সিনেমা-বিষয়ক নিবন্ধ -- জয়দীপ চট্টোপাধ্যায়

“The masses never revolt of their own accord, and they never revolt merely because they are oppressed. Indeed, so long as they are not permitted to have standards of comparison, they never even become aware that they are oppressed.”
― George Orwell, 1984


রিচালক কেন লোচ-এর ২০১৬তে মুক্তিপ্রাপ্ত সিনেমা 'I, Daniel Blake' দেখতে দেখতে ভীষণরকম রিলেটেবল লাগে সব কিছু। আমরা সবাই, কারো একটা বেঁধে দেওয়া নিয়মে সব কিছু করে যাচ্ছি। 'অসুবিধে হচ্ছে' থেকে ক্রমে 'এই ব্যবস্থা ন্যায়সংগত নয়' অবধি পরিস্থিতি চলে গেলেও, কিছু পালটাচ্ছে না নিয়মে। বেশিরভাগ মানুষ, যাদের অসুবিধে হচ্ছে, তারাও এমন ভাব করছে– যেন সব ঠিকই আছে, এভাবেই চলা উচিৎ রাষ্ট্রযন্ত্রীয় পরিকাঠামোতে। অশীতিপর বৃদ্ধা লাইনে দাঁড়িয়ে নিজের জীবিত থাকার প্রমাণ দিয়ে আসবেন– এটা স্বাভাবিক। এবং 'এইভাবে একজনকে বেঁচে থাকার প্রমাণ দিতে হবে?' প্রশ্ন উঠলে লাইনে দাঁড়িয়ে থাকাই আর এক বৃদ্ধ বিরক্তিপ্রকাশ করে বলছেন -- 'তাহলে কীভাবে করবে?' একজন বেয়ারা প্রশ্ন করলে এবং তা কর্তাদের কানে পৌঁছলে কর্তারা সেই নিয়ে আধঘন্টা কাটাবেন, অন্যদের 'সময় নষ্ট হবে'।
একজনের ব্যবস্থা হয়ে গেলে, কার ব্যবস্থা হল না-- সেই নিয়ে আর তার মাথা ব্যথা থাকে না। থাকবে না। আর দায়িত্বে থাকা কর্মী হঠাৎ বলে উঠবেন-- আজ সার্ভার ডাউন, আর যন্ত্র কাজ করছে না, আপনার আঙুলের ছাপ উঠছে না... কাল বা কদিন পর এসে খোঁজ করুন।
পরিস্থিতি বদলে যাচ্ছে, প্রযুক্তি বদলে যাচ্ছে, নিয়ম বদলে যাচ্ছে প্রতি ছ মাস অন্তর...
ভুগতে হবে, দায় নিয়ে নিজের বেঁচে থাকার প্রমাণ দিয়ে যেতে হবে বছরের পর বছর... না হলে নিজের হকের পেনশন বন্ধ করে দেবেন সরকার বাহাদুর।
কোনো বয়স্ক ব্যক্তিকে হঠাৎই কথা ফাঁকে বলতে শুনি-- 'এই সময়ে আমাদের বেঁচে থাকতে নেই। কিছু বুঝতেও পারি না, করতেও পারি না... যা বোঝায়, যা বলে-- মেনে নিতে হয়।




