Posts

সর্বশেষ

ছোট গল্পগুলি

Image
  রবীন্দ্রনাথের হাতেই ছোটগল্পের জন্ম হয়েছিল এই ঐতিহাসিক সত্যের কথা মনে রাখলে স্পষ্ট করে বলা যায়, বাংলা ছোটগল্পের শতবর্ষপূর্তি' তখনো আরদ্ধ হয়নি। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর যখন প্রায় গল্প লেখায় শিথিল চেষ্টা চালাছেন, সে সময়ে তিনি গল্পরচনায় আত্মসমর্পণ করেছেন। যদি 'প্রবাসী'তে (১৩৩৮) প্রকাশিত তাঁর 'বাঘ' গল্পটিকে আদি সাহিত্যপ্রতিষ্ঠ গল্প বলে ধরে নিই তবে বলা যায় গল্প লেখক মনোজ বসুর( জন্ম ২৫ জুলাই ১৯০১ খ্রীষ্ট জন্মাব্দ) সাহিত্যিক আবির্ভাব ত্রিশ বছর বয়সে আরদ্ধ হয়েছিল।"  যাই হোক মূলত এগুলি বিষয় নয়। আজ যে চারটি ছোট গল্প সম্মুখে রেখেছি তা নিয়ে আপনাদের পাঠ অভিজ্ঞতার আশায় থাকবে পত্রিকা ও লেখক এক‌ই সঙ্গে। কয়েকটি ভিন্ন স্বাদের ছোট গল্পকে একসাথে রাখা, সম্পাদনার জায়গায় উপস্থাপনা বলতে স্বাচ্ছন্দ বোধ করবে -এবং'। গল্পগুলি পাঠ করবার জন্য লেখকের নামে ক্লিক করলেই মূল গল্পে পৌঁছে যাওয়া যাবে— প্রথম   মন দিয়ে 'কাজ' শিখলো শিউলি। শিখলো,চুলে তেল দেওয়া চলবে না। ধীরে ধীরে তাতে জট পড়বে। পড়ুক, না পড়লেই ক্ষতি। যত তাড়াতাড়ি পড়ে ততই সুবিধে। সেদিক থেকে নজর সরাতে হবে। আয়েশ করে পান সেজে খ

একটি কবিতা সিরিজ

Image
  নিসর্গতাড়িত (১) বিষন্নতা, অংশত ঝুঁকে আছে, দূর ঝাউবনে গুলিগোলা চলার পরে বেশ শুনশান রাস্তাটি— একটি পাখি শুধু মেঘের দিকে তাকিয়ে ছিল সামান্য টাকার বিনিময়ে, তাহলে সব বিকিয়ে গেল? আর আমাদের রাস্তা হয়ে গেল ওদের রাস্তা! ইথারে কবেকার পুরনো গান ভেসে চলেছে  সময় এক হাত-পা ভাঙা পাথর,         কোমরে ফিক লাগা সাইটিকা আগুন-ঝড়ে পুড়ছে এতদিনের জমানো ভুল দস্তাবেজ। (২) কালো চশমার ভিতর থেকে দেখা সমুদ্র, ঢেউহীন— ভেসে চলেছে উদ্দেশ্যবিহীন নীল নক্ষত্র, ভ্রষ্ট দেবশিশু দূরে দূরে শোকচাপা ঝাউবন।                 উদ্বেগে হাওয়ায় উড়ে যেতে চায়— কিছু না পাওয়া বাতাস আজ একটানা উড়িয়ে নিয়ে  চলেছে শতছিন্ন পাতা,             দিশেহারা গোঁয়ার পাতাটি কতদূর যাবে?  অন্তহীন ধুলোমাখা রাস্তা                        বারবার ছুটে গেছে নিসর্গতাড়িত। (৩) বাবা মা তখনও ঘুমিয়ে  দাঁড়ের ময়নাও বুঝি ঘাড় গোঁজা অন্ধকারে সিঁড়ি গুলো                       নেমে গেছে                                    রহস্যের পাতালঘরে। ওখানে রয়েছে ঢের, টিকটিকি আরশোলা  ডেঁয়ো পিঁপড়ের সারি, চামচিকে  আড়ি পেতে বসে থাকা বাস্তুসাপ  টেবিলের ভাঙ্গা পা, বালিশ এর খোল বিশাল এক ল্

