সম্পর্কগাছ— কবিতা সিরিজ
(১)
ভালোবেসে বহুবার ঠকেছি। সম্পর্কের ভিতর যতই রোদ উঠুক কোথাও যেন মেঘ লুকিয়ে থাকে। কখনো কখনো সেই মেঘ সরে যায়। দূরে কোথাও বৃষ্টি হয়ে প্রাণে শীতল পরশ ছোঁয়ায়। কিছু মেঘ ঘাপটি মেরে অপেক্ষা করে। ক্ষুধার্ত নেকড়ের মতো। শরীর থেকে খুবলে খুবলে মাংস বার করে।
সকাল থেকে বৃষ্টি পড়ছে। অঝোরে বৃষ্টি। শরতের বৃষ্টি। এই মেঘের ভিতর কি লুকিয়ে আছে সম্পর্কের রোদ? বৃষ্টির ফোঁটা গায়ে লাগে। ভাঙা নৌকায় বসে থাকা কোনো ক্ষুধার্ত নেকড়ে কি এগিয়ে আসবে? জলের ভিতর যত ডুব দিই, ততই মাছ, ততই গভীরে... কাউকে বিশ্বাস করছে না... ভেসে থাকার আনন্দ মানুষ বোঝে যখন সে ডুবতে ভুলে যায়...
(২)
বিশ্রী হাওয়া বইছে। যেন বাঘের দাঁত। গায়ে এসে দাগ বসিয়ে দেবে। সারাজীবন কতরকম দাগ নিয়ে আমরা জীবনমঞ্চ সাজিয়ে তুলি, কিন্তু হাওয়ার দাগ! এই হাওয়ার ভিতর তুমি দাঁড়িয়েছিলে, বলেছিলে বসন্তবাতাস। শীত ফুরোবার আগেই শীত জাঁকিয়ে বসল। তুমিও তোমার অধিকারে শান দিয়ে হয়ে উঠলে ধারালো। এখন ভাবার, হাওয়ার ভিতর যে দাঁত তা কি কোনো চিরুণি কারখানায় গ্রহণযোগ্য হবে?
(৩)
সবাইকে খুশি করা তোমার একমাত্র কাজ। তুমি জানো না, কে কীভাবে খুশি হবে। জোকার সাজো, ভাঁড় হও কিংবা বহুরূপী ধারণ করো, সেটা মুখ্য বিষয় নয়। মুখ্য বিষয়— সবাইকে খুশি করা। প্রথমে নাচ শুরু করলে, এরপর গান, তারপর সবাইকে উপহার দিলে কিন্তু দেখা গেল কেউ না কেউ অখুশি। তুমি বুঝতে পারছ, ঠিক কী করা উচিত। এরপর তুমি ঘুমের ট্যাবলেট খেয়ে শুয়ে পড়লে। তুমি ঘুম থেকে উঠছ না। দীর্ঘক্ষণ উঠছ না... এতে সবাই বিরক্ত... যারা কিছুটা খুশি ছিল তারাও। শুধু সন্ধ্যার আকাশে ওঠা তারাগুলো জানত তোমার শরীর থেকে ঝরে গেছে নুন... তুমি ক্লান্ত...
![]() |
অলংকরণ —নম্রতা বালা |
(৪)
‘ভালোবাসি' কথাটি কেউ বললে প্রথমে তাকে শত্রু মনে হয়। এই যে তুমি ‘ভালোবাসি, ভালোবাসি' বলতে বলতে নিজেকে গণশত্রুতে পরিণত করেছ, তা কি তুমি জানো? অথচ, তোমাকে ভালোবেসে ভালোবাসার কথা না বলতে পেরে বুকে বসিয়ে নিয়েছি খাঁচা। বাঘের খাঁচা। এখানে বাঘ বসে বসে খুবলে খুবলে মাংস খায়। তুমি ‘ভালোবাসি, ভালোবাসি' বলতে বলতে হয়েছ গণশত্রু আর আমি ভালোবাসার কথা না বলতে হয়েছি বাঘের মিত্র।
(৫)
যতবার ধূপ জ্বালিয়েছ, মনে হয়েছে— মশার উপদ্রব বেড়েছে। অথচ, ধূপের সুগন্ধ নিয়ে উচ্ছ্বসিত হওয়ার কথা। খুব বেশি উচ্ছ্বসিত হতে পারিনি। ধূপছায়ার নীচে নিজের বসবাস জেনে আরও কয়েকটা জ্বালিয়ে দিয়েছি। একের পর এক ধূপ জ্বালিয়ে তুমি ভরিয়ে দিয়েছ সাদায়। যেন এক বরফের দেশ উপহার দিয়েছ। আর আমি ঠান্ডায় কাঁপছি।
(৬)
আনন্দ কখন চুপিচুপি এসে ফিরে যাবে, তুমি টের পাবে না। কিন্তু দুঃখ আসে বড়ো ট্রলিব্যাগ নিয়ে। কিছুদিন থাকার প্রস্তুতি নিয়ে। তোমার চুলে পাক ধরবে, চামড়া কুঁকড়ে যাবে, দেখবে দুঃখ থেকে গেছে সেই আগের মতো। 'আসি' বলে ট্রলি গুছিয়ে রাখবে কিন্তু ফিরে যাবে না। সে আর অতিথি থাকবে না, বাড়ির লোক হয়ে উঠবে...
![]() |
Visit our WhatsApp Store : click here |
Comments