'ঠিক এমনই একটি নির্দিষ্ট বয়সে এসে, নির্দিষ্ট শারীরিক এবং আর্থিক পরিস্থিতে, প্রতিকূল পারিপার্শ্বিকের মাঝে... শাসকরচিত সিস্টেমের এক প্রান্ত থেকে আর এক প্রান্তে জুঝে চলার বিরুদ্ধে সরব হয়ে ওঠার সিনেমা 'I, Daniel Blake'। মানুষ একটা সমাজে থেকেও একা, যে যার নিজস্ব সমস্যার মধ্যে একা। সিস্টেমের হাত-পা নেই, যারা এক একটি পদে বসে নিজেদের 'দায়িত্ব' পালনের কথা বলে যাচ্ছে... তারাও আসলে আর মানুষ ভাবছে না কাউকে। একটা ঠান্ডা অসংবেদনশীল রূপ প্রকাশ পাচ্ছে তাদের। একজন একা মানুষকে ফিরিয়ে দেওয়া, হাটিয়ে দেওয়া, বাতিল করে দেওয়া-- এইসব করতেই তারা বসে আছে। সাহায্য করে তার পরিস্থিতিটি একটু সহজ করার বদলে, করে তুলছে আরো জটিল। একটা সময়ে পরিস্থিতির শিকার মানুষটি বুঝতে পারেন, চেয়ারে বসে থাকা মানুষগুলো যন্ত্র হয়ে গেছে। মানবিকতা প্রত্যাশা করা যায় না এই সব শাসনযন্ত্রের কাছ থেকে।
বহুবছর আগে, পঙ্কজ কাপুরের একটি হিন্দি ধারাবাহিক সম্প্রচারিত হত বেসরকারী চ্যানেলে-- অফিস অফিস। কৌতুকের মোড়কে আসলে তা ছিল একটি স্পষ্ট প্রতিবাদের জায়গা, মুসদ্দিলাল নামে এক ব্যক্তি দিনের পর দিন এক একটি সরকারী দপ্তরের চক্কর কাটে-- এক চেয়ার থেকে অন্য চেয়ার, তার ফাইল হারিয়ে যায় নিয়মের গোলকধাঁধায়। ইচ্ছাকৃত জটিলতা সৃষ্টি করে দুর্নীতিগ্রস্ত আধিকারিক থেকে পিয়ন এবং দারোয়ান পর্যন্ত বুঝিয়ে দেয়-- ফাইল অমুক টেবিল অবধি পৌঁছতে গেলে কিছু খসাতে হবে। ভারতীয় দুর্নীতিগ্রস্ত ব্যবস্থার প্রেক্ষাপটে মুসদ্দিলালও সেই ভাষা বোঝে, চেষ্টা করে... কখনো দুর্ভোগ বাড়ে, কখনো শিকে ছিঁড়ে যায় ভাগ্যে। মিঃ ব্লেকের ভাগ্যে সেই দুর্নীতির পথটাও নেই। সামর্থ্য বা উপায়ও নেই।
ড্যানিয়েল ব্লেক প্রায় ষাটের দোরগোড়ায় আসা একজন প্রৌঢ়, হৃদরোগ আক্রান্ত হওয়ার পর চিকিৎসকের নির্দেশে যে আর আগের মতো কাজ করতে পারবে না। নিয়মের যাঁতাকল এমন, চাকরির খোঁজ করে নিজেকে শ্রমযোগ্য প্রমাণ না করতে পারলে সে 'জব সিকার্স অ্যালাওয়েন্স'টাও আর পাবে না। আর্থিক প্রতিকূলতার মাঝে, এই অ্যালাওয়েন্সের জন্য ড্যানিয়েলের ভোগান্তিকেই একপ্রকার প্রতিবাদের কন্ঠ হিসেবে তুলে ধরেছেন পরিচালক লোচ এবং চিত্রনাট্যকার পল ল্যাভার্টি। লোচের সঙ্গে বহু সিনেমায় একত্রে কাজ করা ল্যাভার্টি এই সিনেমার চিত্রনাট্যকে স্লো-বার্ন পদ্ধতিতে এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে নিয়ে গেছেন। ক্রমে দর্শক নিজেও ক্রমে আরো উষ্ণ হতে থাকা জলে ব্যাঙের মতো বসে থাকবে বুঝতে পারবে অনেক দেরিতে, যে কেউই এর থেকে বেরোতে পারবে না।
কোনো মারকাটারি সংলাপ নেই, সিস্টেমকে উলটে পালটে দেওয়ার ঘটনা নেই, এমনকি মিছিল করে কারো মনোবল টলিয়ে দেওয়ার মতো দৃশ্যও নেই। হাজার হাজার মধ্যবিত্ত, নিম্নমধ্যবিত্ত, শ্রমজীবী মানুষের প্রতিনিধি ড্যানিয়েল। তার কোনো ক্ষমতাই নেই বিশেষ কিছু করার। তার কথা কেউ শুনবেই না। তাকে এই প্রশাসনিক যাঁতাকলে পিষে যেতে হবে... দর্শক দেখবে তার প্রতিদিনের এই পিষে যাওয়া। দর্শকদের মধ্যে কেউ নিজেই ড্যানিয়েল, কেউ বা আধিকারিকের আসনে বসে থাকা কোনো ব্যক্তি... যে আজও কারো ন্যায্য আবেদন অমানবিক হয়েই পিছিয়ে দিয়েছে সরকারী নিয়ম দেখিয়ে। চার জায়গায় গুরুত্বহীন একজন মানুষ, নিজের দপ্তরে কারো প্রাপ্যকে তার থেকে দূরে সরিয়ে রেখে একটু মাসল ফ্লেক্সিং করে নেয়-- এটাই তার সামান্য জীবনের মোমেন্ট অফ গ্লোরি।