উপসংহার থেকে ফিরছি —কবিতা সিরিজ

Image
  (১) মাঝে মাঝে মনে হয়  একদিন বোবা হয়ে যাবো  কোটি কোটি কথা মরে পচে লাশ। লাশের গন্ধ সয়ে গেছে নাকে,  অবচেতনায়  নিজেকে নিজের কাছে বড়ো ভয় লাগে  মাঝে মাঝে মনে হয়  প্রায় দু লক্ষ বছর হলো আমি কাঁদিনি। মনে হয়,  আধ-দামড়া ঝকঝকে এক দিনে ব্যস্ত চৌরাস্তায় দাঁড়িয়ে রয়েছি আর  গোটা দুনিয়ার অলক্ষ্যে খুঁজে চলেছি একটি নিখুঁত হনন। (২) সেদিন ভোর তিনটেয় নিজের হাতে খুলতে পেরেছি জট  পাঁচ-ফুট-আট এক উপদ্রপ  নাক না ডেকে কীভাবে ঘুমাতে পারে আমি প্রথম দেখছি  দেশলাই আছে। চাদরে ছড়ানো অবিন্যস্ত কিছু চোঁয়া মেটাফোর ছাড়া সেভাবে কোনো ডাইরি নেই  ঘুমে ডুবে মহল্লা। ধীরে ধীরে গাঢ় হচ্ছে অ্যালুমিনিয়াম আলো      শুধু একা ছেড়ে যেতে নেই বলে পাহারা দিচ্ছি নিজেকে।                                           (৩) একটি দরজা  বন্ধও নয়, খোলাও নয়। দাঁড়িয়েছি   জৈষ্ঠ্যের সন্ধ্যায় অদ্ভুত হিম। আরেকটু রাতের দিকে  একমুখী সিঁড়ির গভীর থেকে উড়ে এসে  শরীর দখলে নিচ্ছে ইউটোপিয়ান বিষাক্ত  মথ মথ মথ মথ মথ  পরিত্যক্ত নির্জলা নলকূপ, ল্যাংটো শিশুটা ঝুলে আছে তার হাতে। রক্ত উঠে আসছে, গন্ধ আসছে তারও আগে। অলংকরণ—নম্রতা বালা            

জুজুতন্ত্রের সমূহ শ্বাপদ এবং হুজ্জতি

Image
  —দেবার্ঘ সেন  কিছুই চমৎকার হচ্ছে না, কিছুই সার্থক হচ্ছে না। কেমন যেন একটা ম্যাদামারা দিন কাটছে আর দীর্ঘ হচ্ছে তালিকা। নিজেকে প্রশ্ন করছি, নিজেকে খুবলে ধরছি, নিজেকে ক্ষত করছি, নিজেকে নিজেই গ্রেপ্তার করছি সময়ের ব্যভিচারে। এসবের মধ্যে কবিতা পুড়ে যাচ্ছে, জন্মাচ্ছে ছাই, সেই ছাই মেখে বসে আছি, ছাই উজ্জ্বল হচ্ছে, আমাকে চিনিয়ে দিচ্ছে অচৈতন্য নাবালিকা কুয়াশায়, ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে আমার নিভৃতি, মুক্তি চাইছে আমার শরীর-শরীর দ্বন্দ্ব, মুক্তি আর ছাই শত্রু হয়ে উঠছে পরস্পর, এভাবেই সংঘর্ষ লাগছে, দড়ি টানাটানি করছে অস্তিত্বের সমস্ত প্রহরী, প্রহরীরা প্রশাসনিক ক্যারাটে খেলছে, দুর্ধর্ষ গতিতে হার্ডওয়্যারের দোকান থেকে উড়ে আসছে পেরেক, সব চক্রান্তের শিকড়ে রয়েছে বাতাস, বাতাসের হাতে হাতুড়ি, হাতু্ড়ি দিয়ে পেরেক গাঁথছে অনুভূতির মাছি, মাছিরা রাতকানা হলেও দিব্যি ওভারটাইম করছে, এভাবেই আমার অধিকতর কমা বেড়ে যাচ্ছে, তাই এখানে একটা নিরপেক্ষ দাঁড়ির প্রয়োজন। দাঁড়ি দিলাম। প্রয়োজন দেওয়ালে মাথা ঠুকছে, ঠুকতে ঠুকতে চটিয়ে দিচ্ছে দেওয়াল, দেওয়ালের কানে দুল হয়ে ঝুলছে মানুষ, মানুষের গলা। গলার মধ্য দিয়ে আশ্চর্য শিহরণে আমার ভেতরে প্রবেশ

