চিরপ্রশান্ত বাগচী

এক গুচ্ছ কবিতা

চিরপ্রশান্ত বাগচী 






|| মুহূর্তে জীবনানন্দ


তর থেকে তম হয়ে উঠেছে এখন অসুখ ও অন্ধকার। 

আপনার কথাই বেশি করে মনে পড়ছে এখন। 

সভ্যতার এমনই অবনমন, পুরনো ইতিহাসের পুনরাবির্ভাব। 

ন্যায়-বিচার অধিকার শিক্ষা--- সমূহ শব্দ থেকে এখন 

বিদ্রুপ-হাসির সংকেত মুহুর্মুহু মস্তিষ্কে রেখাঙ্কিত। 

স্পষ্ট বোধগম্য নয়, মানুষের কোনটা মুখ ও মুখোশ। 

তবুও আদমশুমারির সব আদমী লুঠপাট আয়োজনের পক্ষেই 

মাথা নত করে। 

কিয়ৎকাল পরে বাঁশ সম্পর্কে একটা স্বচ্ছ ধারণা...। 

শাসন ও শোষণ এমন পরস্পর-সম্পর্কিত যে, 

প্রতিবাদে সোচ্চার হলেই কণ্ঠরোধের বিপুল আয়োজন।

 

রাজপথ এ ভাবেই বুকে ধরে দুঃসহ বেদনার ভার। 


কিন্তু ধর্ম? 

রাজার পোশাক শুধু নয়, চামড়া ছাড়িয়ে তাকে 

শূন্যে ঝুলিয়ে রাখবে ততদিন, যতদিন সূর্য জ্বলনশীল।




|| রতির্যা


সেদিন তোমার কণ্ঠস্বর শোনার পর থেকেই আমি নির্জন একটি দ্বীপে পৌঁছে গেছি। 

খনিজ পদার্থের মতন প্রতিটি শব্দ আমি ভাঙছি। 

দেখছি কতটা জ্যোতি-সম্ভব, পাউন্ড বা ইউরোর অধিক তার মূল্য-মান। 

সেখানে আমিই একা। 

শব্দ থেকে ধ্বনির কম্পাঙ্ক এবং কতটা শ্রুতিমধুর--- 

যা আমাকে যে-কোনও মুহূর্তে ক্রোধী করতে অপারগ, 

বরং, ঠিক মরীচিকা নয়--- ঠিক তারই মতো 

মধুর কোনও সর্বনাশ আনতে সক্ষম; আমি তেমনই কিছু অঙ্ক কষছি। 

তোমার কণ্ঠস্বর;  

আমাকে দীর্ঘক্ষণ আকাশের দিকে চেয়ে থাকতে বাধ্য করেছে। 

আমি ভুলে গেছি আমার পার্থিব যত জৈবিক ক্ষুধা লালচ ঈর্ষা অর্থ মোহ...

আমি অনুভব করেছি এক মেঘ-মেদুর ছায়া। অজানা এক সুঘ্রাণের সংকেত। 

আমার ঘুমন্ত শরীরের ওপর স্বপ্নের এক নক্ষত্র-চূর্ণ (কৃ. সমর সেন) ; 

যেখানে বিজ্ঞান নেই, শুধুই হিরক-দ্যুতি। 

কণ্ঠস্বর এমনই হতে হয়, যেখানে রূপ গোস্বামী চুপিচুপি এসে 

তাঁর এতদ্বিষয়ক গ্রন্থে একটি পাদটীকা রচনা করেন। 




|| আক্ষেপানুরাগ


এই জন্মে তোমাকে আর আবিষ্কার করতে পারব না আমি। 

কোথায় তোমার ঘাস মাটি জল শ্যাওলা--- 

কোনও ভাবেই জানা সম্ভব নয়। জরুরিও নয়। 

পুরুষের এ এক দোষ। জানোয়ার জেনেও নিজেকে বাঘ ভাবতে ভালবাসে। 

আর তোমরা সকলে গহন স্বপন সঞ্চারিণী...

এই জন্মে এই অবেলায় তোমার সঙ্গে দেখা হওয়া মানেই 

পাহাড় থেকে গড়িয়ে পড়া লাভা-স্রোতের সামনে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে থাকা। 

বারবার দহন-দগ্ধ হওয়ার প্রবল বাসনা। অথচ সে-সব কীভাবে সম্ভব!

তোমাকে দেখামাত্রই আমার পৃথিবী ও সূর্যকে বগলদাবা করতে ইচ্ছে করে। 

কারণ এগুলির সঙ্গেই সময়ের সম্পর্ক। 

একটু এদিক-ওদিক করে যদি নিজেকে বাঘের চেয়ে সিংহ করে তুলতে পারি!


পাঠক, ভাববেন না আমি জান্তব-জিঘাংসায় মত্ত। 

আসলে তারুণ্যের তেমন কোনও উপমা এই মুহূর্তে হাতের কাছে নেই। 

তাই পক্ষীরাজের পিঠে চড়ে, তোমাকেও সঙ্গে নিয়ে উড়ে চলেছি গ্রহান্তরে, কক্ষপথে। 

আর ক্রমাগত মাথা খুঁড়ে নির্ণয় করার চেষ্টা করছি, 

শস্য ক্ষেত ও খামারের পারস্পরিক-সম্পর্ক, রহস্য।








Comments

আরও পড়ুন

ছোট গল্পগুলি

উপসংহার থেকে ফিরছি —কবিতা সিরিজ

জুজুতন্ত্রের সমূহ শ্বাপদ এবং হুজ্জতি

বাসন্তী প্রেম/পিনাকী বসু

নগ্ন দিনলিপি— কবিতা সিরিজ

অবগুণ্ঠন সাহিত্য পত্র ও কিছু কথা— অমিতাভ দাস

সাহিত্য বাজারের হাতে বাংলা ভাষাটার অবস্থা বড়ই করুণ----দীপ শেখর চক্রবর্তী

একটি কবিতা সিরিজ

শুভ্র সরকার

সম্পর্কগাছ— কবিতা সিরিজ