কবিতা —ঋতুপর্ণা খাটুয়া
অলংকরণ-নম্রতা বালা |
(১)
সজনী
এখনো ফেরোনি! বিকেল তো হলো! সন্ধ্যা নামবে,
কতখানি ফুঁয়ে শঙ্খ বাজবে, ঘনাবে বয়স।
কীযে আর বলি, দরজার গ্রিলে আওয়াজ হলে
ঘন্টার মতো বাজে আনন্দ। এলে এক্ষুনি
জাপটিয়ে ধরি, কাঁধে মাথা রাখি, পথে ঘাটে কাজে
যে ক্লান্তি আসে, তা নেমে গেল কি?
এখন যতটা পারি তত বেশি
ভালোবেসে নিই। শুধু ভালোবাসি।
এখনো বোঝনি, এসব তখন বয়স বাড়লে
ঝুরোবালি হয়ে নেমে যাবে দেখো হাত ফাঁক গলে,
অভ্যাসে দিনে সূর্য ফুটবে, সব ডুবে যাবে
বিছানা হাতড়ে বালিশ তো নয়, আমার সজনী
তোমাকেই পাব, হাড়েহাড়ে জানি
ঋতুপর্ণা খাটুয়া
কতখানি ফুঁয়ে শঙ্খ বাজবে, ঘনাবে বয়স।
কীযে আর বলি, দরজার গ্রিলে আওয়াজ হলে
ঘন্টার মতো বাজে আনন্দ। এলে এক্ষুনি
জাপটিয়ে ধরি, কাঁধে মাথা রাখি, পথে ঘাটে কাজে
যে ক্লান্তি আসে, তা নেমে গেল কি?
এখন যতটা পারি তত বেশি
ভালোবেসে নিই। শুধু ভালোবাসি।
এখনো বোঝনি, এসব তখন বয়স বাড়লে
ঝুরোবালি হয়ে নেমে যাবে দেখো হাত ফাঁক গলে,
অভ্যাসে দিনে সূর্য ফুটবে, সব ডুবে যাবে
বিছানা হাতড়ে বালিশ তো নয়, আমার সজনী
তোমাকেই পাব, হাড়েহাড়ে জানি
(২)
তিস্তা তোর্সা এক্সপ্রেস
কতদিন পড়ে আছি প্রবাসে।
তিস্তা তোর্সা এক্সপ্রেস
কতদিন পড়ে আছি প্রবাসে।
ট্রেনের ঝাঁকুনিতে বেঁকে যায় পিঠের হাড়।
আধো আধো বোজা চোখে মখমলে
রেশমি কাপড়ের মতো স্বপ্ন দেখি, যা উড়ে যায়
চোখে লেগে। এই সিটের পরে শুয়ে আছে
আরও কোনও পরবাসী, ঘরের দিকে অথবা
বিপরীতে তার অভিমুখ। দীর্ঘ এই ক্লান্তির
পরে আমার মাথাটি অযথা উঁচু হয়ে আছে।
ট্রেনের চাকার বিশ্রী ও বিকটাকার শব্দের কাছে
তোমার রাগকে বড্ড কোমল মনে হয়। স্বপ্ন
এই এসেছে মাত্র। তুমিও এলে। লক্ষ্মীটি,
একটু স্থির হয়ে বসো, একটু পরই ভোর
হবে, তুমি চঞ্চলা হয়ে দৌড়াবে রান্নাঘরে।
(৩)
আরেকটু থাকি
মুচড়ে পাপড়ি খুলছে বোধহয়। কিংবা সব ঝরিয়ে
গাছ ন্যাড়া হচ্ছে। মৃত্যুভয় কেমন তা জানি না,
কিন্তু তোমাকে ছেড়ে আমাকেও একদিন যেতে
হবে, এমন ভাবলেও অন্ধকার আরও গভীর হয়!