সম্পর্কগাছ— কবিতা সিরিজ

Image
  (১) ভালোবেসে বহুবার ঠকেছি। সম্পর্কের ভিতর যতই রোদ উঠুক কোথাও যেন মেঘ লুকিয়ে থাকে। কখনো কখনো সেই মেঘ সরে যায়। দূরে কোথাও বৃষ্টি হয়ে প্রাণে শীতল পরশ ছোঁয়ায়। কিছু মেঘ ঘাপটি মেরে অপেক্ষা করে। ক্ষুধার্ত নেকড়ের মতো। শরীর থেকে খুবলে খুবলে মাংস বার করে।   সকাল থেকে বৃষ্টি পড়ছে। অঝোরে বৃষ্টি। শরতের বৃষ্টি। এই মেঘের ভিতর কি লুকিয়ে আছে সম্পর্কের রোদ? বৃষ্টির ফোঁটা গায়ে লাগে। ভাঙা নৌকায় বসে থাকা কোনো ক্ষুধার্ত নেকড়ে কি এগিয়ে আসবে? জলের ভিতর যত ডুব দিই, ততই মাছ, ততই গভীরে... কাউকে বিশ্বাস করছে না... ভেসে থাকার আনন্দ মানুষ বোঝে যখন সে ডুবতে ভুলে যায়... (২) বিশ্রী হাওয়া বইছে। যেন বাঘের দাঁত। গায়ে এসে দাগ বসিয়ে দেবে। সারাজীবন কতরকম দাগ নিয়ে আমরা জীবনমঞ্চ সাজিয়ে তুলি, কিন্তু হাওয়ার দাগ! এই হাওয়ার ভিতর তুমি দাঁড়িয়েছিলে, বলেছিলে বসন্তবাতাস। শীত ফুরোবার আগেই শীত জাঁকিয়ে বসল। তুমিও তোমার অধিকারে শান দিয়ে হয়ে উঠলে ধারালো। এখন ভাবার, হাওয়ার ভিতর যে দাঁত তা কি কোনো চিরুণি কারখানায় গ্রহণযোগ্য হবে? (৩) সবাইকে খুশি করা তোমার একমাত্র কাজ। তুমি জানো না, কে কীভাবে খুশি হবে। জোকার সাজো, ভাঁড় হও কিংবা বহুরূপী ধারণ

কথকতা(পত্রকথা)— সৌমাল্য গরাই

Image
  কথকতা- ১ জ্বলে ওঠা আলোর মতো আমরা সহজ হয়ে উঠব অথবা নেভানো ধূসর অন্ধকারের মতো।সেই ধূসর অস্পষ্ট অন্ধকার আত্মারূপে যারা ছায়া ফেলে নিভৃত দহলিজে। এক একদিন কেমন ঝড় আসে কালোজামা পরে,যেন প্রকাণ্ড দৈত্য সব লুঠ করবে—গাছের ফুল থেকে শুরু করে ফল, মুকুল, গন্ধ, অশ্রু সব। যাবার সময় ফেলে রেখে যাবে কালো জামাটি। আকাশ থেকে যে শিলা পড়ে তা আসলে মেঘেদের টুকরোটুকরো মনখারাপ, তারা জানে মনখারাপ বেশিদিন জমালে অসুখ বাড়ে, সেগুলোকুড়িয়ে যত্ন করে রেখে দেয় কোনও এক অস্পষ্ট যুবতী, জানে আগামী মনখারাপের দিন ওগুলোকাজে লাগবে,আসলে মনখারাপ গলে গেলে জল হয়, শিলাও তাই। শুধু পুরনো জমিতে এবারও বোরো ধান হবে না ভাল,  মাটি যে সামান্য আঘাতও সইতে পারে না, দেহাতি বউটির মত, যে ভাবে গায়ে আগুন লাগিয়ে তিলে তিলে মরবে,  শোক পুড়াবে, যেন একটাঅন্ধকারকে পুড়িয়ে শেষবার আলো জ্বেলে নেবে।  ঝড় থেমে গেলে ছিন্ন অবশেষগুলি নিস্পলক পড়ে থাকে, ব্যাধের শিকার করা পশুরা যেরকম, মাঝে মাঝে মনে হয় পালাতে না পারা আর পালিয়ে যাওয়া  দুটোই মৃত্যুর কাছাকাছি। ঠিকঠাক কিছুই লিখতে পারি না,ঝড়ের কথা,যেমন পারি না মৃত্যু বা জন্মের কথা লিখতে,  যা পারি অনন্তমধুর ভিক্ষুক সাজতে, পথে

