কবিতা —অভিষেক ঘোষ
(১)
জঙ্গলে বেড়াতে গিয়েশিকড়ে শিকড়ে পা জড়িয়ে যাচ্ছে বোধহয়,
বুঝতে বুঝতে অনেক দেরি হয়ে যায় ।
সহসা কোনো কচি গাছের সবুজ পাতা দেখে
সাধ হয়, গাল টিপে দিই । জিজ্ঞেস করি,
"নাম কী তোমার ? কোন্ ক্লাসে পড়ো ?"
ভোর-বেলাকার ছত্রাকে মাঘের হিম,
ওর শীত শরীরে হাত দিলেই বোঝা যায়,
ও এতক্ষণ ঘুমিয়ে স্বপ্ন দেখছিল !
সেই স্বপ্নে প্রবেশের অধিকার নেই কারো ।
অপূর্ব মুখভঙ্গি করে আছে এক-একটা গাছ ।
আচ্ছা ! তোমরা দেখতে পাও না ?
আমি তো পাই, কেউ কেউ লতায়-পাতায়
তোমার আঙুল জড়িয়ে ধরতে চাইছে ।
কেউ-বা চাইছে শাখায় শাখায় আলিঙ্গন করতে ।
আমি এরই মধ্যে, সেদিনের প্রথম রোদ্দুরে,
আবিষ্কার করি এক অষ্টাদশী-কে ।
ভালোবাসা পায়নি বলে, যে গাছ হয়ে গেছে ।
(২)
সমুদ্রে বেড়াতে গিয়ে
পরিযায়ী পাখিদের দেশ,
চাঁদখানা মুখ দেখে জলে !
ভুলে যাওয়া অতলের রেশ,
উচ্ছ্বাসে ঢেউ কথা বলে ।
না বলাই ভালো কোনো কথা,
নোনা জলে প্রশ্নেরা ম্লান !
জাগে উত্তরে স্থায়ী নীরবতা,
শোনাবে না জ্যোৎস্নায় গান ?
পাশাপাশি বসে থাকা চলে,
বোল্ডারে হাত রেখে সুখ !
এলোকেশী নেমে পড়ে জলে,
ঝিনুকে গোছাবে সিন্দুক ।
ঝাউবনে সোল্লাসে ডাকে,
মাতোয়ারা শ্বাপদেরা জোরে !
খুঁজেপেতে ভিজে হাত রাখে,
রাত যবে মিশে যায় ভোরে ।
(৩)
পাহাড়ে বেড়াতে গেলে
পাহাড়ে বেড়াতে গেলে
অনিমিখ চেয়ে থাকা,
উদাসী বাঁকের আড়ালে
আলগোছে আলো মাখা !
রুকস্যাক বয়ে, কুয়াশায় চলা
জিলিপি পাকদন্ডী বেয়ে,
নামলে নীচে, মেটানো খিদে,
উষ্ণ চিকেন মোমো খেয়ে ।
দুঃসময়ের পলিরাশি ধুতে বরফ-স্নান,
বরফ-গলা ঝর্ণার জল, করেছিল আহ্বান !
পাইন গাছের কচি পাতায় আলোর কণা অলস হেসে,
ডাকছে আমায়, বলছে কীসব, গোপন কথা, ভালোবেসে।
খরগোশ-রোদ মেঘের ডানায় লুকিয়ে পড়ে খেলার ছলে,
কবে খুলবো এসব বর্ম-কবচ ? ছুঁড়বো হ্রদের অগাধ জলে ?
(৪)
সুযোগ পেলেই নাচি
মৃদুমন্দ হাওয়ায় দোলে বৃক্ষশাখাগুলি
এখন তবে মনের সকল দুয়ার দাও খুলি।
ভাঙাচোরা বা পুরাতন ভাবনা যত যার
ছুঁড়ে ফেলে দিতেই পারো নেই কোনো দরকার।
যেখানে যেটুক অনিচ্ছা বা দুর্ভাবনা জমে
মুক্ত হও মুক্ত হও নিজস্ব সংযমে।
হারিয়েছ যা মনের ভুলে এ-যাবৎকাল
ভাবছ বুঝি সেসব কথা, আকাশ পাতাল!
প্রকৃতি ভারি একলাটি, তাই মেজাজ নিয়ে খেলে
রঙিন মেঘের পালকিটি দেখো, চলছে হেলে-দুলে।
এসব দেখে মনে হয় না, উদার হয়ে বাঁচি?
দুঃখ থাকে থাকুক, তবু সুযোগ পেলেই নাচি!
Comments