শৌনক দত্ত'র কবিতা চার।
০১|| পরকীয়া
অন্য বিছানায় শুয়ে
সমুহ সময়
ধাতস্থ হবার
আগে অন্যকেউ
মুখস্থ করে ফেলে
নকশীকাঁথা বুনন।
বৃষ্টির নকশীকাঁথা তুমি আমাকে উপহার দেবে
আর
আমি তোমাকে উপহার দেব নিঝুম দ্বীপের শাড়ি।
০২|| ডুবসাঁতার-৩
রোদ হরিণ ফিরে গেছে। মুখরিত পাখিদের মতো আমাদের যাপন,
তখন বুকের সন্ধ্যায় সাগরদীঘির আড্ডা।
কোচবিহার রাজবাড়ীর শূন্যতায় তোমার মুখোমুখি দাঁড়িয়েছি,প্রথম।
তখন সেখানে জাদুঘর ছিলো না। সেদিন ও শ্রাবণ।আমার জন্মদিন।
তুমি ফিরে গেছো এই দিনেই বহু বছর আগে আকাশের সাথে।আজ হৃদয়ে তোমার জাদুঘর।
বাইশে শ্রাবণ. জন্ম নাকি মৃত্যু? সেই খতিয়ানে লিখে দিয়েছি
রক্তের উত্তপ্ত ঘামে ভাসতে থাকা উন্মুল উদ্বাস্তু মানুষের শেষের কবিতা!
০৩|| ডুবসাঁতার-৬
আমার মা যখন গাইতো 'আমার সকল দুখের প্রদীপ'প্রায়ই উঁচুতে গিয়ে গলা খুলতো না মা-র, গলা বুজে আসতো।আমার মনে হতো মা কাঁদচ্ছে গানে গানে।মা কি কখনো গলা খুলে গাইতে পেরেছে...
'আমার মুক্তি আলোয় আলোয়'
আমার বাবার খুব বাগানের শখ। বাহারী গোলাপের কালেকশনে কেবল কোথাও মা নেই!আমার বাবা যে রাতে সন্ন্যাস নিতে ঘর ছাঁড়লো সেই রাতে মা ও বদলে নিলো জীবন
রাত্রি মেখে শোক চোখের চতুর্পাশে, সংসারে প্রিয় মুখের শহরে, প্রিয় অধরে-আঁখিতে আশ্রয় লিখে মা তারপর থেকে 'বিনোদিনী'।
আমার ডাকটিকিট জমানোর খুব শখ। পচিঁশ বছর আগে জেনকিন্স আমায় দিয়েছিলো ছোট্ট দোকান টিকিটের ভিড়। দোকানটা কি আজো আছে? আজো কি কেউ ডাকটিকিট কেনে? আমার খাতা জুড়ে দেখি দেশ-বিদেশের টিকিট ছবি বদলে সেঁটে নিয়েছে আতঙ্ক, জঙ্গিবাদ।ওখানেও প্রেম নেই।
আমাদের ডাকটিকিট, ডাকটিকিট সময় উড়ে গেছে।সময়ের গোপন ঠোঁটে জেগে আছে বিনিদ্র চুম্বন! জীবন অংকে আমরা তিন তিনটি সরল রেখা কেবল ত্রিভূজ হয়ে বেঁচে আছি বুকের ভেতর শূন্যতার বৈভবে কোচবিহার রাজবাড়ী...
০৪|| ডুবসাঁতার-১২
প্রাচীন ঘ্রাণ খুঁজে খুঁজে কতদূর বুকের দরজার কাছে খরস্রোতা জল। আমার বাবার রোমন্থনে ভুলের ক্লান্তি লুকোনো কথা। আমার বাবার গোলাপের বাগান...
কথাহীন,শব্দহীন রাত বালিশের ফাঁকে মুখ ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদে অবুঝ অভাব। মা তবু পাখি। খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে হাঁড়িতে বসায় মুখরিত সকালের রোদ! আমার মায়ের বাইফোকাল চশমা...
বাবা খুঁজে খুঁজে গোলাপ কেনে। চারার সাথে দেশ।আনন্দমেলার সবুজ নক্ষত্র ভাঙতে ভাঙতে খোলা জানালায় শুকতারা পড়ি আমি আর ভাই। ভাই আমার সূর্যদীঘল বাড়ী, আমার ভাই আঙুলে মেখেছে আগুন...
বাবার গোলাপ গন্ধহীন, যত্নহীন ইটের খোলশ।বৃদ্ধ গোলাপের পাশে মুখোমুখি বয়স! বাবার ব্যক্তিগত রোদ মেখে নিয়ে আমার দাঁড়ানো হয় না কালো গোলাপের পাশে। খোঁপায় পোষা এক ঝাঁক পাখি বাঁকা বিকেল রেখায় উড়িয়ে মা যখন চশমা খুলে চোখ রাখে, আমি তখন কবিতার সাথে, ভাইয়ের আঙুল থেকে ঝাঁপতাল পাখা মেলা চিলের মতো...
শৈশব কতোটুকু দূরে আছো আমাদের দগ্ধ দারুন দ্রাবিড় সময়ের বন্দর থেকে কতোটুকু দূরে একখানা ঋজু মাস্তুল মেলে একা....
Comments