চলচ্চিত্রের বিভিন্ন সেগমেন্টে খুব গুরুত্বপূর্ণভাবে আকুপাংচারের মতো বিঁধিয়ে দেওয়া হয়েছে কিছু নির্দিষ্ট পেইন পয়েন্ট। বারবার ফিরে এসেছে বিরক্তিকর এবং হাস্যকর প্রশ্নোত্তরের দৃশ্য... যেখানে আরো বেশি করে অমানবিক লাগছে নিয়ম-নির্ধারকদের। কেউ বা কারা 'ডিসিশন মেকার', তারা সিদ্ধান্ত নেয়। তার কেন উচিৎ সিদ্ধান্ত নেয় না, নিচ্ছে না-- কেউ বলতে পারে না। সিদ্ধান্ত কতটা ন্যায্য বা নৈতিক-- তা নিয়ে প্রশ্ন করারও অবকাশ নেই। বিরক্তিকর টেলিফোনিক কনভার্সেশন, যন্ত্রচালিত অটোমেটেড কণ্ঠস্বর, জোর করে কাউকে প্রযুক্তি ব্যবহার করেই কিছু করতে বাধ্য করা-- এটাই নিয়ম, এভাবেই করতে হবে। সিস্টেম জানায়-- We’re digital by default। ড্যানিয়েল উত্তর দেয়-- I am pencil by default
একজন অসুস্থ ব্যক্তি যে হৃদরোগে আক্রান্ত, এইটুকুও সহজে স্বীকার করার মতো মানবিকতা নেই একজনেরও। কোনো প্রকারে চাকরি খুঁজতে বাধ্য হওয়া এক ব্যক্তিকে ক্রমে বুঝিয়ে দেওয়া হচ্ছে-- সে আসলেই অযোগ্য। চেষ্টা সন্তোষজনক না হলে তার ভাতা বন্ধ হবে।
'রেজিউমে ওয়ার্কশপ'-এ যেতে বাধ্য করা হয়ে প্রৌঢ় ড্যানিয়েলকে, কেবল একটি গ্রহণযোগ্য রেজিউমে লেখার জন্য। সেখানে আমরা দেখতে পাই খুব পরিচিত কর্পোরেট মগজধোলাইয়ের প্রক্রিয়া-- কেমন রেজিউমে হলে নিজেকে সবার থেকে আলাদা প্রমাণ করা যায় নিজেকে। মানুষ কীভাবে ক্রমে সাধারণ নাগরিক থেকে মনিবের ফায়দা করে দেওয়ার মতো ক্লায়েন্ট হয়ে উঠতে পারে।
সেশনের মাঝেই ড্যানিয়েল সকৌতুক উত্তর দেয়, অপ্রিয় হয়ে ওঠে। যেমন অপ্রিয় হয়ে উঠি আমরা, ভুল জায়গায় ঠিক কথা বলে ফেললে।
একের পর এক অনাদায়ী বিলের নোটিস আসতে থাকে। ড্যানিয়েল কিছু না কিছু বিক্রি করে সামান্য কিছু পাউণ্ডের ব্যবস্থা করে... আর ক'টা দিন, তারপর ঠিক ব্যবস্থা হয়ে যাবে-- এই আশায়।

এই প্রতিকূলতা আর একাকী জুঝতে থাকার মাঝেই কেটি নামক সিংগল মাদারের সঙ্গে আলাপ ড্যানিয়েলের। দুই সন্তানের এই মাকে আমরা দেখছি, সিস্টেমের প্রতি বীতশ্রদ্ধ, নিজের আর্থিক সংকটে হতাশাগ্রস্ত... নিরুপায় হয়ে বেঁচে থাকার তাগিদে লন্ডন থেকে চলে এসেছে নিউ ক্যাসলে। নিজের জন্য সেভাবে সরব না হলেও, এই প্রথম ড্যানিয়েলকে দেখা যাচ্ছে চাকরির দপ্তরে দাঁড়িয়ে প্রতিবাদে সোচ্চার হতে... যখন আধিকারিকরা কেটির সঙ্গে অমানবিক আচরণ করছে। কেটির সঙ্গে ড্যানিয়েলকে বিতাড়িত হতে হচ্ছে দপ্তর থেকে। আধিকারিকদের আপাত ভদ্র চেহারার মুখোশটাও খুলে যাচ্ছে দর্শকের সামনে-- তাদের স্পষ্টতই খেদিয়ে দেওয়া হচ্ছে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে।


