নির্বাচিত তারককুমার পোদ্দার

নির্বাচিত কবিতা ছয়

তারককুমার পোদ্দার 


স্বপ্নময় দিন

এই যে হাওয়া, উতল হাওয়া
আসলে কোথাও বৃষ্টি থমকে আছে।
সেদিকেই অভিমুখ, জলজ সম্পন্ন পরিতাপ
পাতায় পাতায় অন‍্য গান, মৃদু আলো, স্বপ্নময় দিন

মনে করো একটা ছবি
স্থির
অথচ স্থির নয়

দিগন্ত কাঁপিয়ে বেজে উঠছে করতালি
একটা কিছুর ভেতর সাংঘাতিক জন্ম নিচ্ছে একটা কিছু

তেমন কোথাও ভাঙা সিঁড়ি, শ‍্যওলামাখা ঘাট,
তোমার আঁচলের গন্ধ
আর ফুরিয়ে যাওয়া একটা রাস্তা
দু'ধারের গাছ থেকে ফিসফিস কথামাখা রাস্তা
সেখানে পড়ে আছে ভাঙা অক্ষর
আর অজস্র ঝরা ফুল!



অচেনা হরফ

তবু সেই চিরচেনা, গড়িয়ে যাচ্ছে
নমিত স্তবক আর স্তব্ধতাটুকু
তখনই ঝমঝম আলো এমনই নীরব তার অজস্রতায়
তুমিও আসমানী চমৎকার পালকের ছবি
বাইরে তখনো কিছু উন্নাসিক চোখ
কি করে বোঝাব এত আলো চাইনি কখনো

ফিরে আসছি ফটক পেরিয়ে
পকেটে ভাঁজ করা অচেনা হরফ
বোতামখোলা বিকেলগুলোয় আঙুল নাড়িয়ে
ফিরে আসছি সিঁড়ি ভেঙে
যেদিকে নেমে গেছে কথা

আজও মাঝরাতে স্মৃতির মেদুরতায়
দ‍্যুতিগুলো ছড়িয়ে পড়ে!
নমিত স্তবক আর স্তব্ধতাটুকু


গন্তব‍্য

কেউ জিতে গেছে মানে তুমি হেরেগেছো, তা কিন্তু নয়
জীবন মানে কি শুধুই জড়িয়ে থাকা কিছু প্রচ্ছন্ন ঋতু!
জীবন মানে এমন উচ্চতায় পৌছোনো
মানুষ থেকে অন‍্য এক মানুষের দিকে

যদিও মানুষের টান সেই দিকেই থাকে
যা সে পায়নি
অথচ প্রত‍্যেকের জন‍্য কেউ কারোর নির্দিষ্ট!
আমি আর কোথাও নোঙর ফেলতে পারব না
কে জানে তোমার জন‍্য তুমিই নির্দিষ্ট হয়ে আছ!

কারোর জিতে যাওয়া মানে তুমি হেরে গেছ, তা কিন্তু নয়
যে পরাজিত তাকে জিতিয়ে দিয়ে
আরও উচ্চতায় পৌছে গেছ তুমি



খুঁজে পাই

বুকের ভেতর মস্ত আকাশ খুলে
তুই উড়ে বেড়াচ্ছিস মুক্ত পাখির মতো
এত ভালোবাসতে পারিস তুই!
দুপুর ঘনিয়ে এলে অসম্ভব নিচু গলায়
ছড়ানো চিঠির মতো অসংখ্য রঙ

আমি তো ধরতে চেয়েছি তোর
উড়ানের মধ‍্যে বৃষ্টি নামার অপূর্ব গুলমোহর!
কোথায় টান, যেন অন‍্য কোনোখানে জন্মদলিল
প্রতিসরণের গোপন গুহা!


কতটুকু পেরিয়ে এলি তুই
কতটুকুই বা সাধ আর সাধ‍্য, এই তো সামান‍্য ধ্বনি!
প্রতিদিন তোকে দেখে ভিজে গেছে আড়ালের চোখ
তোকে দেখে খুঁজে পাই হারানো বিষাদ
টুং টাং জলের আলাপ!



দ্বন্দ্ব

ঝড়ের হৃদয়ে কোনো পলায়ন নেই
মুখোমুখি, ঘরের সাথে জানালার
জানালার সাথে ড্রেসিংটেবিল
তোমার ঠোটের সাথে আয়নার
পাপশের সাথে পুরোনো ক‍্যালেন্ডার
সব নিয়ে ঠিকরে পড়া আলো!
আলোর সাথে গতির
গতির সাথে শূন্যতার
কী সাংঘাতিক চুরমার!

কোনো একটা দ্বন্দ্ব
আবার নিস্তরঙ্গ মিল
কোথাও গোপন বোঝাপড়া



 মুক্তি

(১)
কিছু মুখরতা সরিয়ে রেখেছি
কিছু মৌনতা সঙ্গমের ওপারে কোথাও
ফিরে পেলে আবছা চিঠির মতো
আমাকে ভরিয়ে দিয়ো ভোরের আঙ্গিকে
নির্জন খেয়াঘাটে অভিমানী জল


গানে রেখ, সঙ্গতে রেখ, আমার সকল অশ্রু
হিরন্ময় আলো, মূর্ছনা, ক্ষুদ্র দিশা
তুমি ফিরিয়ে দিয়ো না

(২)
তবু মনিকোঠায় সেইসব কষ্টগুলো...
আর বুঝি হৃদপিন্ডেের অলিন্দে জেগে নেই
যখন প্রবাহ দশদিক খুলে
পাপড়ি মেলেছে

শেষ বিন্দু ছুঁয়ে
আমার মুক্তি হল

অথচ মুক্তিও কখনো কখনো মানুষকে কাঁদায়



Comments

আরও পড়ুন

ছোট গল্পগুলি

উপসংহার থেকে ফিরছি —কবিতা সিরিজ

জুজুতন্ত্রের সমূহ শ্বাপদ এবং হুজ্জতি

বাসন্তী প্রেম/পিনাকী বসু

নগ্ন দিনলিপি— কবিতা সিরিজ

অবগুণ্ঠন সাহিত্য পত্র ও কিছু কথা— অমিতাভ দাস

সাহিত্য বাজারের হাতে বাংলা ভাষাটার অবস্থা বড়ই করুণ----দীপ শেখর চক্রবর্তী

একটি কবিতা সিরিজ

শুভ্র সরকার

সম্পর্কগাছ— কবিতা সিরিজ