ভাদ্র—কবিতা সিরিজ

Image
ভাদ্র দূ রে... উলু দিচ্ছে মেয়েরা তার কলমিলতার মতো পা দুখানি ডুব দিচ্ছে আলতায় এরপর মেয়ে ঘরে ঘরে লক্ষ্মীশ্রী ছড়াতে ছড়াতে ধানের ছড়ার মতো দুলবে আর সকলকে শান্তি দিয়ে যাবে আমাকে তুই ডেকেছিলি ভাদু বলে আজ দেখ চারপাশে ভদ্রেশ্বরীর শরীর রোদ রোদ রোদ আর রোদ্দুর! তুই চোখ বোজ কোলে এসে শো আমার জল যদি আসে নয়নে, আমি ঠোঁটে রাখছি তোর ঢেউ ঘুমো তুই এই অফুরান চন্দন স্টেশনের চবুতরায় আমার কোলে দোল দোল দুলুনি ঘুমিয়ে থাক আমি তোরে দেখি আর পাতা ঝরে ঝরে পড়ুক তোর মুখে, গায়ে, পায়ের শিকলে... আজ ভাদ্রমাস আজ বড় আকাঙ্ক্ষার মাস অনঙ্গ! তোকেই সাজাচ্ছি আমি, গ্রামঘর সাজাচ্ছে তোকে ধূপ দিচ্ছে চৌকাঠে, ধুনো দিচ্ছে সংসারের প্রাণে আমরা প্রেমিক রোদ, আমরা পালিয়ে এসেছি আজ এই মন্দিরে বিয়ে কর আমাকে আবার... ভাদ্র ২ আজ এই যে খুউব রোদ করে আছে চারপাশে এই রোদ্দুর তোমার সারাশরীরে মাখিয়ে দিই আমি হাতে, পায়ের পাতায়, নাভির রোমে, তোমার অবোধ মুখটিতে কথা বলো টুপটুপ লালা পড়ে আমার হৃদয়ে আমি তার আলপনা এঁকে রাখি অশথের নিতল পাতায় এসো রোদ-স্নান করাই তোমায় রোদের জ্যোৎস্না দিয়ে বুকের দিগন্তে আঁকি পাখি ছোট ছোট উত্তীর্ণ পাখি তোমার ঠোঁটের থেকে চুমু নিয়ে উড়ে আস

বীথিকা ধরে হেঁটেছে দীন

Image
  (ক) প্রত্যেকের বুকের পাশে একটা টলটলে কালো দিঘী থাকে। যে দিঘীগুলো বর্ষায় সাদা শালুকে ভরে ওঠে। কালো জলের গন্ধ ছড়িয়ে পড়ে গোটা শরীরে যেভাবে সাজের কাজল ছড়িয়ে পড়ে চোখের তলা জুড়ে। তারপর সমস্ত শরীরের মাংসপিণ্ডকে পাঁজা কোলা করে তুলে নেয়, সহসা রেখে আসে পাপড়িদের কাছে। ভুলগুলো বেছে বেছে তুলে নেয়, খুদকুঁড়োর মতো ছুঁড়ে ফেলে দেয় জলেদের গানে। যে গানগুলো বাজে, খারাপ, ডানা ভেঙে যাওয়া মথেদের মতো অদরকারী। তাদের পাশ কাটিয়ে সবাই মেতে ওঠে শালুকের রঙ্গে, কালো রঙ সরে যাওয়ার মহোৎসবে। কালো রঙ সরে যায়, টগবগ করে উঠে আসে সাদা শালুকের প্রজন্ম। সবুজ জলের কল্লোলে প্রজন্মরা হেসে ওঠে, ধুপকাঠি জ্বালায়, মোচ্ছব বসায়, তারপর হইহই করে জড়ো হয় সাদা শালুকদের গোড়ায়। বিস্ময়ে তাকিয়ে থাকে ওরা। ওদেরও শেখানো হবে সব অপমান মুখ বুজে শুষে নিতে হয়, সব কান্না বৃষ্টিতে আড়াল করে নিতে হয়, সব মন খারাপ সুখী ঘরের কোণে একপাশে চাপা দিয়ে রেখে দিতে হয়, সব বিষন্নতা ভুলে যেতে হয়, দুঃখগুলোর কোনো নাম দিতে নেই। ওরা শিখবে সুখী হতে— কালো জলের উপর দাঁড়িয়ে কিভাবে কালো জলকে সুনিপুণভাবে আড়াল করা যায়। সুখী মাংসপিন্ডের দল শালু