Posts

Showing posts with the label নিবন্ধ

লিটল ম্যাগাজিন ও ফিনিক্স মিথ

Image
  সাম্প্রতিক সময়কে যাঁরা পড়ছেন, লিখছেন, লেখা প্রকাশ করতে চাইছেন এবং লিটল ম্যাগাজিনের জগতে পা রেখেছেন তাঁদের অনেকেরই মনে হচ্ছে 'লিটল-এর ধারণ ধরনের বদল ঘটেছে'। অত্যন্ত সংগত এই মনে হওয়া। এবং অভিনন্দনযোগ্য।  সাধারণ দৃষ্টিভঙ্গিতে এই বদল স্বাভাবিক। জীবন ও বস্তুর চলমানতার যে ধর্ম তা-ই আমাদের এই নির্বিশেষ দৃষ্টি দিয়েছে। কিন্তু যে নিয়মে চলমানতা বজায় থাকে, এক কথায় যাকে আমরা শক্তি বলি, সেই শক্তির নিরিখে সাধারণের মধ্যেও 'বিশেষ' থাকে যা বস্তু বা জীবনকে ভিন্ন- ভিন্নভাবে 'বিশিষ্ট' করে। বস্তু বা জীবনের উন্মেষলগ্নেই এই 'বিশেষ'-এর আবির্ভাব বা বলা যেতে পারে 'বিশেষ'সহ সাধারণে জন্ম। তাই বদল বুঝতে হলে, 'শক্তি'কে মনে রাখতে হবে। বদল মানে রূপান্তর। রূপান্তর মানেই শক্তির রূপান্তর। তা হলে লিটল ম্যাগাজিনের বদল মানে তার শক্তির রূপান্তর-- একে শক্তির নিত্যতাসূত্র অনুসারেও ভাবা যেতে পারে।  আবিশ্ব আধুনিক কবিতা ও ছোটগল্পের জন্ম আর লিটল ম্যাগাজিনের জন্ম প্রায় সমসাময়িক, একজন ছোটগল্পকার হিসাবে ভাবতে ভালো লাগে যে, ছোটগল্প ধারণের তাগিদেই লিটল ম্যাগাজিনের জন্ম হয়েছিল-- এই ভাবনা...

বীথিকা ধরে হেঁটেছে দীন

Image
  (ক) প্রত্যেকের বুকের পাশে একটা টলটলে কালো দিঘী থাকে। যে দিঘীগুলো বর্ষায় সাদা শালুকে ভরে ওঠে। কালো জলের গন্ধ ছড়িয়ে পড়ে গোটা শরীরে যেভাবে সাজের কাজল ছড়িয়ে পড়ে চোখের তলা জুড়ে। তারপর সমস্ত শরীরের মাংসপিণ্ডকে পাঁজা কোলা করে তুলে নেয়, সহসা রেখে আসে পাপড়িদের কাছে। ভুলগুলো বেছে বেছে তুলে নেয়, খুদকুঁড়োর মতো ছুঁড়ে ফেলে দেয় জলেদের গানে। যে গানগুলো বাজে, খারাপ, ডানা ভেঙে যাওয়া মথেদের মতো অদরকারী। তাদের পাশ কাটিয়ে সবাই মেতে ওঠে শালুকের রঙ্গে, কালো রঙ সরে যাওয়ার মহোৎসবে। কালো রঙ সরে যায়, টগবগ করে উঠে আসে সাদা শালুকের প্রজন্ম। সবুজ জলের কল্লোলে প্রজন্মরা হেসে ওঠে, ধুপকাঠি জ্বালায়, মোচ্ছব বসায়, তারপর হইহই করে জড়ো হয় সাদা শালুকদের গোড়ায়। বিস্ময়ে তাকিয়ে থাকে ওরা। ওদেরও শেখানো হবে সব অপমান মুখ বুজে শুষে নিতে হয়, সব কান্না বৃষ্টিতে আড়াল করে নিতে হয়, সব মন খারাপ সুখী ঘরের কোণে একপাশে চাপা দিয়ে রেখে দিতে হয়, সব বিষন্নতা ভুলে যেতে হয়, দুঃখগুলোর কোনো নাম দিতে নেই। ওরা শিখবে সুখী হতে— কালো জলের উপর দাঁড়িয়ে কিভাবে কালো জলকে সুনিপুণভাবে আড়াল করা যায়। সুখী মাংসপিন্ডের দল ...