এইখানেই, সম্ভবতঃ দুজন প্রবল হতাশাগ্রস্ত হয়ে কিছু একটা ভুল পদক্ষেপ নেওয়ার জায়গা থেকে সরে আসছে, একে অপরের সান্নিধ্যে।
They relate, recognize and share each other's misery... and thus develop a bond। ড্যানিয়েলের গল্পে আমরা কিছুটা হলেও দেখতে পাই সিংগল মাদার কেটির জীবন। কীভাবে সে নিজে অভুক্ত থেকে তার সন্তানদের লালন করছে। জেনারাল স্টোরে মরিয়া হয়ে চুরি করার চেষ্টা করছে। বহুদিন পরে কোথাও একটু খাবার পেয়ে, নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ক্যান খুলে খেতে শুরু করছে। এই চলচ্চিত্রে কেটি চরিত্রটিকে প্রতিস্থাপন করা এবং তার এই এক্সস্ট্রিম সার্ভাইভাল অ্যাটেম্পটগুলি দর্শকের সামনে তুলে ধরার এক সচেতন প্রয়াস। ড্যানিয়েলের নিজস্ব ঘটনা ভীষণ রিয়েলিস্টিক থাকছেন লোচ, কিন্তু কেটির ক্ষেত্রে তা হয়ে উঠছে লাউড, ডেসপারেট, ড্রামাটিক। এই ডুয়ালিটি এবং কনট্রাস্ট-- ডিরেক্টরস ট্রিটমেন্ট এবং ডিরেক্টরস ডিসক্রিশন হিসেবে খুব লক্ষণীয়। প্রবল হতাশার মাঝেও এরা একে অপরের সহচর হয়ে উঠছে। চেষ্টা করছে, একে অপরের মনোবল সামলে রাখার। বাড়ানো না গেলেও, সামলে রাখা। নিজের ভেঙে পড়াটা আড়াল করে সামলে রাখা।
অথচ ছায়ার মত সঙ্গী হয়ে আছে সংকট। রিফিউজিদের সঙ্গে লাইনে দাঁড়িয়ে খাবারের খোঁজ করতে হবে পর দিন সকালে। আবার একবার চাকরির দরখাস্ত নিয়ে যেতে হবে অন্য কোনো হেঁয়ালিপূর্ণ পরামর্শ শোনার জন্য।
প্রতিকূল পরিস্থিতিতে সাহায্য করার জন্য হাতবাড়িয়ে দিয়ে, সন্ধ্যার পর কেউ এনে দেবে বেশ্যা হওয়ার প্রস্তাব। প্রথম বিশ্বের অলিগলিতেও কেউই নিরাপদ নয়।

পরিচালক লোচ, সিনেমার দীর্ঘ সময় জুড়ে একপ্রকার আশা এবং হোপিং এগেন্সট অল অড্‌সকে বাঁচিয়ে রেখে সচেতন বামপন্থী সমাজবাদী মনোভাবের সঙ্গে সিস্টেমের অমানবিকতা আর প্যাথোজের ছবি এঁকে গেছেন। এই হচ্ছে... এই ঘটে চলেছে... কী করবে? কে-ই বা অবস্থান নেবে এসবের বিরুদ্ধে?
সিনেমার শেষ দিকে এসে ড্যানিয়েল হঠাৎই 'আপাতভাবে' মানসিক স্থিতি হারিয়ে ফেলছেন, এবং একটা অপ্রত্যাশিত পদক্ষেপ নিয়ে ফেলছেন। এমপ্লয়মেন্ট দপ্তরের দেওয়াল জুড়ে স্প্রে প্রেন্ট দিয়ে লিখছেন-- আমি ড্যানিয়েল ব্লেক, অবিলম্বে চাকরির দাবী করছি।
পথচারীরা কেউ হাসছে। কেউ কৌতূহল নিয়ে বা সবিস্ময়ে তাকিয়ে দেখছে। ড্যানিয়েল চিৎকার করে বলছে-- চাকরি তার ন্যায্য দাবী, এবং সে এখান থেকে নড়বে না।
কিছুক্ষণের ব্যাপার। একা একজন ব্যাংকে বা সরকারী দপ্তরের সামনে দাঁড়িয়ে চেঁচালে যা হয়। কিছুক্ষণের মধ্যে নিরাপত্তারক্ষী এসে তাকে ঘাড় ধরে বার করে দেয়। পুলিশ কিছুক্ষণের মধ্যে এসেই গ্রেফতার করে নিয়ে গেল ড্যানিয়েলকে। সমস্ত সিনেমায় একজন শোষিতের আউটবার্স্ট বলতে এইটুকুই। একটা কাচও ভাঙেনি, কোথাও আগুন জ্বলেনি, কোনো আধিকারিক আহত বা নিগৃহীত হয়নি। কেউ দল বেঁধে মিটিং বা মিছিলও করেনি ন্যায্য অধিকারের দাবীতে।

