাশে বসি ;
জানি, কাহে সে কবিতাপ্রাণী !
উপেক্ষা অভ্যাস—
সে কত অবহেলা বরণীয়, বুঝি তাই।
শ্বেতপদ্মের মতো কথাবিন্যাস মাথা রেখে শোয় পায়ে,
ঘুমন্ত মুখে তালনবমী নেমে আসে...
স্বর্ণ-আকাশের নীচে মণিভ্রান্ত নন্দোৎসব !
পঙক্তিভোজনে বসি সর্বজনে ;
শূন্যদর্শন, বালুপাথরের কণা তুলে খাই।
Comments