কবিতা

 












শিক্ষার্থী


লাল সরানের ওইপারে বাদামি গাছের গুঁড়ি
রামকিঙ্করের গায়ের চামড়ার মতো প্রাচীন 
কোমল খসখসে

এই পারে সবুজ ঘাসের চাদরে শাদা ক্যানভাসে
প্যালেটে অনেক অনেক তোলপাড় তেল রং
দাক্ষিণাত‍্য ছেড়ে আসা দক্ষিণী কিশোরী
কলা ভবনের তুলির আদরে সাগরের প্রজ্ঞার 
মতো গাঢ় নীল রঙে অবিরাম ওই গাছটিকে আঁকে...


দুপুরের কৈশোরে
কী আঁকে একাকী ওই ইজেলের মেয়ে-
ভাস্কর্যের মতো অবিনশ্বর সেই গাছ কিঙ্কর?
নাকি মনের সরানে হেঁটে পৃথিবীর যত গূঢ় রং 
খোঁজা অভ্যেস করে পরবাসী ঘাসের ওপরে

উড়ে যায় কিশোরীর মন, উড়ে যায় প্যালেটের থেকে একে একে সব রঙ ক্যানভাসে কিঙ্করের পিঠের মতন গাছে দুপুরের রোদ্দুর এসে বসে....



ছাত্রীনিবাস

সরানের কোলে কাঁখে ছুটি হয়ে যাওয়া ছাত্রীনিবাস
এ ক'দিন গাছেদেরও ছুটি 
আবাসিকদের গায়ে পাতা ঝরানোর খুনসুটি নেই
ছুটি নেই বেয়াড়া সাইকেলের
তার পিঠে প্রথম সওয়ারী, আনাড়ি
বন্ধুরা গেছে ফিরে
ছুটিতে সে ফেরে নাই ঘরে
বাড়ি তার বহুক্রোশ সাগরের তীরে

সাগরের পাড় থেকে নোনা জল চোখে এসে লাগে
সন্ধে নামার আগে
তখন বিকেল একা, একা তার বান্ধব সাইকেল...

চুলের কোঁচড়ে তার, শুকতারা টগরের দোলাচল
বেলাগাম চুল থেকে
এই বুঝি পড়ে গেল মোরামে কুড়িয়ে পাওয়া
বিকেলের হৃদিতল

অনেক ঘামের মুক্তো দক্ষিণা দিলে
বন্য ঘোড়ার মতো বেসামাল সাইকেল হাতল
কিশোরীর বশ মানে
শিরিষের ধুপছায়া গোধূলির মেহগনি গানে

ওড়া শেষ আজকের মতো
পাখিরা বাসায় ফেরে
মেয়েটিও পাখি হয়ে ফিরে যায় ছাত্রীনিবাসের ডালে



বুদ্ধ

রাজবেশ খসে গেছে কবে
তবুও আজও নিশ্চল... রাজসিক... রাজসিক
ধ‍্যানস্থ শিরদাঁড়া বসে আছে... বল্মিক... বল্মিক...

বহুদিন আসেনি ভাস্কর
এসে বসেনি মোরাম আর সিমেন্টের ধ্যানে
কেটে গেছে অনেক অনেকগুলো নিরুদ্দিষ্ট বছর
কিঙ্কর আসবে
এখনও অনেক গড়া বাকি
নড়ে গেলে যদি ভুল হয়ে যায়
কাঙাল ঈশ্বরের বেপরোয়া পরিমিতি

বোধিসত্ত্ব আজও বসে থাকে একঠায়
ভুবনডাঙার সেই বুদ্ধের অপেক্ষায়...



রামকিঙ্কর

কোনদিন যদি নীল ভোর ভেঙে নেমে আসা 
বৃষ্টির নাম রাখি - আনা পাভলোভা
বিষণ্ন বিকেলের অপূর্ব বিমর্ষ শ্রাবণকে ডাকি-
ভ‍্যান গঘ বলে

তবু তারপর যদি ভালোবেসে গ্রীষ্মের ডাকনাম দিই,
ডাকি - রামকিঙ্কর
একটা বৃষ্টিবিন্দুও কোনদিন জানবে কি
কেউ খুব ভালোবেসে তাদের এমন নামে ডেকেছিল

কখনও কি বুঝবে বৈশাখ, সে কেমন 
অবাক ভাস্কর দহনের প্রখর পাথরে
ঘামের প্রশস্তি লেখে জীবিকার সম্ভারহীন বন্দরে

তৃষ্ণায় কন্ঠনালী দিবাস্বপ্নে পুণ্যতোয়া মরীচিকা দেখে
তবুও সে জীবনের মৃৎমূর্তি গড়ে চলে অবিরাম অবিচল
জীবনের নিত্য দোলাচল...

জ্যৈষ্ঠের রুক্ষতা ভালোবাসি, আবার আষাঢ়কেও 
আকুল বোধনে ডাকি...

সকলেরই রাত আছে
রাত্রির মোহিনীঅট্টম তারাদের ধানক্ষেতে
ফলক লাগিয়ে লিখি 'উদয়শঙ্কর সরণি'...

আমি শুধু সাদা আর কালো জানি
খরা আর বন্যা জানি
গ্রীষ্ম বর্ষা দৃশ্য আমার আমার কাছে চির একেশ্বর -

সব কেবলই রামকিঙ্কর


ধারা

রাত চিনে নিয়েছে একাকীত্বের নদী,
অন্ধকারের ঘোর
চিনেছে স্রোতের তোড়

যে জন গিয়েছে চলে, চলেই গেছে
পাড়ে ফেলে রেখে জন্মান্তর
রাস্তার টানে, গ্রাম্য রঙের গানে
পাথরের ঘুম কুঁদে স্বরলিপি বুঝি এইবার গড়বে ঈশ্বর...
তার নতুন স্বপ্ননদী কোপাইয়ের ধারে
রাত্রি নিশুতির আচ্ছন্ন প্রত্নচরে
একলা হাঁটছে বুঝি আকাশবাতাসচারী মগ্ন ঈশ্বর...

না শুকনো চোখের ছলছল ছলোছলো জলে
কে আজও রোজ সন্ধ্যাসকালে
কিঙ্করহীন শূন্য যুগিপাড়া প্রান্তরে
ইষ্টনামের পুণ্যতোয়ায় ভরায় চরাচর -
একা নদী গন্ধেশ্বরী... মানবী এক... অশীতিপর





Comments

আরও পড়ুন

অয়ন হালদার

কবিতা সিরিজ

বি শে ষ সা ক্ষা ত কা র : শ্রী সন্দীপ দত্ত

কবিতা

চন্দন রায়

কবিতা