একজন হৃদরোগে আক্রান্ত প্রৌঢ় ব্যক্তি, যাকে চিকিৎসক শ্রম করতে নিষেধ করেছিলেন বলে সে আগের চাকরিটা করতে পারেনি। তাকে দিনের পর দিন প্রবল দুশ্চিন্তা এবং অনিশ্চয়তার মধ্যে দিয়ে লড়াই করে যেতে হল নিজের জীবিকার জন্য। প্রতিদিন আরো বেশি করে চিনতে হল-- অপর প্রান্তের মানুষ কেমন অমানবিক হয়ে উঠছে। সব কিছুই কেমন যন্ত্রবৎ, অসংবেদনশীল, স্যাডিস্টিক। এবং শেষের সেই আউটবার্স্ট... তাও এক ধাক্কা খেতে খেতে কোণঠাসা হয়ে যাওয়ার প্রভাব। দিনের পর দিন এই স্ট্রেস আর সামলাতে পারল না ড্যানিয়েল, ঠিক যেদিন এক ব্যক্তি আইনী সাহায্যের পরামর্শ দিয়ে জানালেন আশ্বাস দিলেন-- দুরবস্থা কেটে যাবে; সেই দিন-ই আর একটি অ্যাটাকের পর মৃত্যু হল ড্যানিয়েলের।
দর্শক ভেবেছিল কোথাও একটা সিলভার লাইনিং দেখা যাচ্ছে, সেখানে জল ঢেলে দিলেন পরিচালক।
ড্যানিয়েলের ফিউনারাল হচ্ছে সবচেয়ে শস্তা ব্যবস্থায় -- "pauper's funeral"
প্রত্যাশা মতোই, কেটির থেকে আসছে ড্যানিয়েলের টেস্টিমনি-- "Dan wasn't a pauper to us. He gave us things that money can't buy.... this lovely man, had so much more to give, and that the State drove him to an early grave."

সিনেমার শেষ হচ্ছে, ড্যানিয়েলেরই লেখা একটি চিঠি দিয়ে, যা কেটি পাঠ করছে তার ফিউনারাল সার্ভিসে--
"I am not a shirker, a scrounger, a beggar, nor a thief. I'm not a National Insurance Number or blip on a screen... I don't accept or seek charity. My name is Daniel Blake. I am a man, not a dog. As such, I demand my rights. I demand you treat me with respect. I, Daniel Blake, am a citizen, nothing more and nothing less."

ভারতীয় দর্শক হিসেবে সিনেমার ক্রেডিট দেখতে দেখতে কিছুক্ষণের জন্যেও মনে আসে-- প্রশাসন, শাসক, রাষ্ট্র এক একসময়ে কিছু একটা নিয়ম নিয়ে এসেছে। কখনো সন্ধ্যেবেলা কখনো মধ্যরাতে ঘোষণা করে দিয়েছে কিছু। যার ঘাড়ে কোপ পড়ল, সে ছাড়া কেউ বুঝবে না-- একটা সিদ্ধান্তে কোথায় কী ঘটে গেল। কতগুলো ফিউনারাল সার্ভিস এভাবেই হয়ে গেল কত মানুষের, যা নেহাৎই আনটাইমলি... অপ্রত্যাশিত... এক প্রকার হত্যা। যার দায় রাষ্ট্র ছাড়া আর কারো নয়। অথচ রাষ্ট্রর হাত-পা-মুখ নেই। কিছু মানুষই বসে চালাচ্ছে সব কিছু।
'I demand my rights. I demand you treat me with respect.'-- চাপা পড়ে যাচ্ছে ছ-হাত গভীর মাটিতে, ছাই হয়ে ভেসে যাচ্ছে নদীতে, ধোঁয়া হয়ে উড়ে যাচ্ছে আকাশে, বেওয়ারিশ পড়ে আছে মর্গে।












Comments

আরও পড়ুন

কবিতা সিরিজ

বি শে ষ সা ক্ষা ত কা র : শ্রী সন্দীপ দত্ত

কবিতা

কবিতা