ফুল মাটিতে পড়ার পরও যতক্ষণ রঙিন থাকে, ঠিক
তেমনি, আমি মরে গেলে মুখে রয়ে যাবে হাসি।
আরও কিছুক্ষণ, আরেকটু থেকে যাই
আগুনের সাজতে যতক্ষণ লাগে
(৪)
মেহগনি
আমাদের বাগানের পরে শুয়ে থাকে মৃত গাছ, তার
পায়ে হেসে ওঠে মাটি, ফুল। রাত শেষে অন্তিম সময়ে
জুটছে সকল স্বজন, এতদিন ঘর বেঁধে যারা ছিল
সেই কমলা পিঁপড়ে ও আত্মীয় পরিজন, এসেছে
ধূসর কাঠবেড়ালিও। মরিচা রঙের পাতা,
বুলবুলি দুটি, সকলে তারা গাইল—
ওকে যেওনা যেওনা নিয়ে
চড়কের মাঠে, সে শ্মশানে–
গলযোগে ঘুম ভেঙে উঠে
কেঁদেছিল শিশু।
মা আদরে ডেকেছিল ‘মণি—
কেঁদো না, কাকভোরে জেগে যাবে
পরিশ্রান্ত মেহগনি ’
আধো আধো বোজা চোখে মখমলে
রেশমি কাপড়ের মতো স্বপ্ন দেখি, যা উড়ে যায়
চোখে লেগে। এই সিটের পরে শুয়ে আছে
আরও কোনও পরবাসী, ঘরের দিকে অথবা
বিপরীতে তার অভিমুখ। দীর্ঘ এই ক্লান্তির
পরে আমার মাথাটি অযথা উঁচু হয়ে আছে।
ট্রেনের চাকার বিশ্রী ও বিকটাকার শব্দের কাছে
তোমার রাগকে বড্ড কোমল মনে হয়। স্বপ্ন
এই এসেছে মাত্র। তুমিও এলে। লক্ষ্মীটি,
একটু স্থির হয়ে বসো, একটু পরই ভোর
হবে, তুমি চঞ্চলা হয়ে দৌড়াবে রান্নাঘরে।
(৩)
আরেকটু থাকি
মুচড়ে পাপড়ি খুলছে বোধহয়। কিংবা সব ঝরিয়ে
গাছ ন্যাড়া হচ্ছে। মৃত্যুভয় কেমন তা জানি না,
কিন্তু তোমাকে ছেড়ে আমাকেও একদিন যেতে
হবে, এমন ভাবলেও অন্ধকার আরও গভীর হয়!
ফুল মাটিতে পড়ার পরও যতক্ষণ রঙিন থাকে, ঠিক
তেমনি, আমি মরে গেলে মুখে রয়ে যাবে হাসি।
আরও কিছুক্ষণ, আরেকটু থেকে যাই
আগুনের সাজতে যতক্ষণ লাগে
(৪)
মেহগনি
আমাদের বাগানের পরে শুয়ে থাকে মৃত গাছ, তার
পায়ে হেসে ওঠে মাটি, ফুল। রাত শেষে অন্তিম সময়ে
জুটছে সকল স্বজন, এতদিন ঘর বেঁধে যারা ছিল
সেই কমলা পিঁপড়ে ও আত্মীয় পরিজন, এসেছে
ধূসর কাঠবেড়ালিও। মরিচা রঙের পাতা,
বুলবুলি দুটি, সকলে তারা গাইল—
ওকে যেওনা যেওনা নিয়ে
চড়কের মাঠে, সে শ্মশানে–
গলযোগে ঘুম ভেঙে উঠে
কেঁদেছিল শিশু।
মা আদরে ডেকেছিল ‘মণি—
কেঁদো না, কাকভোরে জেগে যাবে
পরিশ্রান্ত মেহগনি ’
কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ২০১৭ সালে ‘বঙ্গভাষা ও সাহিত্য’ বিভাগে স্নাতকোত্তর পর্বে উত্তীর্ণ। বাড়ি : পূর্ব মেদিনীপুর। পেশা হিসেবে উল্লেখ্য কিছুই নেই। লেখা ছাড়াও ছবি আঁকতে, ছবি তুলতে ও ঘুরে বেড়াতে ভালো লাগে।
প্রকাশিত প্রথম কাব্যগ্রন্থ : এই ছায়াঘুমের পাশে ( জানুয়ারি ২০২৩ এ প্রকাশিত)
এই ছায়াঘুমের পাশে
বল্মীক প্রকাশন
মূল্য ১২৫/-
Comments