নগ্ন দিনলিপি— কবিতা সিরিজ

Image
  ২৪ শ্রাবণ ১৪৩১  আমিও একটা মেয়ের বাবা ---  এই সামান্য বাক্য উঠে দাঁড়াতে পারছে না  অথচ কী হালকা শব্দগুলো ! ওদের তো ফড়ফড় করে উড়ে বেরানোর কথা  সেই যবে গর্ভের অন্ধকার থেকে বেড়িয়ে  উড়তে উড়তে আমার সামনে এসে ওরা  পাশাপাশি বসল---   তারপর থেকে আমরা একসঙ্গে কতই না উড়েছি  অথচ আজ এই সামান্য শব্দগুলো   একসঙ্গে  উঠে পর্যন্ত দাঁড়াতে পারছে না।  ২৯ শ্রাবণ ১৪৩১   ওরা তোমাকে ভয় পায় না  আমাকেও না  ওরা শুধু মাথা গোনে  যদি কোথাও ভিড় হয়ে থাকে  যদি লেখা থাকে পদত্যাগ চাই  একটু দাঁড়িয়ে যাও  ওরা তোমাকে ঠিক গুনে নেবে  সংখ্যার অতিরিক্ত তুমি কি কোনওদিন কিছু ছিলে!   ৫ ভাদ্র ১৪৩১  যে কথা লেখার ছিল  লিখতে পারিনি কখনও  ছোটবেলায় এক বন্ধু মা তুলে কথা বলেছিল  বলেছিলাম টেনে জিভ ছিঁড়ে নেব তারপর আরও বহুবার বহু প্রসঙ্গে...  এমনকি সন্তানের ঔদ্ধত্যেও বলেছি  জিভ ছিঁড়ে নেব  অথচ এখন  এই এত এত এবং এত কথার পরেও  আমি ভাবছি কীভাবে লেখা যায়  জিভ ছিঁড়ে নেব অলংকরণ -...

'সারমেয় শাবকদের স্মৃতি' কবি নীলাঞ্জন চক্রবর্তী

Image
  (১) দুটি ভাইবোন দুটি ভাইবোন পিছু পথ ধরে চলে যাচ্ছিল দূরে একটু যে বসতে বলবো সেইটুকু জায়গা ছিলনা আর জায়গা কি সত্যিই ছিলনা? নাকি মুহূর্তের সংশয়তা স্তব্ধ করেছিল আমায় একটু যে জল-মিষ্টি দিতে হতো হায়রে আমার সৌজন্যতাবোধ! নেহাতই কি চক্ষুলজ্জার অভাব? নাকি নিয়তির অসহায়তা দারিদ্রের আঁচলে ঢাকা! দুটি ভাইবোন মুক্তির পথ ধরে চলে গেলো আজ দূরের থেকেও দূরে আমার শুন্য দুটি চোখ আর নিঃস্ব দুটি হাত তাদের শৈশবটুকু ছাড়া আর কিছুই রাখতে পারেনি ধরে... (১৭.০২.২০২৪, দুপুর ৩:২৫ ) (২) বন্ধুরতা পুরনো বন্ধুর সাথে বচসা হওয়া ভালো সমস্ত বিলাপ, প্রলাপ উগরে দেওয়ার পর শান্তিতে খোসা ছাড়িয়ে বাদাম চিবোনো যায় খোশ গল্পে ফের মুখরিত হয় চায়ের প্রতিটি চুমুক জীবন তো সামান্য আজ আর কালের সঞ্চয় তারপর পরশুদিন সমস্ত খরচ শেষে বাড়ি ফেরার পালা সেই অবকাশে একটা দিনের অর্ধ একটি বেলা পুরনো বন্ধুর সাথে বচসা হওয়া ভালো নতুন কিবা পুরনো সমস্ত বন্ধুর সাথেই বচসা চলুক নিরন্তর, অভিমান জমুক পাথর পাথর শীতল মা বাপ তুলে খিস্তি-খেউড় হোক ক্ষতি নেই শুধু সৌজন্যতার আঁধার সৃজিত হলে বন্ধুর অতি পরিচিত ঠিকানাও হয়ে যায় দূর্গম ও বন্ধুর (০৬ মার্...

প্রচ্ছদ আখ্যান

Image
  কাঁসাই নদীর থেকে সামান্য দূরেই আমাদের ছোট গ্রাম। মুকুটমণিপুর থেকেও খুব বেশি দূরে ছিল না আমার ছোটবেলার সেই বিদ্যুৎবিহীন গ্রাম। আলো-ঝাঁঝালো, শব্দে-জব্দ কলকাতার থেকে আমরা পালিয়ে বাঁচতাম স্কুলের ছুটি পড়লেই। “এখন তো জলই নেই, আগে কতবার বন্যা হয়েছে। আমাদের আটচালা অবধি জল থইথই করত। কত মাছ চারদিকে! মাছ ধরার ওটাই তো সময়।” জাল বুনতে বুনতে বলত দাদু। “এখন হাঁটু অবধিও জল ওঠে না। মাছটাছ আর নেই। ওই দহগুলোতেই এখন মাছ ধরে সবাই। কিন্তু কোথায় মাছ!”  বন্যার বিভীষিকা সম্পর্কে বিন্দুমাত্র জ্ঞান না থাকা শিশুমন বন্যার জন্য আকুল হয়ে উঠত। আহা, যদি আবার বন্যা হত, মাছ ধরতে ছুটতাম দাদুর সঙ্গে! যার জন্য কাঁসাইয়ে এখন জল নেই, সেই মুকুটমণিপুরের বাঁধটি হয়ে উঠত চক্ষুশূল।  দাদু জাল নিয়ে চলত ছানাতুপার দিকে। পিছনে আমি। উৎসাহে, আনন্দে আত্মহারা।  ছানাতুপা জায়গাটা ছিল গ্রামের বাইরে, হাঁটা পথ, মিনিট দশেকের বা আরেকটু বেশি। সেই যুগে কারোর হাতেই ঘড়ি নেই। ঘড়ি পরার চলও ছিল না। গ্রামের সময় চলত প্রকৃতির নির্দেশে। তাই দশ মিনিট না আধ ঘণ্টা, তা আজ আর মনে পড়ে না। তাছাড়া সময় কেটে যেত দাদুর নানা গল্পে। সে রূপকথাই হোক ব...